DMC তে গত ১০তারিখে হয়ে গেলো ৬৯তম DMC ডে। সকাল থেকেই র্যালি সহ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিনটি। এই বর্ণাঢ্য আয়োজন’টিকে স্বার্থক করে উক্ত প্রতিষ্ঠানের অ্যালম্নাই ট্রাস্ট। এই আয়োজন উপলক্ষ্যে দেশের চিকিৎসা শিক্ষার অন্যতম স্তম্ভ DMCH সেজেছিল এক নববধূর বেশে। দেখে মনে হচ্ছিল- এযেন এক বিয়ে বাড়ি।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বিকেল সাড়ে ৫টায় শুরু হলেও আমি পৌঁছাতে পৌঁছাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। উত্তরা থেকে সাড়ে ৩টায় রওনা দিয়ে ডাঃ মিলন মিলনায়তনে পৌঁছাই সাড়ে ৭টা বেজে গিয়েছিল। ফার্মগেট থেকে শাহবাগ-পুরোটাই ব্লকড ছিল রাস্তা ভি.আই.পি. মুভমেন্টের জন্য। সে যাই হোক, গিয়ে দেখি একের পর এক চোখ ধাঁধাঁনো সব পারফরমান্স হয়ে যাচ্ছে। কোনটা রেখে কোনটাকে ভালো বলবো-সেটা আমার জানা নেই, তবে ১টা ব্যাপারঃ প্রিন্সিপাল স্যারের গানের সঙ্গে এতো রিলাক্স মুডে নাচ করা শুধুমাত্র DMC এর মতো প্রতিষ্ঠানেই হয়তো সম্ভব। এক কথায়-হ্যাটস অফ।
কিছুক্ষণ পরপর ডাঃ আব্দুর-নূর-তুষার ভাই সহ অ্যালম্নাই ট্রাস্টের অনেকেই এসে তাঁদের আয়োজনের কিছু কথা বলে যাচ্ছিলেন। তুষার ভাইয়ের একটা কথা না বললেই না- বাংলাদেশের ইতিহাস লিখতে হলে অবশ্যই DMC এর নাম লিখতে হবে। তাঁরা শুধু বিদ্যার্জন নয়, দেশের গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখা থেকে শুরু করে ভাষা আন্দোলন পর্যন্ত সকল আন্দোলনের সরব সাক্ষী। এখন পর্যন্ত তাঁদের কোন অনুষ্ঠানে হিন্দি/উর্দু গানের কোন পরিবেশনা হয়নি- এটার জন্য স্যালুট! আমার খুব বলতে ইচ্ছে করে-ইশ! এইভাবে করে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সকল মানুষ ভাবতো, না জানি কতোই সুন্দর হতো। দেশটা বিজাতীয় সংস্কৃতি’র হাত থেকে মুক্ত হয়ে আরেকবার স্বাধীনতা লাভ করতো!
যন্ত্রশিল্পী ওরা ১১জন-এর পরিবেশনা’টা হৃদয় ছুঁয়ে গিয়েছিল আর “বীরাঙ্গনার বাংলায় রাজাকারের ঠাঁই নাই” নাটকটিও অসাধারণ মানের ছিল। এইসব কিছু ছাপিয়ে আমার কাছে সবচেয়ে দারুণ লেগেছেঃ ঢালিউডের ৬০বছর পূর্তি উপলক্ষ্যকে উৎসর্গ করা ঢাকাই ছবি’র সেকাল থেকে একাল’কে তুলে ধরা। স্যার/ম্যাডাম’দের কুর্নিশ করতে ইচ্ছে করছিল-এমন চমৎকার একটা পরিবেশনার জন্য। নিজের শিক্ষার্থী’দের সাথে এতোটা প্রাণবন্ত হয়ে নিজেকে মেলে ধরা-এটাও সম্ভবত শুধুমাত্র DMC’তেই সম্ভব। একটা ব্যাপার আমার ব্যক্তিগত ভাবে খুব খারাপ লেগেছে-সেটা হলোঃ ভারতীয় বাংলা গানের চর্চা। খুবই দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা না হলেও পারতো। আমাদের দেশের বাংলা গানের আবেদন ওদের চেয়ে শত-সহস্র গুনে বেশি এবং মানেও অনেক উন্নত। আশা করি-এই ব্যাপারটা ভবিষ্যতে আরো ভালো করে দেখা হবে। কারণ, এই একটা জিনিস ছাড়া পুরো আয়োজনে কেউ যদি খুঁত ধরতেও চায়-তাও পারবে না। রেটিং করতে গেলে ১০০/১০ হয়ে যেত!
