সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫
দেশের বিভিন্ন এলাকায় অদক্ষ দাইয়ের হাতে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে প্রাণ হারাচ্ছেন প্রসূতিরা এবং বাড়ছে প্রসব পরবর্তী জটিলতা। সম্প্রতি বেসরকারি সংস্থা উন্নয়ন বিকল্পের নীতিনির্ধারণী গবেষণার (উবিনীগ) এক জরিপে দেখা গেছে, গ্রামের ৮৫ শতাংশ নারী সন্তান প্রসবের জন্য দাইয়ের ওপর নির্ভরশীল।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৩১ লাখ নারী সন্তান প্রসব করেন। এর মধ্যে ৪৭ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিকে, ৫৩ শতাংশ বাসাবাড়িতে। ১৬ লাখ ৪৩ হাজার সন্তান প্রসব হয় বাসাবাড়িতে অদক্ষ দাইয়ের হাতে। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে ১৭২ নারী প্রাণ হারান।
প্রসূতি মৃত্যুর বেশিরভাগই দাইদের হাতে!
দেশে চলতি দশকের শুরুতে প্রসূতির মৃত্যু বেড়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্মের বিপরীতে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত দাঁড়িয়েছে ১৬৮। যদিও আগের বছরগুলোয় তা কমতে শুরু করেছিল। সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রতি লাখে ১৭২ নারী প্রাণ হারান। যার মধ্যে বাসায় (দাইদের হাতে) প্রাণ হারাণ, ১৪৪জন!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রি-একলাম্পশিয়া, একলাম্পশিয়া, ফুল না আসা ও প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণের কারণে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে। পাশাপাশি দাইরা এসব জটিলতা সম্পর্কে অবগত না থাকায় নিজেরাই প্রসব সম্পন্ন করার চেষ্টা করে। ফলে মা-শিশু উভয়েই বা মায়ের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া, গ্রামাঞ্চলে যানবাহন সমস্যা, হাসপাতালে সময়মতো সেবা না পাওয়ার আশঙ্কা, গুণগত বা নির্ধারিত সেবা না পাওয়া মাতৃমৃত্যু বাড়ার অন্যতম কারণ।
এছাড়াও ম্যাটস, ডিএমএফ বা পল্লি চিকিৎসকদের ভুয়া চিকিৎসায় ভুল ওষুধ খাবার কারণেও রক্তক্ষরণ হয়ে অনেক প্রসূতি মারা যাচ্ছেন। আবার শুধু যে সন্তান প্রসবের সময়েই মায়েরা মারা গেছেন, তা নয়। আর্লি প্রেগন্যান্সিতেও নানান জটিলতার কারণে মায়েদের মৃত্যু বেড়েছে।
বিবিএসের সর্বশেষ ২০২৪ সালে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস-২০২৩’ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার কমে দাঁড়ায় ৬২ দশমিক ১ শতাংশে। ২০১৫ সালের পর এই হার সর্বনিম্ন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জন্মনিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি নেওয়ার হার ৬১ শতাংশ এবং সনাতন পদ্ধতি নেওয়ার হার ১ শতাংশের বেশি। শহরের তুলনায় গ্রামে পদ্ধতি ব্যবহারের হার কম। এ হার শহরে প্রায় ৬৪ শতাংশ, গ্রামে প্রায় ৬২ শতাংশ।
দাইদের হাতে প্রসব না করাতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি মনে করছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এটা চলমান থাকলে প্রসূতি মৃত্যুর হার অস্বাভাবিকহারে বাড়তে পারে বলেও ধারণা করছেন তারা।
প্ল্যাটফর্ম/