লিখেছেন: ডাঃ মোহিব নীরব
১. তাইরে নাইরে নাইঃ ফিফথ ইয়ারের শুরুতে ৭-৮ মাস বুঝতে বুঝতেই চলে যায়। আমার মত ফাঁকিবাজ হলে তো কথাই নেই। ফাইনাল ইয়ারের আনন্দে শুধু ওয়ার্ড-লেকচার-ঘুমে(+যার যেটা নেশা/শখ) দিন যায় রাত আসে। আইটেম নাই, কার্ড-টার্ম কিছুই নাই, ওয়ার্ড ফাইনালের আগে দু একদিন শর্টকেস আর অসপিটা একটু দেখলেই চলে। কোন কোন ওয়ার্ডে শুধু ওয়ার্ড ফাইনালে প্রেসেন্ট থাকলেই চলে।
২.স্বর্গ হতে বিদায়ঃ প্রথম ধাক্কাটা এসে লাগে ব্লক পোস্টিং এর সময়। যতটা না পড়াশোনার তার চেয়ে ঢের বেশি মানসিক চাপ। ক্যালেন্ডারের পাতায় বেশি দিন বাকি থাকে না প্রফের। লেকচার ক্লাস শেষের দিকে বা শেষ, ওয়ার্ডে রেজিস্টার স্যার, শিক্ষকেরা এক্সপেক্ট করবেন আমরা সব কিছু পাড়বো। হাতে গোণা রেগুলার কয়েকজন ব্যাচমেট ছাড়া বাকিদের অবস্থা বায়বীয় (অবশ্য চমেক ৪৮ব্যাচে বায়বীয়রাই সংখ্যালঘু ছিল)।
৩. রিটেন না ভাইভা? ভাইভা না শর্ট কেস/লং কেস!!! ফার্স্ট-সেকেন্ড প্রফে অন্তত কার্ড-টার্ম সাথে সাথে রিটেনের পড়াটা গোছানো হয়ে যায়। অন্যের কথা জানি না আমার নিজের রিয়েলাইজেশন এসেছিলো পরীক্ষার বাকি ৬ মাস ও নেই কিন্তু রিটেনেরই প্রস্তুতি নেই। এদিকে ব্লকে সারাদিন ওয়ার্ডে বন্দী। এখন উপায়? শর্ট কেস তো সারা জীবনের ভয়, হাত কাঁপে। লং কেস কিভাবে সাজাবো?
৪. নতুন করে শুরুঃ ৬ বছর ৮ মাসের (এমবিবিএস+ইন্টার্নশিপ) মেডিকেল লাইফে অন্তত শ’খানেক বার নতুন করে সব কিছু শুরু করেছিলাম। নাহ নিজের কথা আর লিখবো না কারণ যাদের জন্য লিখছি তাঁরা প্রত্যেকেই নিউ ফিফথ ইয়ার, তাঁরা রেগুলারভাবেই শুরু করতে পারবে।
৫.মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতনঃ স্ট্র্যাটেজি বনাম পরিশ্রম। ফাইনাল প্রফে আপনার জ্ঞানের গভীরতা মাপা হয় না, দেখা হয়
ক) আপনি রোগী মারবেন না তো? মানে চিকিৎসক হিসেবে আপনি নিরাপদ হবেন তো?
খ) আপনার আচরণ কতটুকু চিকিৎসক সুলভ? আপনার এটিচুড/কথা বলা/তাকানো/ইমার্জেন্সি সিচুয়েশন (পরীক্ষা-ভাইভা-লং কেস) কিভাবে হ্যান্ডেল করেন?
তাই প্রথমে লাগবে পরিশ্রম করে অন্তত যে নলেজটা না নিয়ে গেলে আপনি একজন মানুষের উপকার না করেন ক্ষতি করবেন না সেটা অর্জন করা। চমেকের তৌহিদুল ইসলাম স্যার বলতেনঃ আপনি যদি শুদ্ধ ভাবে ডাক্তার না হন আপনার প্রথম শিকার হবে আপনার বাবা মা, কারণ সবার আগে আপনার বাবা মা কে চিকিৎসা দিবেন আপনি। (বিদ্রঃ আমি বা আমার বোন দুজনেই ডাক্তার কিন্তু অদ্ভুত কারণে আমরা কেউ আমাদের মায়ের প্রেশার মেপে কিছু পাই না)
আর রোগীর গায়ে আপনার হাত দেয়া দেখেই শিক্ষকেরা বুঝে যাবেন আপনি জীবনে ওয়ার্ডে গেছেন কিনা? রোগীর গায়ে হাত দিয়েছেন কিনা? আপনি পালপেট করে এনলার্জড লিভার পান না পান কিন্তু কতটা পটূভাবে লিভারটা পালপেট করলেন শিক্ষকেরা এটাই দেখতে চান(পরীক্ষায় যে হেপাটোমেগালির রোগীটা দেয়া থাকবে আগে থেকেই তো আপনি জানবেন যে রোগীর লিভার এনলার্জড। কিন্তু যেটা আপনি আপনি পারবেন না সেটা হলে স্বাভাবিকভাবে পালপেট করা যদি প্র্যাকটিস না থাকে)
৬ ছোট ছোট লড়াই বিশ্ব যুদ্ধ জেতায়ঃ একদিনে/একমাসে সব পড়ে ফেলবেন চিন্তা ঝেড়ে ফেলুন।
ক) যখন যে ওয়ার্ড চলবে যেমন EYE ENT গাইনী এবং অবস, পেডিয়াট্রিক সার্জারি/মেডিসিন, অর্থোপেডিকস, মেডিসিন, নিউরোলোজি, নেফ্রোলজি সেই ওয়ার্ডের রিটেনের প্রস্তুতি গুছিয়ে রাখুন। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত কম ভলিউমের সাবজেক্ট যেমন EYE ENT PEDI.
খ) মাদার সাব্জেক্ট যেমন জেনারেল সার্জারি, মেডিসিন, গাইনী এবং অবস এর জন্য একটা ক্লিনিক্যাল মেথড/মূল সহায়ক বই সব সময় সাথে রাখুন এবং ওয়ার্ডে সিএ বা রেজিস্টার স্যারেরা যখন হিস্ট্রি নিতে বলে তখন এদিক ওদিক ঘুরে গল্প না করে ম্যাকলয়েড/এস দাস দেখে দেখা এক্সামিনেশনগুলো প্র্যাকটিস করুন। একজন করবে বাকিরা তাকে ক্রিটিসাইস করুন। প্র্যাকটিস করুন দলে কিন্তু পারলে একটু আলাদা হয়ে নিজে নিজে কেইস হিসেবে হিস্ট্রি সাজিয়ে ফেলুন। মেডিসিনের হিস্ট্রি আব্দুল্লাহ স্যারের বইতে খুব ভালো আছে, সার্জারির জন্য শাহীন স্যারের সিক্রেট/অভিষেক স্যারের Abhishak BhattacharjeeRCC/Norman Browse, গাইনীর জন্য নুরজাহান ভূঁইয়া-রোকেয়া ম্যাডামের বই ফলো করতে পারেন। লং কেস গুছায় ফেলতে পারলে ফাইনাল প্রফ চার ভাগের এক ভাগ পাশ। বাকি চার আনা শর্ট কেস, বাকি আধা রিটেন ভাইভা।
গ) এরপর টার্গেট করুন ভাইভা+রিটেনের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতিঃ শুরু করতে পারেন দু’ভাবে যেটা আপনার একদম কম পড়া আছে বা একদমই কম বোঝেন/ভয় লাগে। অথবা যেটা অপেক্ষাকৃত ছোট সিলেবাস, কম পড়ে আগে শেষ করতে পারবেন। সাবজেকটের লিস্ট করতে পারন এভাবে
EYE>ENT>PEDI>OBS>GYNAE>MEDICINE>SURGERY
মেডিসিন/সার্জারি যেটাই আপনার বেশি কঠিন বা বড় মনে হবে আজ থেকে প্রতিদিন একটা করে টপিক্স/একটা করে ছক/একটা করে প্রশ্ন পড়বেন বলে ঠিক করেন। কন্টিনিয়াস সেটাই একটু একটু করে পড়বেন।
৭ গাইডলাইন/লাইফ লাইনঃ গাইড কখনোই অচ্ছুৎ না। প্রায় সব ক্যাম্পাসেই বিশেষ কিছু পরীক্ষক প্রফে নিজের লেকচার থেকে শুনতে চায়। এছাড়া প্রফের প্রস্তুতি খুব অগোছালো বা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আপনার সময়ের সেরা গাইড/বা যেটা পড়ে আপনি কমফোর্ট ফিল করেন সেই গাইডে লেকচার নোটস থেকে/মূল বই থেকে দরকারি তথ্যগুলো টুকে রেখে একযায়গায় সব কিছু করে রাখুন। এখন করে রাখলে পরে বুঝবেন এটাই আপনার লাইফ লাইন হবে।