প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ এপ্রিল, ২০২০, বুধবার
কোভিড ১৯ মহামারীতে সংগ্রাম করছে সারা বিশ্বের মানুষ। বাংলাদেশের প্রতিদিনের সকাল শুরু হয় মন খারাপ করা সব খবর দিয়ে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, তার সাথে মৃত্যুহারও। একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসক, পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা। অপ্রতুল ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন রাত-দিন, তারপরও চারপাশের মানুষদের চরম অসহযোগিতা। নিজেদের জন্য ন্যায্য সুরক্ষা সামগ্রী চাওয়ায় হুমকির মুখেও পড়তে হচ্ছে কাউকে। কেউ বাড়ি ছাড়া হচ্ছেন, আইসোলেশন অথবা কোয়ারেইন্টাইনে থাকা চিকিৎসকদের নেই পর্যাপ্ত থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা, কেউ হয়তো প্রয়োজনীয় বাজারটুকু করতে যেতে পারছেন না সামাজিক বাঁধার কারণে। এছাড়া কোভিড ১৯ আক্রান্ত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারকে সামাজিকভাবে করা হচ্ছে বর্জন।
এর মাঝে অন্য এক গল্প শোনালেন, ডা. সালমা হাসান। উত্তর লন্ডনের হার্টফোর্ডশায়ারের স্টিভিনেজ শহরে আছেন তিনি। কাজ করছেন যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত লিস্টার হাসপাতালে।
লন্ডনের এক শহরের ছোট্ট বাসিন্দা নালা রোজ, ৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে। নিজের একটা মাত্র ত্রি-ডি (3D) প্রিন্টার আর পকেটমানি দিয়ে তৈরি শুরু করে ফেইস শিল্ড। উদ্দেশ্য- ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের দেওয়া। তার তৈরি এই ফেইস শিল্ড গুলো এরমধ্যেই বিভিন্ন হাসপাতালে অনুমোদন পেয়েছে। নানী ও নাতনী মিলে দিন-রাত কাজ করেছেন। এখন পৌঁছেও দিচ্ছেন হাসপাতালগুলোয়। তাকে দেখে আরো অনেক মানুষ এখন ফেইস শিল্ড তৈরি করে বিভিন্ন হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছে।
স্টিভিনেজ শহরে আছে বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষ। আর লিস্টার হাসপাতালে বেশিরভাগ মানুষ আসেন হার্টফোর্ডশায়ার থেকে। এর প্রতিটি এলাকায় প্রতিবেশীরা নতুন করে পরিচিত হচ্ছেন, গড়ে উঠছে পুরোনো সেই আত্মীয়তার বন্ধন। শহরের ব্যস্ততম দিনগুলোর মাঝে কোথাও যা হারিয়ে গিয়েছিল।
যেদিন প্রথম ঘোষণা এলো, বয়স্ক আর গুরুতর শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত মানুষদের ৩ মাস বাড়িতে থাকার কথা, সেদিন থেকেই এলাকায় তৈরি হলো ফুড ব্যাংক, স্বেচ্ছাসেবক দল। কোভিড ১৯ আক্রান্ত রোগীদেরও আগলে রাখছেন প্রতিবেশীরা। যারাই আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে থাকছেন, তাদের জন্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে খাবার, প্রয়োজনীয় বাজার, ওষুধ পত্র।
স্বেচ্ছাসেবক দলে আছেন নারী-পুরুষ সবাই, অফিস আদালত এখন যাদের বন্ধ। শুধু কি তাই?
নালা রোজের মত ছোট ছোট গ্রুপে প্রতিবেশীরা সবাই শহরের লোকাল হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার, নার্স, এম্বুলেন্স, পুলিশ ও ফার্মাসিতে কর্মরত ব্যক্তি (যাদের ঘরে বসে জীবন বাঁচানোর কোন উপায় নেই) তাদের জন্য তৈরি করছে ওয়াশেবল স্ক্রাব, ময়লা কাপড় রাখার জন্য সেলাই করছে লন্ড্রি ব্যাগ। বক্সে বক্সে হাসপাতালগুলোয় পৌঁছে দিচ্ছে দিন ও রাতের খাবার, সাথে ফলমূল।
এটুকু শুধু নয়, সাথে থাকছে হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য ছোট ছোট ধন্যবাদ বার্তা, বাচ্চাদের হাতে আঁকা ছবি।
ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশ্বাস আর সহযোগিতা প্রতিদিন নতুন করে সাহস যোগায়, আশা জাগায় একটা সুস্থ ভোরের। স্থানীয় হাট-বাজারসহ সুপার মার্কেট সবখানেই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য আলাদা সময় দেওয়া হচ্ছে, যেন তারা ভীড় এড়িয়ে নিজেদের মত কেনাকাটা করতে পারেন। বড় ছোট সমস্ত দোকানে আছে বিশেষ মূল্যহ্রাস!
সরকার কি করছে সেটা দেখার জন্য সাধারণ মানুষ ঘরে বসে নেই। প্রতিদিন কীভাবে আর কাউকে সাহায্য করা যায় সেই চেষ্টাই করছে সবাই।
এই গল্পগুলো শুধু স্টিভিনেজ শহরের নয়,
গল্পগুলো যুক্তরাজ্যের সব কটা শহরের।
অনেক অপ্রতুলতা আছে, থাকবে,
সাথে আছে এই ভালোবাসাগুলো।
নিজস্ব প্রতিবেদক/সুবহে জামিল সুবাহ