আগামী ৮ আগস্ট,২০১৮ থেকে শুরু হতে যাচ্ছে ৩৮ তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা।তুমুল প্রতিযোগিতামূলক এ পরীক্ষায় অংশ নেবে ১৬২৮৬ জন।রিটেন ও ভাইভা পেরিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসবেন মাত্র ২০৪২ জন।নিঃসন্দেহে প্রতিযোগিতায় ভালো ফলাফলের জন্য পড়াশুনার কোন বিকল্প নেই।তবে অনেকেই কঠোর পরিশ্রম এবং ভালো প্রস্তুতি নেয়ার পর ও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য অর্জন করতে পারেননা।আমার ধারণা এর মূলে রয়েছে কৌশলগত ভুল।পরীক্ষাগুলো যেহেতু পরপর হয় আগে থেকে সেই গোল্ডেন ৫ দিনের প্ল্যান করে ফেলা উচিত বলে আমি মনে করি।আমি করেছিলাম এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে যা আশা করেছিলাম তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করেছিলাম।
প্রথমেই বলে নেই আপনার কি মনে হয় কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ?রিটেন নাকি ভাইভা।আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি ভাইভার চেয়ে রিটেন বেশী গুরুত্বপূর্ণ ।ভাইভার কোনকিছুই আপনার হাতে নেই।হাজারটা ইনফ্লুয়েন্সিং ফ্যাক্টর।তার উপর অনেক কিছু জানা সত্ত্বেও আপনি সেই ১৫ মিনিট আপনার সেরা পারফরমেন্সটা দিতে পারবেন কিনা তার নিশ্চয়তা একদমই নেই।তাহলে?যা করার রিটেনেই করতে হবে।রিটেনে যে এগিয়ে থাকবে রেস এ ও সে এগিয়ে থাকবে।আর রিটেনে ১০০ নম্বর পিছিয়ে ভাইভাতে ১৬০/১৭০ পান তবুও আপনি ক্যাডার হতে পারবেন কিনা আমার সন্দেহ আছে।
কোন সাবজেক্ট কিভাবে পড়বেন কোথা থেকে পড়বেন সেদিকে আমি যাচ্ছিনা কারণ সময় আসলেই নেই।নিজের অভিজ্ঞতা থেকে পরীক্ষার হল রিলেটেড কিছু কথা আমি ফোকাস করতে চাই যা আমরা সবাই জানি কিন্তু গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারিনা বিধায় অবহেলা করি।
১/অবশ্যই পরীক্ষার দিন সকালে নাস্তা করে যাবেন।যেহেতু আমি ডাক্তার জেনেই বলছি ব্রেইন পর্যাপ্ত গ্লুকোজ না পেলে আপনার খাতায় ও পর্যাপ্ত লেখা আসবেনা।হোস্টেলে থাকলে রুমে খাবার আনার ব্যবস্থা করুন যাতে ক্যান্টিনে লাইনে দাড়াতে না হয়।আর যদি বাসায় থাকেন বাবা মায়ের মুখ দেখে হলে যেতে পারেন আপনি বিরাট ভাগ্যবান।আমি এই ভাগ্যবানদের দলে ছিলামনা।সম্ভব হলে ট্রান্সপোর্ট ও দেখে রাখুন।চাপমুক্ত থাকবেন।
২/আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুম আবশ্যক ।দিনে ৪ ঘন্টা ক্ষেত্রবিশেষে ৬ ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে আপনি যদি না ঘুমান পরেরদিন আপনার ব্রেইনের সার্কিট এমন জ্যাম হবে যা পরীক্ষা শেষ হওয়ার ঘন্টা পড়ার আগে খুলবেনা।৫ দিনে ২১ ঘন্টা আপনি খাতায় লিখবেন।পরীক্ষা শুরুর আগের এবং শেষ হওয়ার পরের সময় সহ ২৬ ঘন্টা পরীক্ষার হলে।সোজা কথা না।যারা প্রথমবার পরীক্ষা দিবে তাদের জন্য আরো বেশী কঠিন।একটা পরীক্ষা খারাপ হলে না চাইলেও সেটার প্রভাব পরবর্তী পরীক্ষাগুলোতেও পড়ে এবং কনফিডেন্স লেভেল জিরোতে চলে আসে।প্লিজ এই ৫টা দিন রাত জেগে রিভিসন দিতে যাবেননা।যা পড়বেন আগেই পড়বেন,পরীক্ষা টা হয় রেসিডুয়াল নলেজ আর ওভারঅল কনসেপ্ট দিয়ে।টেনশন,স্ট্রেস আর একদিনেই ৫/৬ ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে কি অবস্থা হয় নিজে সেই অবস্থার মধ্য দিয়ে না গেলে বোঝা সম্ভব না।তাও সেটা যদি হয় বিসিএস পরীক্ষা ।
৩/আপনি সকালে বের হবেন।ফিরতে বিকাল/সন্ধ্যা হবে।আবার ১০-১১ টায় শুয়ে পড়তে হবে।তাহলে এই অল্প সময়ে আপনি কি পড়বেন?
