প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৮ জুলাই ২০২১, বৃহস্পতিবার
ডা. নির্ঝর কুমার সাহা
এমবিবিএস, বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এফসিপিএস (মেডিসিন) (পার্ট-১)
এমডি (কার্ডিওলজি) (ফেইজ-এ)
রেসিডেন্ট (এনআইসিভিডি)
অক্সিজেন সিলিন্ডার কত রকম?
৪ ধরনের অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে।
A B C এবং D টাইপ। আমাদের কোমড় সমান হাইটের যে সিলিন্ডারগুলো সবচেয়ে বেশি দেখি সেটা B টাইপ।
অক্সিজেন সিলিন্ডার এর ধারণ ক্ষমতা কত?
B type এর সিলিন্ডার এর ক্যাপাসিটি বা ধারণ ক্ষমতা
১০ লিটার পানি। অক্সিজেন কতটুকু রাখা যাবে সেটা নির্ভর করে কত প্রেশার এ আছে তার ওপর। সাধারণত
৯০ মিলিলিটার পার মার্কারি প্রেশারে থাকা অক্সিজেন এর একটা B type সিলিন্ডার এ অক্সিজেন থাকে ৯০০-১২০০ লিটারের মত।
কোভিড রোগীদের অক্সিজেন লাগে কতটুকু?
এটা আসলে রোগীদের মধ্যে ভ্যারি করে। অনেকেই আছে যাদের পুরো অসুস্থতার সময় কোন অক্সিজেন এর প্রয়োজন হয়না। তবে পালস অক্সিমিটার এ ৯৩% এর নিচে থাকলে বা শ্বাসকষ্ট হলে অক্সিজেন দেয়াটা জরুরি। প্রতি মিনিট এ কতটুকু অক্সিজেন লাগবে সেটা নির্ভর করে রোগীর স্যাচুরেশন এর উপর। কোভিড রোগীদের যাদের অক্সিজেন লাগে সাধারণত নূন্যতম ৩-৪লিটার/মিনিট অক্সিজেন লাগে।
একটা মাঝারি সিলিন্ডার কতক্ষণ একজন রোগীর অক্সিজেন চাহিদা মেটাতে পারে?
সাধারণত ৪ লিটার/ মিনিট এ যাওয়া অক্সিজেন দিলে একজন রোগীকে একটা সিলিন্ডার (B) সর্বোচ্চ ৫ ঘন্টা অক্সিজেন ডেলিভারি দিতে পারে। মিনিটে ৪ লিটার হলে তার অক্সিজেন লাগবে ঘন্টায় ২৪০ লিটার। ৯০০-১২০০ লিটারের ক্যাপাসিটির একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার সর্বোচ্চ তাই ৫ ঘন্টা পর্যন্ত একজন রোগীর অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে পারে।
অক্সিজেন কিভাবে দেয়া হয়?
সাধারণত এটা রোগীর অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা উপর নির্ভর করে।
i. ৪/৫লিটার পর্যন্ত ন্যাজাল ক্যানুলা।
ii. ৮ লিটার পর্যন্ত সিম্পল ফেস মাস্ক/হাডসন মাস্ক।
iii. এর বেশি হলে NRB mask.
iv. তার বেশি হলে NIV CPAP Intubation এমন অনেক অপশন আছে।
কতক্ষণ পর্যন্ত অক্সিজেন দিতে হবে?
সাধারণত একজন করোনা রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩% এর উপরে অক্সিজেন ছাড়া মেইনটেইন হলে আর অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন নেই।
অক্সিজেন চলাকালীন একটা সিলিন্ডার আর কতক্ষণ পর্যন্ত রোগীকে সাপ্লাই দিতে পারবে এটা কিভাবে হিসাব করা যায়?
এটা একটা সূত্রের মাধ্যমে করা হয়ঃ
প্রেশার-রেসিডুয়াল প্রেশার) × কন্সটেন্ট ÷ ফ্লো রেট
স্বাভাবিক হিসাব এ মিনিটে ৪ লিটার অক্সিজেন পাওয়া একজন রোগী মাঝারি সাইজের B type এর সিলিন্ডার ব্যবহার করলে সূত্রটা এরকম।
প্রেশার= ৯০
রেসিডুয়াল প্রেশার= ৫-১৫ (এভারেজ-১০)
কনস্টেন্ট-
A-5
B-10
C-40
D-47
ফ্লো রেট= ৪লি/মিনিট
সূত্র= (৯০-১০)×১০ ÷ ৪লি/মিনিট
=২০০মিনিট(তিন ঘন্টা ২০ মিনিট)
কতটুকু অক্সিজেন দিলে স্যাচুরেশন কতটুকু বাড়ে?
সাধারণত প্রতি লিটার এ অক্সিজেন এ স্যাচুরেশন বাড়ে ৪% এবং এর সাথে পরিবেশগত অক্সিজেন আছে ২১%। সুতরাং ২ লিটার অক্সিজেন দিলে এপ্রক্সিমেটলি রোগীকে সাপ্লাই দেয়া যায় ২১+৭/৮=২৮/২৯%
অক্সিজেন সোর্স কত রকমের?
তিন রকমঃ
১) লিকুইড- এখানে অক্সিজেনকে প্রেশারাইজ করে লিকুইড করে ফেলা হয়। এটাকে সাধারণত বলে LOX। প্রেশারাইজ করে লিকুইড অক্সিজেনকে ১০ ভাগের এক ভাগ স্পেস এ সিলিন্ডার এ রাখা যায়।
২) কম্প্রেসড অক্সিজেন- গ্যাসীয় অক্সিজেনকে কম্প্রেস করে রাখা হয়। ইলেক্ট্রিসিটি ছাড়া এটা ডেলিভারি করা যায়। তবে প্রেশারের কারণে আগুন ধরে দূর্ঘটনা ঘটতে পারে তাই এ ব্যাপারে সাবধান থাকা উচিত।
৩) কন্সেন্ট্রেটর- এটা একটা ইলেক্ট্রিক ডিভাইস। বাতাসে স্বাভাবিক যে ২১% অক্সিজেন থাকে সেখান থেকে এই মেশিন সর্বোচ্চ ৫ লিটার অক্সিজেন কনভার্ট করতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্টে ভুগছেন এমন রোগী যাদের বাসায় ১৫ ঘন্টার বেশি অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন তারা এই মেশিন ব্যবহার করেনা সাধারণত। ন্যাজাল ক্যানুলা এখানে ব্যবহার করা হয়।
একজন করোনা রোগীর নূন্যতম ৪ লিটার/মিনিট অক্সিজেন ডেলিভারি দেয়ার জন্য এক দিনে একজন রোগীরই প্রয়োজন হয় প্রায় ৫/৬টা মাঝারি B type সিলিন্ডার। উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালে স্বাভাবিক সময়ে এক সপ্তাহেও যেটা প্রয়োজন হয়না।