ডিনার ব্রেকের সময় আমি ওয়াসরুমে ঢুকতেই দেখি- পরম শ্রদ্ধেয় ডাঃ লুতফর রহমান স্যার। ইচ্ছে করছিল পা ছুঁয়ে সালাম করতে। কিন্তু ওয়াসরুমের সামনে ব্যাপারটা খুবই বেমানান দেখায়, তাই স্যার’কে সালাম দিয়ে দ্রুত কেটে পরলাম সেখান থেকে। খুব গর্ব করে বলতে ইচ্ছে করে- উনি আমার দেশের (গ্রামের বাড়ি) মানুষ, উনার বাড়িও পাবনা’তে। রাতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল- বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যান্ড “মাইলস”এর পরিবেশনা।
ব্রেকের সময় আমি আর তপু ভাই (নিউরো বিভাগের আই.এম.ও. DMCH) বেশ কিছুক্ষণ কুয়াশা স্নান করলাম আর ফানুস ওড়ানো দেখছিলাম। কিভাবে সব আলোক বাতিগুলো চোখের নিমেষে তারা হয়ে গেলো! অদ্ভুত… আর কিছুক্ষণ পরপর টোম্পা’পু (এইচ.এম.ও. DMCH)-কে এসএমএস দিয়েই যাচ্ছিলাম, কিন্তু কেন জানি উনার সাথে দেখা হচ্ছিল না কিছুতেই। যেহেতু, মাইলস মানের যাদু… তাঁদের একের পর পর মনোমুগদ্ধকর পরিবেশনা দিয়ে আমাদের মাতিয়ে রাখছিলেন। আমি আর তপু ভাই প্রায় সিটের ভেতর লাফিয়ে গলা ছেড়ে চিৎকার করছিলাম সব লাইনের সাথে। রাত গভীর হলে একসময় সেই জমকালো অনুষ্ঠানের শেষ বাঁশি বাজে। হঠাৎ করে দেখা হয়ে গেলো টোম্পা’পুর সাথে। এতো রাতে উনি একা যাবেন ভেবে আমি উনাকে লিফট দিলাম। আরেকজন সেলিব্রেটি ম্যাডামের কথা বাদ পড়ে গেছে, উনি হলেন- ডাঃ সহেলী আহমেদ সুইটি (এম।ডি। নেফ্রোলজি), উনার সাথেও ক্ষুদ্র সাক্ষাত হয়েছিল।
সবশেষে যার কথা বলবো- সে হলো আমাদের প্ল্যাটফর্মের অ্যাক্টিভিস্ট (DMCian) ও আলোকচিত্র শিল্পী এস.এম. নিয়াজ মোর্শেদ। গাড়ি’তে ওঠার সময় ও আমার একটা ছবি তুলে দিলো, কিন্তু সে পুরো অনুষ্ঠান কি যে কষ্ট করে কভার করেছে, আমি তাঁর সাক্ষী। ওপর তলায় বসেছিলাম বলে- আমি ওর সব স্ন্যাপের নিরব দর্শক, আফসোস ছিল- প্ল্যাটফর্মিয়ান তুর্য, দীপ্র আর সিফাতের সাথে দেখা না হওয়ার। বাসায় ফেরার সময় দেখি- ৫ আঙ্গুল দূরে যা আছে, তাও অস্পষ্ট! যাই হোক, অনেক মধুর একটা সময় কাটলো- জয় হোক DMC এর, জয় হোক প্ল্যাটফর্ম’এর।