*ইংরেজি পড়বেন Essay এর পয়েন্টগুলো বা হেডিংগুলোর যেটার উপর আপনি প্যারা করে লিখবেন।আশা করছি নোট করেছেন বা কালেক্ট করেছেন।পরীক্ষার খাতায় লেখার essay লেখার আগে পেন্সিল দিয়ে ভেতরের পাতায় হেডিংগুলো লিখে নিবেন।তাতে কিছু বাদ পড়ার বা আগের পয়েন্ট পিছনে ,পরের পয়েন্ট আগে এই ঝামেলাটা হবেনা।যখন আপনি উপসংহারে থাকবেন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মনে পড়লে লেখার সুযোগতো থাকবেনা।তথ্যবহুল essay লিখবেন।জানা থাকলে ডাটা দিবেন। পেন্সিলে করা নোট মুছে আসতে ভুলে যাবেননা।আর কিছু পড়ার আছে বলে আমার মনে হয়না।অন্তত অনুবাদ,ভোকাবুলারি পড়তে যাবেননা।লেটার টু এডিটর প্যাটার্ন দেখতে পারেন।
*বাংলাদেশ বিষয়াবলির জন্য সংবিধান আর মুক্তিযুদ্ধ পড়বেন যতটুকু সম্ভব।হতাশ হওয়ার কিছু নেই আপনার যে অবস্থা বাকিদেরও তাই।আগে থেকে নোট করা ডাটা,কোটেশন,গ্রাফ,চার্ট পড়বেন।
*আন্তর্জাতিক-আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থা,চুক্তি,নোট করে রাখা ডাটা,কোটেশন,গ্রাফ পড়বেন।যেহেতু একই দিনে আরো একটি পরীক্ষা থাকবে সময় একদমই পাবেনা।কিছু ছোট প্রশ্ন দেখতে পারেন।
*সাধারণ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি-যে অংশটুকু জটিল মনে হয় সেটা দেখুন।আমি কিছুই দেখিনি,আগেরদিন ৬ ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে খুব টায়ার্ড ছিলাম।
*বাংলা-সাহিত্য যতটুকু দেখা যায়,পত্রলিখনের নিয়ম,ব্যাকরণের যে অংশটুকু আপনার একদমই মনে থাকেনা সেটুকু।
*গাণিতিক যুক্তি-সব সূত্র ।সম্ভব হলে কিছু জ্যামিতি।যেহেতু আপনারা একটা শুক্রবার পাচ্ছেন কিছু সময় পাবেন আমার ধারণা।
*আবারো বলছি আগের রাতে কি পড়বেন একান্তই নির্ভর করে আপনার প্রিপারেশনের উপর।যেটা আপনি মনে করেন আগের রাতে না দেখলে একদম কিছুই লিখতে পারবেননা সেটা দেখুন।
৪/এই পোস্টের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট এটা।৫ দিনের packed schedule থেকে ১২ ঘন্টা পড়ার জন্য সময় বের করার উপায় একটা আছে।পরীক্ষার ৫ দিনের জন্য কাছের আত্মীয় ,দূরের আত্মীয় বা বন্ধুর বাসা আপনার যে সেন্টারে সিট পড়েছে তার আশেপাশে আছে কিনা খুজুন।বলুন আপনি ৫টা দিন সকাল ৭টা থেকে ৯.৩০ পর্যন্ত বসে পড়তে চান।আমার বিশ্বাস বিসিএস পরীক্ষা দিচ্ছেন জানলে কেউ না করবেনা।