শেষ চিঠি: শুভদ্বীপ চন্দ

২৫ মার্চ,২০২০

এটা অফিসিয়াল। কাল থেকে মাঠে আর কেউ নেই। সবাই থাকবে ঘরের ভিতর। রাস্তায় থাকব আমরা আর ভাইরাস আক্রান্ত কিছু মানুষ।

প্রস্তুতি ভাল হল না। ইউরোপ বড্ড বড় ঝাঁকি খেয়েছে। মারাত্মক সংক্রামক ডিজিজটি প্রতিদিন বেড়েছে, মৃত্যু বেড়েছে, মৃত্যুর হার বেড়েছে। এখন অবশ্য এসব ভাবি না।

জানি না ফিরবো কিনা। আমার কলিগদের দেখে খারাপ লাগে। বেশিরভাগের বাচ্চা ছোট ছোট। কেউ কেউ প্র‍্যাগনেন্ট। লোকাল মেড কিছু প্রোটেকশন আমাদের দেয়া হবে শুনেছি। দর্জি এসে মাপ নিয়ে গেছে। এখনো হাতে পাই নি। এগুলো কতদূর সুরক্ষা দিবে জানি না। ডাক্তাররা খুব ব্যস্ত হয়। হয় পড়াশোনা, নয় হাসপাতাল। পরিবারকে সময় দিতে পারে না। সেটা তারা পুষিয়ে দেয় সন্তানদের বেশি বেশি ভালোবাসা দিয়ে। বাবা মা’র স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে। বাস্তবতা হচ্ছে উন্নত দেশের হিসেবেই ১০% আমরা আক্রান্ত হবো। চীনের তুলনায় ইতালি স্পেনে শতকরা মৃত্যু বেশি হয়েছে। আমাদের আরো বেশি হবে। অর্থাৎ কিছু লোক এখন তাদের পরিবারের সাথে শেষ দিন গুলো কাটাচ্ছে।

যদি সম্ভব হয় সব ডিউটি আমি একাই নিয়ে নিতাম! আমি স্কয়ার হসপিটালের সিসিইউ ট্রেইনড আপ। ক্রিটিকাল পেশেন্ট ক্রিটিক্যাল মুহূর্তে জীবন মৃত্যুর খেলা বহুবার দেখেছি। তার চেয়েও বড় কথা- আমি একা মানুষ। আমার জন্য কেউ অপেক্ষা করে নিই। খুব বেশি চোখের জল হয়তো পড়বে না। তাই চেষ্টা করবো- অন্যদের রেস্ট দিতে।

উপজেলায় ক্রিটিকাল কেয়ার সেট আপ নেই। থাকতে হবে মেডিসিন আউটডোর ধরে। ফ্লু-কর্নার ধরে। সেটা আরো ভয়ংকর। সর্দি কাশি জ্বর হাঁচি। যেভাবে বাড়ি ফেরার হিড়িক দেখছি- রোগী ঢাকায় কমবে, গ্রামে বাড়বে।

অগ্রীমই বলছি ফেসবুকে আসাটা কমিয়ে দিব। কনসেন্ট্রেশন একদিকে নেয়া উচিত। ডিউটি আওয়ার কেমন হবে বোঝা যাচ্ছে না। ওদের অভিজ্ঞতায় বলছি বানের জলের মতো হাসপাতালগুলো ভেসে যাবে। ও দু-একটা ফিক্সড হাসপাতালে কিছু হবে না। শুরুতেই ভরে যাবে। গরম, আঁটোসাটো কাপড়, দীর্ঘক্ষণ মাস্ক, নষ্ট ফ্যান, ফিউজ বালব, অদক্ষ সিস্টার্স স্টাফেদের গল্প হবে তখন। ও স্যুটগুলো পরলে প্রস্বাব পায়খানাও বন্ধ রাখতে হয়। সবকিছু দেখার মানসিক প্রস্তুতি রাখছি। সবচেয়ে বেশি প্রস্তুত হচ্ছি মৃত্যুর মিছিল দেখার জন্য।

তবে সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতি হবে যদি সিদ্ধান্ত নিতে হয়! “হু উইল বি সেভড? এন্ড হু ও’ন্ট?” আমরা ডাক্তার, কোনো বিচারক নই। রোগী কয়েক হাজারের কোটা পার করলেই হয়তো রেফারেলে বিধি নিষেধ চলে আসবে। কোথাও রোগী পাঠানোও সমস্যা। ট্রান্সপোর্ট নেই।

দোয়া করবেন যেন আমার সব আশঙ্কাই মিথ্যে হয়। এরকম যেন কিছুই না ঘটে। ধন্যবাদ থাকলো সবার প্রতি। করোনাভাইরাস নিয়ে অনেক লিখেছি। এখন জিরো আওয়ার। বাসায় কোয়ালিটি টাইম পার করুন সবাই। প্রিয়জনদের সাথে পৃথিবী শেয়ার করার মতো সুন্দর অনুভূতি আর কিছু নেই! আর,
আর আমাদের যদি সত্যিই কিছু হয়ে যায়, ছোটদের বলবেন আমাদের কথা!
বলবেন ‘আমরা চেষ্টা করেছিলাম…’।

Publisher

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অনুযায়ী কোভিড-১৯ রোগীর সংজ্ঞা

Wed Mar 25 , 2020
২৫ মার্চ ২০২০: কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশই সামান্য মাত্রায় রোগাক্রান্ত হয়ে নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে যান। তবে ১৪% রোগীর অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে এবং অক্সিজেন সাপোর্টসহ হাসপাতালে ভর্তি হতে পারে এবং ৫% রোগীর আইসিইউ সাপোর্ট প্রয়োজন হতে পারে। কোভিড-১৯ রোগী সংক্রান্ত সংজ্ঞা (Case Definition) দেয়া হল। সন্দেহভাজন রোগী […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo