২০২০: একটা যুদ্ধের গল্প

১৮ই এপ্রিল, ২০২০

লিখেছেন- ডা. রাজীব মজুমদার

ভাগ্যিস ২০২০ সালে দেশে গোলাবারুদের যুদ্ধ লাগে নাই। হলে কি এক অদ্ভুত অবস্থা হয়ে যেত!

মার্চ মাস..
শত্রুসেনারা ক্র‍্যাকডাউন করবে এ খবর আগে থেকে দিয়ে গেল বন্ধুরাষ্ট্রের গোয়েন্দাসংস্থা। আমাদের কমান্ডার বলল,”আসুক ওরা, আমরা প্রস্তুত! পর্যাপ্ত লোকবল ও লজিস্টিক সাপ্লাই সাথে আছে।”
শত্রুসেনারা হামলার রেকি শুরু করলে, উনি বললেন, “গোলাবারুদ, ঢাল-তলোয়ার তেমন দরকার নাই এই মুহূর্তে।”

যুদ্ধ শুরু হল।
সবকিছু লকডাউন।
মানুষকে ঘরে থাকতে বলা হলেও কি এক অজ্ঞাত কারণে সবাই খালি বাজারে যাচ্ছে।
আর শত্রুসেনারা তাদের ট্যাগ করে দিচ্ছে, “এইবার এই বলদের বাড়ি যাঊংগা।”
যুদ্ধ তেমন জমছে না। যোদ্ধারা সংগঠিত না, তাদের ট্রেনিং নাই, আর্মস নাই। তাদের সবাইকে কমান্ডার দল বেঁধে একবার উত্তরে যেতে বলছে, একবার দক্ষিণে যেতে বলছে (না রে ভাই, সেক্টর-টেক্টর ভাগ হয় নাই)।

অনেক যোদ্ধা জখম হল, যারা সম্মুখ যুদ্ধ করে আসছে তারা বলল, “আমাদের ট্রেনিং আর আর্মস দেন। আমরা যুদ্ধ করব, বীরের মত মরব”। কমান্ডার দুলে দুলে বললেন, “পর্যাপ্ত পিস্তল পাচ্ছেন। পিপিপি। এগিয়ে যান।”

আমাদের বুদ্ধিজীবীরা মুখর হয়ে উঠলেন গণমাধ্যমে। একেক গুনীর একেক মন্ত্র। একজন জোর গলায় বল্লেন, “মাঠে নামার কোন দরকার নাই। আমি জানালা দিয়ে গুলি করে সব শত্রু মেরে ফেলব। এর জন্য কোন বিশেষ সরঞ্জাম দরকার নাই”।

ঘরে ঘাপটি মেরে থাকা আমজনতাও আওয়াজ দিল,”শত্রু মারতে আবার ঢাল-তলোয়ার কেন? দেশপ্রেম ই যথেষ্ট”। এত প্রেম বুকে নিয়ে তারা কেন এই দুঃসময়ে বাজারে যাচ্ছেন? হুদাই শত্রুসেনা দেখতে বের হচ্ছেন- এর কোন সদুত্তর কেউ দিল না।

দমে যাওয়া যোদ্ধারা আবার গেল ফ্রন্টে।
আ সর্বনাশ!
বন্দুক কোথায়? এত এয়ারগান!
গ্রেনেডের বদলে পটকা, গুলির বাক্স খুলে দেখে কাঁঠালের বিচি। যোদ্ধারা পিছু হঠল।
বাসাবাড়িতে আওয়াজ উঠল,”দুনিয়ার সবখানে দেখলাম ফাইটাররা সামনে আগায়, আর আমাদেরগুলা দেখি পালায়। শেম!শেম!!”

কমান্ডার কমান্ড দিলেন, “কেউ পিছু হঠলে কোর্টমার্শাল! একদম টলারেট করব না।”

টকশোগুলিতে হোস্টেস টকমিষ্টি হেসে বললেন, “সারাবছর দেশের কত মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা ঝাড়ু দেয়, এ আর এমনকি!”

শত্রুসেনার উপদ্রব বেড়ে গেছে, যার তার বাড়িতে ঢুকে পড়ছে। ছেলে-মেয়ে-কচি-বুড়ো কাউকে ছাড়ছে না। যোদ্ধারা মারা যাচ্ছে। কাঁঠালের বিচি বডি-আর্মার ভেদ করতে পারছে না। থাকা-খাওয়ারও খুব অভাব। ফ্রন্টে কোথাও কোন খাবার নাই। বারবার বলা সত্ত্বেও উপযুক্ত অস্ত্র দেওয়া হচ্ছে না।
কোথায় যেন গ্যাপ!

কমান্ডার জানেনই না মোট কতজন যোদ্ধা মরল, কয়জন জখম হল। একবার ত হিসেব করে দেখেন জখমী যোদ্ধার থেকে মৃত যোদ্ধার সংখ্যা বেশি(সেটা আবার থুক্কু বলে সাথে সাথে কারেকশান করে নিলেন)।
পাব্লিকের আচরণ আরো অদ্ভূত!
একেকজন বলে, “শত্রুসেনারা যেন খালি সরকারী লোক আর ফাইটারদের ধরে”।

এরপর আবার নতুন থিওরি আসলো, দম বন্ধ করে শত্রুর কাছে যেতে হবে। তাহলে নিঃশব্দে শত্রুসেনাদের মারা যাবে। বলা বাহুল্য, এই থিওরি যোদ্ধারা ভালভাবে নিল না। কথাটাতেই কেমন বুজরুকি গন্ধ!

দিন যাচ্ছে দিনের মত। এখন আর এটাকে যুদ্ধ বলা যায় না, একপেশে গণহত্যা বললে কিছুটা মানায়। শত্রুসেনারা সকাল বিকাল সরকারি-বেসরকারি- কমান্ডার-আমজনতা দিয়ে নাস্তা করছে। যোদ্ধারা অধিকাংশ মারা গেছেন, রক্ষা করার কেউ নাই।
বাতাসে লাশের গন্ধ।
কমান্ডারকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
বুদ্ধিজীবিরা গায়েব।
টকশো বন্ধ।
শেষ আমজনতা বধ্যভূমিতে দাঁড়িয়ে বলল,
“আজও তিনটা মারা গেছে। আহা!
ফাইটারগুলা মরলে কি যে শান্তি লাগে!”

গল্প তো গল্পই।
গল্প কি কখনো সত্যি হয়,বলেন?

(ঈষৎ পরিবর্তিত)

Publisher

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কোভিড-১৯: আরো ৯ জনের মৃত্যু, নতুন শনাক্ত ৩০৬ জন

Sat Apr 18 , 2020
১৮ এপ্রিল ২০২০: গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এ নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন ৩০৬ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন আরো ৯ জন ও আরোগ্য লাভ করেছেন ৮ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্ত রোগী ২১৪৪ জন, মোট মৃতের সংখ্যা ৮৪ জন এবং সুস্থ হয়েছেন মোট ৬৬ জন। দুপুর ০২.৩০ ঘটিকায় প্রেস ব্রিফিংয়ে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo