মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪
কাগজ-কলমেই ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। নেই প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল। রোগী থাকলেও নেই চিকিৎসক, নির্বিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়! খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে পুরো উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। এতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থান জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলায়। তবুও ২জন মেডিকেল অফিসারের দক্ষতায় টিকে আছে পুরো ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কার্যক্রম।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডাঃ শারমিন সুলতানা শান্তা গত ৩০ আগস্ট সকালে চিকিৎসক সংকটের কারণে অতিরিক্ত ডিউটি করার সময় হঠাৎ সিঁড়ি থেকে পড়ে তার পা মচকে ফেলেন। পরে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লে ছুটিতে যান। কিন্তু পরবর্তীতে বাধ্য হয়েই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে চিকিৎসা সেবা ব্যাহত রাখতে মচকে যাওয়া (প্লাস্টার করা পা) নিয়ে হুইল চেয়ারে বসে ঘুরে ঘুরে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন এবং নিয়মিত ডিউটি করেছেন।
জেলা সিভিল সার্জন অফিস সুত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার সহ পার্শ্ববর্তী মাদারগঞ্জ, কাজিপুর, ধনবাড়ি উপজেলার একাংশের মানুষ প্রতিনিয়ত চিকিৎসা নিতে আসে সরিষাবাড়ী হাসপাতালে। গড়ে প্রতিদিন এ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসে ৩ থেকে ৪ শতাধিক মানুষ। গত ১ বছর ধরে চিকিৎসক সংকট থাকায় প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।
৫০ শয্যার একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মোট ৩১ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে চলার কথা থাকলেও বাস্তবে মাত্র ২ জন মেডিকেল অফিসার চালিয়ে নিচ্ছেন ৫০ শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে। ২ জন চিকিৎসক দিয়ে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্বাস্থ্যসেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বেকার পড়ে রয়েছে অপারেশন থিয়েটার। ছোটখাটো অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীদের যেতে হচ্ছে জেলা সদর হাসপাতাল কিংবা প্রাইভেট ক্লিনিকে।
বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, জুনিয়র কনসালটেন্ট শিশু, এ্যানেসথেসিয়া, গাইনি এন্ড অবস, কার্ডিওলজি, অর্থো সার্জারী, চক্ষু, ইএনিটি, চর্ম ও যৌন, সার্জারি, মেডিসিন, মেডিকেল অফিসার (৩ জন), ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার (প্যাথলজি), ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ডেন্টাল সার্জন, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার (হোমিও দেশজ), মেডিকেল অফিসার ইউনিয়ন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (৮ জন) চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। পদ খালি থাকায় ব্যবহার হয় না চিকিৎসকদের কোয়ার্টার, যা দিনদিন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। সংকট রয়েছে চতুর্থ শ্রেণির র্কমচারীরও। সাতজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী জায়গায় আছেন একজন।
চিকিৎসক সংকট থাকায় যে কোনো রোগী এলেই জরুরি বিভাগ থেকে তাদের স্থানান্তর করতে হয় জামালপুর বা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গুরুতর রোগী স্থানান্তর নিয়ে বিপাকে পড়ে যায় দরিদ্র পরিবার গুলো।
এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০০৬-২০০৭ অর্থবছরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আর্থিক সহায়তায় মা ও নবজাতকের চিকিৎসাসেবা চালু করা হয়। তবে জনবল সংকটে এখন বন্ধ রয়েছে এই সেবা। ২০০৮ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি প্রসূতি সেবা (ইওসি) চালু হলেও তা অল্প কয়েক দিনের মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। ২০০৯ সালে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ২২ লাখ টাকার ডিজিটাল একটি এক্স-রে মেশিন সরবরাহ করা হয়। কিন্তু যন্ত্রটি কিছুদিন পরই বিকল হয়ে পড়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জনবল সংকট ও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম চিকিৎসক রয়েছেন। ইতিমধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জেলা সিভিল সার্জন অফিস ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি জানিয়ে ডাক্তার সংকট নিরসনের জন্য একাধিকবার আবেদন পাঠানো হয়েছে।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী