প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১০ ডিসেম্বর, ২০২০, বৃহস্পতিবার
ডা. মারুফুর রহমান অপু
ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার (মেডিকেল বায়োটেকনোলজি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
দেশে করোনা মহামারী মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবার সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে জরুরি পরিস্থিতি বিবেচনায় ৫০০০ নার্স, ৩৯ তম বিসিএস এর ২য় পর্যায় হিসেবে আরও ২ হাজার ডাক্তার এবং আরও সহস্রাধিক মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মী নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ করছেন।
এই বিশাল কর্মযজ্ঞে যে করোনাযোদ্ধারা আলোচনায় নেই, আজকে তাদের নিয়ে কিছু কথা তুলে ধরা হলো।
৩৯ বিসিএস এর ২য় পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকদের প্রায় ২০০ জনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্তি দিয়ে রাখা হয়েছিলো। পরবর্তীতে কিছু চিকিৎসকদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হলেও প্রায় ৩০ জনের মত চিকিৎসক এখনও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন শাখায় কাজ করছেন। এদের মাঝে ১৫ জন কাজ করছেন এমআইএস শাখায়। তাদের কাজ হল প্রতিদিনের টেস্টের রিপোর্ট গুলো ঠিকমত দেয়া হলো কিনা, সার্ভিলেন্স সিস্টেমে এন্ট্রি করা হলো কিনা, কেউ রিপোর্ট পেতে বাকি থাকলো কিনা, বিদেশযাত্রীদের কেউ রিপোর্ট না পেয়ে আটকা পড়লো কিনা, রিপোর্টে নাম, বয়স, লিঙ্গ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে ভুল হলো কিনা ইত্যাদি; এই সকল তথ্য ব্যবস্থাপনার কাজটি তারা করছেন দিন রাত ২৪ ঘন্টা সপ্তাহে ৭ দিন।
রাত ২ টা ৩ টা ৪ টা যেকোন সময়েই ফোন বেজে ওঠে; হয় এয়ারপোর্ট থেকে অথবা কন্ট্রোল রুম থেকে (আজকে সকালে স্যাম্পল দেয়া হয়েছে; ১ ঘন্টার মাঝে ফ্লাইট এখনো রিপোর্ট পায় নি)। ফোন পেয়ে চিকিৎসকেরা ল্যাবের ফোকাল পার্সন বা অন্য কাউকে ফোন করে খোঁজ নেন, অনেক সময় ঘুম থেকে ডেকে তুলে রিপোর্ট বের করতে হয়, ভুল হলে সংশোধন করতে হয়। এর বাইরেও প্রতিদিনের প্রেস রিলিজ তৈরি করা, সারা দেশের তথ্য সংগ্রহ প্রক্রিয়া মনিটর করা, ১৯৩ জন ডাটা অপারেটরকে লাইনে রাখা, এডমিনিস্ট্রেটিভ সমস্যার সমাধান করা, সাংবাদিকদের তথ্য দেয়া ইত্যাদি সবই তারা করছেন, মাত্র ১০ জন চিকিৎসক। তাদের এই অবদানের জন্যই অল্প কিছু ব্যতিক্রম বাদে নমুনা সংগ্রহের ২৪-৭২ ঘন্টার মাঝে মানুষ রিপোর্ট পেয়ে যাচ্ছে। বিদেশযাত্রীরা ২৪ ঘন্টা এমনকি আরও কম সময়ে রিপোর্ট পাচ্ছেন। এর মাঝে যারা পজিটিভ হচ্ছেন তাদের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিযুক্ত ৩৯ বিসিএস এর আরেকটি দল ফোন করে চিকিৎসা পরামর্শ দিচ্ছে, ফলোআপ করছে, একটা গ্রুপ অধিদপ্তরের ২৪/৭ হটলাইন নাম্বারগুলো রিসিভ করে সারাদেশের মানুষের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করছেন, একটি গ্রুপ বাসা থেকে স্যাম্পল কালেকশনে কাজ করছেন৷ প্রতিদিন, সারাদিন, সারারাত।
এই যোদ্ধাদের অবদানের কথা বলে শেষ করা যাবে না। এই সেবাটা না থাকলে পুরো দেশের করোনা নিয়ন্ত্রণের মূল অংশটুকুই ধ্বসে যেত।
যদিও আর কিছুদিন পরেই এই চিকিৎসকদের ১ বছর কর্মকাল পূর্ণ হবে, তবু্ও তাদের পেরিফেরিতে পাঠানোর বিষয়ে এখনো কোনো আভাস দেখা যাচ্ছে না। অথচ তাদের এই ১ বছর বা যতদিনই থাকেন না কেনো এই সময়টা বাধ্যতামূলক ২ বছর পেরিফেরি হিসেবে কাউন্ট হবে না। তাদের অনেকেই বিভিন্ন পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ছিলেন, নির্দিষ্ট মেয়াদের মাঝে জয়েন না করলে কোর্স বাতিল হয়ে যাবে। অনেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন কোর্সে ঢোকার পরীক্ষা দেবেন, অথচ ২ বছর পেরিফেরি পূর্ণ না হলে কোর্সে জয়েন করতে পারবেন না। এছাড়া অধিদপ্তরে নিযুক্ত এই চিকিৎসকেরা ছাড়াও ঢাকা ও আশেপাশের বিভিন্ন জায়গায় করোনাকালীন পদায়নের অংশ হিসেবে কোভিড/নন-কোভিড ডিউটিতে আছেন নব নিযুক্ত আরও বেশ কিছু চিকিৎসক। এই অল্প কয়েকজনের করোনাকালীন সেবা প্রদানের এই গুরুত্বপূর্ণ সময়টাকে পেরিফেরির বছর হিসেবে কাউন্ট করা কি খুব জটিল কোন বিষয়?