মরিতে চাহিনা আমি সুন্দরভুবনে
Autosomal Dominant VS Autosomal Recessive
হলিউডের অস্কার জয়ী নায়িকা এঞ্জেলিনা জোলিকে কি পরিচয় করিয়ে দেবার প্রয়োজন আছে? সকল তরুন যুবার হার্ট থ্রব। ব্যক্তিগতভাবে আমিও তার অভিনয় প্রতিভার অন্ধ ভক্ত। এছাড়াও বহু মানবসেবামূলক কাজের সাথে তিনি সরাসরিভাবে জড়িত। অসংখ্য দাতব্য প্রতিষ্ঠানকে তিনি আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন। সুন্দরী এই নায়িকার ব্যক্তিগত একটি ঘটনা বিশ্বব্যপী আলোড়ন তুলেছিল। হয়তো কার ও এ কাহিনী অজানাও থাকতে পারে।
জোলির মা মাত্র ৫৬ বছর বয়সে ১০ বছর স্তন ক্যান্সারের সাথে যুদ্ধ করে মারা যান। স্তন ক্যন্সার হওয়ার পেছনে অনেকগুলো কারনের মাঝে বংশগত কারণটি অন্যতম। ৫-১০% ক্ষেত্রে বংশগত কারণে এ রোগটি হয়ে থাকে। ফলে জোলির ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার আশংকা আছে কি না দেখার জন্য তার রক্তে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী ত্রুটিযুক্ত জীন ( যেটা তার মায়ের রক্তে পাওয়া গিয়েছিল) উপস্থিতির পরীক্ষা করার Advice দেয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার রক্তে উক্ত ত্রুটিযুক্ত জীন শনাক্ত হয়। এই জীনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে মা বাবার কাছ থেকে প্রাপ্ত দুটি জীনের একটি ত্রুটিযুক্ত হলেই (autosomal dominant) স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে ভবিষ্যতে স্তন ক্যান্সার থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় অপারেশনের মাধ্যমে স্তনদ্বয় শরীর থেকে কেটে বাদ দেয়া (Mastectomy)। সাহসী এঞ্জেলিনা স্বেচ্ছায় Mastectomy করার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ তার বেঁচে থাকার অদম্য ইচ্ছা শুধু নিজের জন্য নয়, মানবকল্যাণের নিমিত্তে।
সিদ্ধান্তটি অবশ্যই ছিল
অত্যন্ত জটিল, সাহসী ও অনন্য।
এখন আসি থ্যালাসেমিয়া প্রসঙ্গে। এটিও একটি বংশগত রক্তরোগ। হিমোগ্লোবিন তৈরীর জন্য যে জীনদ্বয় দায়ী সেগুলো ত্রুটিযুক্ত হওয়ায় শরীরে একেবারেই হিমোগ্লোবিন তৈরী হয়না। অন্যের রক্তের উপর শতভাগ নির্ভর করে বেঁচে থাকতে হয়।
আপনি রক্ত পরীক্ষা করে যদি দেখেন, আপনার দুটি জীনের একটি ত্রুটিযুক্ত, একটি ভালো, তাহলে আপনি রোগী নন, ওই একটি ভালো জিন ই যথেষ্ট হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য। আপনি বাহক হিসেবে শুধু মাত্র ত্রুটিযুক্ত জীনটিকে বহন করছেন। মনে হয়তো প্রশ্ন জাগবে… ভবিষ্যতে কি রোগী হওয়ার আশংকা আছে? না নেই। একবার যে বাহক, সারা জীবনের জন্য সে বাহক। জোলির তো একটা জীন ই ত্রুটিযুক্ত ছিল, তাহলে তিনি কেন চরম সিদ্ধান্তটি নিলেন? এর কারণ হচ্ছে, বংশগত রোগ দুই ধরনের। এক ধরনে শুধুমাত্র একটি ত্রুটিযুক্ত জীনই যথেষ্ট নির্দিষ্ট রোগটি সৃষ্টির জন্য (Dominant) যেমন স্তন ক্যান্সার। আর আরেক ধরনে অবশ্যই এবং অবশ্যই দুইটি জীন ই ত্রুটিযুক্ত হতে হবে (Recessive), যেমন থ্যালাসেমিয়া। এক্ষেত্রে বাবা ও মায়ের কাছ থেকে একটি করে ত্রুটিযুক্ত জীন প্রাপ্ত হতে হবে।
তাহলে কোন রোগটি প্রতিরোধ করা সহজ? অবশ্যই থ্যালাসেমিয়া। কারন শুধুমাত্র বাহকের সাথে বাহকের বিয়ে বন্ধ করলেই পরবর্তী প্রজন্ম মরনঘাতি থ্যালাসেমিয়ার হাত থেকে রক্ষা পাবে।
আসুন বাহক বাহকের বিয়ে বন্ধ করি।
থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করি।
লেখক :
ডা. নুসরাত সুলতানা
সহকারী অধ্যাপক
ভাইরোলজি বিভাগ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ
পিএইচডি অধ্যয়নরত
ঢামেক কে ৫১
প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার :
নূর ই আফসানা
মুগদা মেডিকেল কলেজ