শনিবার, ০৪ জানুয়ারি, ২০২৫
বাংলাদেশে বিএমডিসি বা ইউসিজির অনুমোদন ছাড়াই সার্টিফিকেট ইন মেডিকেল আল্ট্রাসাউন্ড (সিএমইউ) ও ডিপ্লোমা ইন মেডিকেল আল্ট্রাসাউন্ড (ডিএমইউ) সনদ দিচ্ছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সম্প্রতি প্ল্যাটফর্মের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। যা বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৫ ধারাও পরিপন্থী!
বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে সিএমইউ বা ডিএমইউ সার্টিফিকেট প্রদান করছে। যা ইউজিসির (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) আইন পরিপন্থী। ইউজিসির আইন অনুযায়ী, কোনো বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ বাংলাদেশে বসে দেওয়া যাবে না।
অন্যদিকে বিএমডিসির নিয়মানুযায়ী, “এ ধরনের সনদ দিতে হলে, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ইউজিসির অনুমোদন লাগবে এবং সনদটি মেডিকেল স্বাস্থ্য শিক্ষা কর্তৃপক্ষের দ্বারা স্বীকৃত হতে হবে।”
একই সাথে বিএমডিসির আইন বলছে, মেডিকেলের তিন মাস, ছয় মাস এমনকি এক বছর মেয়াদি কোর্স যদি কোনো ইনস্টিটিউট বা প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা করতে হলে প্রথমেই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে। মন্ত্রণালয় তা বিবেচনা করলে তখন মতামতের জন্য বিএমডিসিতে পাঠানো হয়। যাচাই-বাছাই শেষে বিএমডিসির অনুমতি সাপেক্ষেই শুধুমাত্র কোর্স পরিচালনা করা যাবে।
প্ল্যাটফর্মের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, যে সকল প্রতিষ্ঠান আল্ট্রাসাউন্ডের যে সকল কোর্সের সার্টিফিকেট প্রদান করছে এদের বেশিরভাগই অননুমোদিত। সিএমইউ ও ডিএমইউ ছাড়াও এমন আরও বেশকিছু কোর্স রয়েছে যেগুলোরও বিএমডিসির অনুমোদন নাই। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি নামে-বেনামে তিন থেকে ছয় মাসব্যাপী কোর্স পরিচালনা করছে এবং ডিগ্রি দিচ্ছে। অন্যদিকে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমোদন নাই।
‘বাংলাদেশ মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০’ এর ২৫ নং – ‘সরকার ও কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যতিরেকে শিক্ষা কার্যক্রম, ইত্যাদি নিষিদ্ধ’ ধারা অনুযায়ী, “কোন মেডিকেল প্রতিষ্ঠান বা ডেন্টাল প্রতিষ্ঠান সরকার ও কাউন্সিলের অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তফসিলে উল্লিখিত কোন মেডিকেল চিকিৎসা-শিক্ষা বা ডেন্টাল চিকিৎসা-শিক্ষা সংক্রান্ত কোন শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ, পাঠ্যসূচী প্রণয়ন, কোর্স পরিচালনা, প্রশিক্ষণ প্রদান অথবা এতদসংক্রান্ত কোন সনদপত্র, ডিগ্রী বা ডিপ্লোমা প্রদান করিতে পারিবে না।
(২) কোন প্রতিষ্ঠান উপ-ধারা (১) এর বিধান লংঘন করিলে উক্ত লংঘন হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠান ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে, এবং উহার অতিরিক্ত, উক্ত অপরাধ অব্যাহত থাকিলে প্রতিদিনের জন্য ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা অর্থদন্ডে দন্ডনীয় হইবে।”
কিন্তু বর্তমান সময়ে সিএমইউ ও ডিএমইউর বেশ চাহিদা থাকায় বেশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে এসব কোর্স করছেন চিকিৎসকেরা। চাহিদাকে পূঁজি করে চলছে এসব প্রতিষ্ঠান। সিএমইউ করতে একেকজনকে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা এবং ডিএমইউ করতে ৪০ হাজার থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
বিস্তারিত জানতে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের হটলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করে প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হলে কল কেটে দেয়া হয়।
এ-র ফলে চিকিৎসকদের ক্ষতি, আইনভঙ্গের পাশাপাশি দেশও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য যে, সরকার স্বীকৃত ডিএমইউ বা সিএমইউর প্রতিষ্ঠান ও ডিগ্রি যথাক্রমে – বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পিজিডিএমইউ এবং বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সিএমইউ এবং ডিএমইউ।
প্ল্যাটফর্ম/