৩ এপ্রিল ২০২০:
ডা. শোভন হোড়
সহকারী পুলিশ কমিশনার
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ(ডিএমপি)
হাসপাতালে যাওয়া আসার সময় অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে অনেকেই পুলিশের বাধার মুখে পড়ছেন। পুলিশের একজন সদস্য হিসেবে প্রথমেই দুঃখ প্রকাশ করছি তার জন্য। কিছু কমিউনিকেশন গ্যাপের কারণে এই সমস্যাটা হচ্ছে। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে আশা করি। গুগল প্লে-স্টোর থেকে এই অ্যাপটি নামিয়ে রাখতে পারেন (লিংক নীচে দেয়া আছে)। এখানে পুলিশের প্রত্যেকটি ইউনিটের নম্বর আছে।
পুলিশের গঠনতন্ত্র সম্পর্কে সামান্য ধারণা থাকলে অ্যাপ ব্যবহার আপনার জন্য সহজ হবে। আপনি বাংলাদেশের যেখানেই থাকেন না কেন, আপনি হয় রেঞ্জ পুলিশের আওতাধীন অথবা মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন। তবে, নদীপথে থাকলে আপনি নৌ-পুলিশের , হাইওয়েতে থাকলে হাইওয়ে পুলিশের, ট্যুরিস্ট এলাকায় থাকলে (কক্সবাজার/সুন্দরবন/সিলেট ইত্যাদি) ট্যুরিস্ট পুলিশের সহায়তাও নিতে পারেন। আবার, RAB ও পুলিশেরই একটা ইউনিট। অনেকে এটা নিয়ে দ্বিধায় থাকেন। এখানে অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা ডেপুটেশনে আসেন বলে এই কনফিউশন তৈরী হয়। র্যাবের নাম্বারও এই অ্যাপে আছে। র্যাবের চেকপোস্টে কোন সমস্যায় পড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার র্যাবের স্কোয়াড কমান্ডার কিংবা অ্যাডজুডেন্টকে ফোন দিতে পারেন। অন্যান্য ইউনিট বিশেষায়িত ইউনিট (CID, PBI, Police HQ, Central Hospital etc) যেগুলো আছে, তারা সরাসরি এসব ফিল্ডের চেকপোস্ট ডিল করে না।
বিভাগীয় শহর এবং গাজীপুর সদর এলাকা মেট্রোপলিটন এর অধীন। এর বাইরে সকল জেলা সদর এবং উপজেলা এলাকা রেঞ্জ পুলিশ (সকল প্রশাসনিক বিভাগ গুলোই পুলিশ-রেঞ্জ যার প্রধান একজন ডিআইজি) এর অধীনে।
অ্যাপ থেকে প্রথমেই আপনার থানা এলাকা খুঁজে বের করুন। সেই থানার ওসির নম্বর, এবং আপনার থানা যে জোন/সার্কেলের অধীন সেই সার্কেল/জোনের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী/অতিঃ পুলিশ সুপারের নম্বরটি সেইভ করে রাখুন। পারলে পুলিশ সুপারের নম্বরও রাখুন।
তবে একটা অনুরোধ, রাস্তায় যে ছেলেটা দাঁড়িয়ে থাকে পুলিশের পোশাক পড়ে সে হয়তো আপনার মত উচ্চ শিক্ষিত না, কিন্তু তার পোশাকটার ওজন নেহায়েত কমও না। এগুলো মাথায় রাখুন। আপনাকে থামতে বললে অবশ্যই থামুন। প্রথমেই পরিচয় দিন। রিক্সা/গাড়ি থেকে নামতে বললে নামুন। অনেকেই মিথ্যা পরিচয়/ভুয়া আইডিকার্ড দেখায় (বাঙ্গালির চরিত্র আপনাদের চেয়ে ভালো কে জানে!)। এজন্য আপনি পরিচয় দিলে প্রথমবারে সে বিশ্বাস নাও করতে পারে। কার্ডের মেইন কপি সাথে রাখুন অবশ্যই। এই কটা দিন অন্তত ফরমাল গেট আপে থাকুন। বিশ্বাস করুন, ইট হেল্পস।
এর বাইরেও কিছু অবিবেচক তো সব জায়গায়তেই থাকে। বুঝিয়ে বলার পরেও অহেতুক হয়রানির মুখে পড়লে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার ওসি/সার্কেলের এএসপি এবং মেট্রোপলিটন এলাকায় ওসি/জোনাল-এসি (সহকারি পুলিশ কমিশনার) কিংবা আরো উর্ধ্বতন কাউকে আপনি ফোন দিতে পারেন। অনেকেই পুরোনো তিক্ত অভিজ্ঞতার কারনে থানায়/ওসিকে ফোন দিতে চান না। সেক্ষেত্রে জেলায় সার্কেল এএসপি/এডিশনাল এসপি এবং মেট্রো এলাকায় সংশ্লিষ্ট জোনাল-এসি/এডিসি দের ফোন করতে পারেন। কারো কাছে সার্ভিস/হেল্প না পেলে তার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ফোন দিবেন। নো প্রবলেম। আপনি চাইলে আইজিপি কেও ফোন করতে পারেন। নম্বরগুলো পাবলিক করা।
আপনার যেমন রোগী দেখাটাই ডিউটি, আপনাকে থামিয়ে জেরা করাটাও রাস্তার পুলিশের ডিউটি। ডিউটি করতে যেয়ে আপনার মেজাজ যেমন সবসময় ঠিক থাকে না, রাস্তায়ও ঠিক এই ঘটনা ঘটে। “দেশে আমিই শুধু কষ্ট করি” এই মনোভাব পোষণ করবেন না। বিশ্বাস করেন, আরও অনেকেই কষ্ট করছে, কখনও কখনও আপনার চেয়ে অনেক বেশিই করছে। প্রত্যেকটা পুলিশের ডিউটি আওয়ার দশ থেকে বারো ঘন্টা কিংবা তারও বেশি। দশ-বারো ঘন্টা রাস্তায় দাড়িয়ে থাকাটা প্রচন্ড কঠিন একটা কাজ। নিজে না দাড়ালে বুঝবেন না। রাস্তায় হাজারটা মানুষকে থামিয়ে জেরা করা এমনিতেই একটা বাজে কাজ এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটা ঝুকিপূর্ণ কাজও বটে। সহানুভূতিশীল হোন, তার কষ্টটাকে সম্মান দিলে সম্মান পাবেন বলে আশা করি। নিরাপদ থাকুন এবং রাখুন।
পুলিশ ফোনবুক এপটি ডাউনলোড করার লিংক
https://play.google.com/store/apps/details?id=ca.police.bd