তবে দূরত্ব যেন সেন্টার থেকে ৫/১০ মিনিট এর হয়।৬টায় বের হবেন।জ্যাম পাবেননা,৭টায় পৌছাবেন,৯.৩০ পর্যন্ত পড়বেন। আত্মীয় আন্তরিক হলে এককাপ চা খেয়ে আপনি ফ্রেশ।প্রাকৃতিক কাজকর্ম এখানেই সেরে যাবেন।হাসছেন?হাসবেন না।পরীক্ষার হলে যেয়ে দুর্গন্ধ টলারেট করার চেয়ে উত্তম।হলে এসে দেখবেন আপনার সাথের যোদ্ধারা হলের সামনে পেপারে বসে ঘেমে নেয়ে ওর তার পড়াশুনা ও প্রিপারেশনের কথা শুনে কনফিডেন্স লেভেল জিরোতে নামিয়ে হলে ঢুকার জন্য অপেক্ষা করছে।বিধ্বস্ত যোদ্ধারা।ওনারা যখন ওয়াশরুমে লাইন ধরবেন আপনি তখন সিটে বসে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।পরীক্ষার সময় থেকে কেউ ১০ মিনিট দিতে চায়না,উচিত ও না। Literally এ ছাড়া পরীক্ষার দিন সকালে পড়ার আর কোন উপায় নেই।বই নিয়ে হলের সামনে বসে থাকা যায় পড়া যায়না।যার প্রিপারেশন আগে থেকে ভালো প্রতিদিনের এই ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট তাকে অন্যদের থেকে অনেক এগিয়ে রাখবে।এটা আমার চ্যালেঞ্জ।যেমন ধরুন বাংলা পরীক্ষার আগের রাতে আপনি সাহিত্য পড়বেন,সকালে ব্যাকরণ পড়বেন।রাতে দুটোই পড়ার সময় পাবেননা ।
৫/খাতা পরিষ্কার রাখুন,দয়া করে পেন্সিল দিয়ে মার্জিন টানুন(কলম দিয়ে মার্জিন টেনে কালি ছড়িয়ে খাতা নোংরা করবেননা।অনেকেই এ কাজ করেন হলে দেখেছি)!কালো ও নীল কালির কলম দিয়ে লিখুন।আমি পরামর্শ দিবো হাইলাইটার ব্যবহার করবেননা। অতিরিক্ত শিট নিলে খেয়াল করে বৃত্ত পূরণ করুন শুরুতেই।শিটে পেন্সিল দিয়ে নাম্বার দিন খাতা গোছাতে সুবিধা হবে।পরীক্ষার শেষের দিকে খাতা গোছানোর সময় মাথা কারোর ঠিক থাকেনা।রেজি নম্বর সাবধানে পূরণ করুন(ভুল করে পুরো ৩ ঘন্টা কান্না করতে দেখেছি একজনকে)।রুমে ঢুকেই ঘড়ি চলছে কিনা খেয়াল করুন।
৬/গড়পড়তা না লিখে তথ্যবহুল লেখা লিখুন।২/৪ লাইন পড়েই পরীক্ষক একটা প্রশ্নের মান বুঝতে পারবেন,২/৪ টা প্রশ্ন পড়েই খাতার মান সম্পর্কে ধারণা করতে পারেন এটুকু নিশ্চিত থাকুন।উত্তরগুলো সুন্দর করে প্যারা করে লিখবেন।বানান ভুল করা যাবেনা।সবার লেখা সুন্দর হবে এমন না তবে পরিষ্কার যেনো হয়।পড়তে অসুবিধা হলে পরীক্ষক বিরক্ত হন। আমি প্রশ্নের উত্তর সিরিয়ালি লিখি ,খুব দরকার না হলে ৮ নং এর পর ২নং লিখিনা।বারবার প্রশ্ন দেখতে হলে পরীক্ষক বিরক্ত হবেন।সেটা আমি চাইনা।ছোট প্রশ্ন দিয়ে লেখা শুরু করবেন।আগের রাতেই সময় ভাগ করে নিবেন পার্ট বাই পার্ট।সময়ের মধ্যে লেখা শেষ করবেন কারণ একটা পার্ট বেশী লিখবেন আরেকটা একদমই খারাপ লিখবেন তাতে ভালো নাম্বার আসবেনা।
৭/যদি আপনি ডাটা কোটেশন(রেফারেন্স সহ) আলাদা করে নোট না করে থাকেন তবে ফাইনাল রিভিসন দিচ্ছেন এখন আলাদা করুন।আর যদি না পারেন ফোনে ছবি তুলে রাখুন।আলাদা করে রাখলে দেখতে সুবিধা হয় সবচেয়ে বড় কথা মনে থাকে বেশী।লিখবে তো সবাই।এই একটা জিনিস আপনার খাতাকে বাকি সব খাতা থেকে আলাদা করবে।আপনি যত ডাটা,চার্ট,কোটেশন,গ্রাফ জানেন চেষ্টা করবেন যেখানেই সুযোগ পাবেন কাজে লাগাতে।তবে প্রাসঙ্গিকভাবে টানবেন।রেফারেন্স সহ।
৮/আত্মবিশ্বাস স্ট্রেসফুল পরীক্ষায় সবচেয়ে জরুরি ।আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয় এরকম কিছু এই কিছুদিন করা যাবেনা।নো ফেসবুকিং শুধু মাত্র আগে থেকে কোন বিসিএস পেজ ফলো করেন সেটা দেখুন,কে কি পড়লো কততম রিভিসন চলছে একদম শোনার দরকার নেই।
৯/সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করুন।বাবা মার সাথে কথা বলুন।সাহস পাবেন।মেধাবীরা সবসময় সফল হয় কিনা জানিনা তবে পরিশ্রমী ব্যাক্তিরা সফল অবশ্যই হয়।বিসিএস পড়তে গিয়ে একটা সময় সবারই মনে হয় আমাকে দিয়ে হবেনা।কিন্তু বাস্তবিক অর্থে এভাবেই সবাই পাস করে।আপনিও করবেন।শুধু ধৈর্য ধরে লেগে থাকতে হবে।
আমার খুব প্রিয় একটা লাইন আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই।
“Difficulties in your life do not come to destroy you,but to help you realise your hidden potential and power.Let difficulties know that you too are difficult “-Dr. A.P.J. Abdul Kalam
শেষ করবো।সবার জন্য শুভকামনা।
ডা.সুবর্ণা শামীম
৩৬ তম বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম।
Thu Jul 12 , 2018
প্রতি বছর অনেক ডায়াবেটিস রোগীরা হজের এর সময় ঠিক বুঝতে পারে না কিভাবে চলবেন, সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখবেন, তাদের অনেক প্রশ্ন থাকে। মসজিদ যেহেতু তাদের বাসস্থান থেকে দুরে থাকে তাই জামাতে নামাজ পড়তে বেশ হেঁটে আসতে হয় ।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে, অতিরিক্ত হেঁটে আসাতে, আবার তাওয়াফে বেশ ব্যায়াম হয়। তাই কিছু […]