২৩ জুন ২০২০, মঙ্গলবার
ডা. এ.বি.এম কামরুল হাসান
এনেস্থিসিয়োলজিষ্ট,
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ব্রুনাই
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটা নির্দেশনা দেখলাম। কোভিড আক্রান্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের দেশের সব সরকারি হাসপাতালে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সুচিকিৎসার নির্দেশ দেয়া হয়।
বাহ্ চমৎকার! মনে হচ্ছে, এ পেশার লোকদের সরকারি হাসপাতালে এতদিন সুচিকিৎসা হচ্ছিলো না, এবার হবে। আচ্ছা, অগ্রাধিকার কি জিনিস? একটু বুঝায়ে বলুন তো। ধরুন, একটা আই সি ইউ বেড ফাঁকা আছে। লাইনে আছেন তিনজন সংকটাপন্ন রোগী। একজন মন্ত্রী বা সংসদ সদস্য। আরেকজন বড় এক আমলা। তৃতীয় ব্যক্তি একজন ডাক্তার বা নার্স বা অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী। বুকে হাত দিয়ে বলুন তো, কাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে?
প্রশ্নটা হাইপোথেটিক্যাল নয়। বাস্তবসম্মত। মাউন্ট এলিজাবেথ বা বামরুনগ্রাদ যাবার উপায় নেই এখন।
আজগুবি বিভাগ, কে চালাচ্ছে এ ডিপার্টমেন্টটা- এসব জনগণের কথা না। খোদ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্টাান্ডিং কমিটির একজন সদস্যের কথা। প্রশ্ন উঠেছে, সুচিকিৎসার এত সরকারি হাসপাতাল থাকতে ডিজি মহোদয় কেন সিএমএইচে গেলেন? অন্য একটি আদেশ দেখলাম। শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য সুনির্দিষ্ট। এখানেও অগ্রাধিকারের বেড়াজাল।
আরেকটি কথা। হাসপাতালটি কি প্রস্তুত কোভিড রোগী সেবার জন্য? কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সরবরাহ রয়েছে? পর্যাপ্ত ভেন্টিলেটর? হাই-ফ্লো নেজাল অক্সিজেন কেনুলা? প্রয়োজনীয় জনবল?
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি চাইলো তিনটি নির্দিষ্ট হাসপাতাল। আবেদনের ১০ দিনের মাথায় ব্যবস্থা করলেন সেই তিন হাসপাতালের। সাধুবাদ জানাই। বিজ্ঞ আইনজীবীদের পরিবারবর্গকেও এ সুবিধা দেয়ার নির্দেশনা দিলেন। অথচ চিকিৎসকদের জন্য জারিকৃত আদেশদ্বয়ে ‘পরিবারবর্গ’ শব্দটি সুকৌশলে এড়িয়ে গেলেন। কেন? নাকি ভেবেছেন, ডাক্তাররা চাইলো এক হাসপাতাল, দিয়ে দিলাম দেশের সব সরকারি হাসপাতাল। তাতেই সবাই খুশি?
দেশে এখন দুর্যোগকাল। সকলের দায়িত্বশীল আচরণ কাম্য। দায়িত্বপ্রাপ্তদের এধরণের সিদ্ধান্ত কিভাবে তাদেরকে হেয় করে ফেলছে, তা ভেবে দেখার অনুরোধ রইলো।