বর্তমান বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশেও এই সময়টায় প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে মানুষ হিটস্ট্রোকসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছে। হিটস্ট্রোক একটি মারাত্মক মেডিকেল ইমার্জেন্সি, যা দ্রুত চিকিৎসা না পেলে মৃত্যুও ঘটাতে পারে। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে নিজেকে এবং প্রিয়জনদের রক্ষায় প্রয়োজন সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।
হিটস্ট্রোক তখনই হয় যখন শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি হয়ে যায় এবং শরীর স্বাভাবিকভাবে ঘাম দিয়ে নিজেকে ঠাণ্ডা করতে ব্যর্থ হয়। এতে করে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
হিটস্ট্রোকের লক্ষণসমূহ:
অতিরিক্ত শরীর গরম হয়ে যাওয়া
ঘাম না হওয়া (Dry skin)
দ্রুত ও দুর্বল نبض (Pulse)
বমি ভাব ও মাথা ঘোরা
বিভ্রান্তি, খিঁচুনি বা অচেতন হয়ে যাওয়া
হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার করণীয়:
১. তাপপ্রবাহে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন
দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূর্যের তেজ সবচেয়ে বেশি থাকে। এই সময় বাইরে না যাওয়ার চেষ্টা করুন।
২. প্রচুর পানি পান করুন
গরমের সময় শরীর থেকে অনেক পানি ঘাম হয়ে বেরিয়ে যায়। তাই দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার পানি পান করা উচিত। স্যালাইন বা লেবু পানি দেহে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৩. সঠিক পোশাক পরুন
হালকা, ঢিলেঢালা এবং হালকা রঙের পোশাক গরম কম অনুভব করতে সাহায্য করে। সূর্যের আলো থেকে মাথা বাঁচাতে টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন।
৪. গরমে কাজ করার সময় বিরতি নিন
যারা বাইরে কাজ করেন—যেমন নির্মাণশ্রমিক, কৃষক বা রিকশাচালক—তাদের প্রতি ঘন্টায় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। সম্ভব হলে ছায়ায় বসুন এবং পানি পান করুন।
৫. শরীর ঠাণ্ডা রাখুন
ঘরে ফিরে গা ধুয়ে বা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কাপড় ভিজিয়ে শরীরে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত কমে আসে।
৬. বয়স্ক ও শিশুর প্রতি যত্নশীল হোন
এই দুই বয়সের মানুষ সহজেই হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই তাদের পর্যাপ্ত পানি ও আরামদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করুন।
৭. হিটস্ট্রোকের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত ব্যবস্থা নিন
অসুস্থ ব্যক্তিকে ঠাণ্ডা জায়গায় সরিয়ে আনুন, কাপড় খুলে দিন, শরীর ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করুন এবং দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।
হিটস্ট্রোক প্রতিরোধযোগ্য, যদি আমরা কিছু সাধারণ নিয়ম মেনে চলি। সচেতনতা ও সময়োচিত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা নিজেদের এবং আমাদের প্রিয়জনদের এই প্রাণঘাতী অবস্থা থেকে রক্ষা করতে পারি।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন