অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদের উদ্যোগ; সভায় ওষুধ কোম্পানির হট্টগোল!

মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫

সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সহজপ্রাপ্য করার উদ্যোগ অন্তর্বর্তীকালীন নিয়েছে। উদ্যোগের অংশ হিসেবে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদের কথা শুনে সভায় হট্টগোল করেছে ওষুধ কোম্পানির কর্তারা!

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সভায় সরকারের পক্ষ থেকে এ কথা বলা হলে তার প্রতিবাদে ওষুধ কোম্পানির কর্তারা এ হট্টগোল করে বলেছেন, ওষুধের সঠিক মূল্য না পেলে ওষুধ কোম্পানিগুলো টিকতে পারবে না।

মন্ত্রণালয় এই সভার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মালিক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, ইউএসএআইডির প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, পেশাজীবী সংগঠন এবং অধিকারকর্মীরা অংশ নেন।

সভার শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান বলেন, “দেশের ওষুধশিল্পের উল্লেখযোগ্য বিকাশ ঘটলেও দেশের মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয়ের বড় অংশ চলে যায় ওষুধের পেছনে। স্বাস্থ্যের রক্ষা, উন্নতি ও অর্জন—এসবের জন্য ওষুধের ব্যবহারকে আরও অর্থবহ করার সুযোগ আছে।”

বিভিন্ন পক্ষ কীভাবে সেই অবদান রাখতে পারে সে ব্যাপারে খোলামেলা আলোচনার জন্য উপস্থিত সবার প্রতি আহবান জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, “সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সহজপ্রাপ্য করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে সরকার অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করতে চায়।”

ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, “ওষুধের দাম সীমাহীন জায়গায় চলে যাচ্ছে। ছুরি ধরার মতো ওষুধ কোম্পানিগুলোর ক্যাডার বাহিনী তৈরি হয়েছে। তাদের আচরণ গণশত্রুর মতো।”

পরবর্তীতে সভায় উত্তেজনা দেখা দেয়। ওষুধ কোম্পানিগুলো হট্টগোল আরম্ভ করে। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, তথ্য–উপাত্ত ঠিকভাবে না জেনে ওষুধশিল্প ও এর অবদান বিষয়ে অনেকেই কথা বলেন। ওষুধশিল্প এখন প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।

ওষুধ উৎপাদনে যাওয়ার আগে ৪৯ ধরনের লাইসেন্স বা নিবন্ধন নেওয়ার দরকার হয় উল্লেখ করে ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বায়োলজিক্যাল পণ্য তৈরির একটি বড় চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে।

অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার পরামর্শ দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ন্যাশনাল প্রফেশনাল অফিসার অনিন্দ্য রহমান বলেন, “মানুষ ১০ শতাংশ ওষুধ হাসপাতাল থেকে নেয়, ৯০ শতাংশ ওষুধ নেয় দোকান থেকে। মানুষ অযৌক্তিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ও সাধারণ ওষুধের ব্যবহার করে।”

বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ (স্বাস্থ্য) আতিয়া হাসান বলেন, “অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকায় পরিবর্তন এনে তাতে অসংক্রামক রোগের ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ভোক্তাদেরও ওষুধ ব্যবহারের ক্ষেত্রে আচরণ পরিবর্তনের দরকার আছে।”

সরকারের একমাত্র ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলেন একাধিক আলোচক।

একজন আলোচক, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের পেছনে ব্যয় না করলে ওষুধের দাম কমবে বলে মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, “আমাদের মধ্যে পক্ষ–বিপক্ষ বলে কিছু নেই। আমাদের প্রত্যেকের দরিদ্র আত্মীয়স্বজন আছে। আমাদের এমন কিছু করতে হবে, যেন কেউ বলতে না পারে যে আমার ওষুধ কেনার সামর্থ্য নেই।”

প্ল্যাটফর্ম/

Moin Uddin Ahmad Sibli

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

তিন মেডিকেল কলেজে নতুন অধ্যক্ষের পদায়ন

Tue Jan 14 , 2025
মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ তিন মেডিকেল কলেজে নতুন অধ্যক্ষের পদায়ন করা হয়েছে। আজ (১৪ জানুয়ারি) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের  পারসোনেল-১ শাখা কর্তৃক প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে।   রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে উপসচিব দুর-রে-শাহওয়াজ স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী – ডা: […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo