২১ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, ২০২৪
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স (এএমআর) হলো একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা বর্তমানে বিশ্বজুড়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি তখন ঘটে যখন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাঙ্গাস, বা পরজীবী অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল (যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল বা অ্যান্টিফাঙ্গাল) ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে, এই রোগগুলো চিকিৎসা করার জন্য ব্যবহৃত ওষুধগুলো আর কার্যকরী থাকে না।
এএমআর-এর কারণ
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্সের মূল কারণগুলোর মধ্যে অপ্রয়োজনীয় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, চিকিৎসা পদ্ধতির অব্যবস্থাপনা এবং রোগীর নিজস্ব হাতে ওষুধ গ্রহণ অন্তর্ভুক্ত।
অপ্রয়োজনীয় ব্যবহার: অনেক ক্ষেত্রেই, অ্যান্টিবায়োটিকগুলি ভাইরাল ইনফেকশনের জন্য নিধারিত হয়, যেখানে এগুলোর কোন কার্যকারিতা নেই। এর ফলে, ব্যাকটেরিয়া বিকাশের সুযোগ পায় এবং রেসিস্ট্যান্ট স্ট্রেন তৈরি করে।
চিকিৎসা পদ্ধতির অব্যবস্থাপনা: স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার না হওয়া এবং রোগীদের চিকিৎসা শেষে সম্পূর্ণ কোর্স না নেওয়ার ফলে রেসিস্ট্যান্সের সৃষ্টি হয়।
ভোক্তা আচরণ: অনেক মানুষ নিজেদের থেকেই অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণ করে, যা প্রায়শই চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া হয়।
কৃষিতে ব্যবহার: কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার, বিশেষ করে মাংস উৎপাদনে, এও এএমআর-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এইভাবে, মাংসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক রেসিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া প্রবাহিত হতে পারে।
এএমআর-এর প্রভাব
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স বিশ্ব স্বাস্থ্য সংকটের একটি বড় কারণ হয়ে উঠেছে। এটি চিকিৎসা ব্যবস্থা, রোগ প্রতিরোধ এবং রোগের নিয়ন্ত্রণকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এএমআর-এর কারণে রোগের চিকিৎসা জটিল হয়ে পড়ে, রোগীর মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ বেড়ে যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুমান করে যে, ২০৫০ সালের মধ্যে এএমআর-এর কারণে বছরে ১০ মিলিয়ন লোক মারা যেতে পারে। বর্তমানের অনেক পরিচিত রোগ যেমন, নিউমোনিয়া, টিবি, এবং সেপসিস, AMR-এর কারণে আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স প্রতিরোধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব:
সচেতনতা বৃদ্ধি: স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে এএমআর সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত।
অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের নিয়ন্ত্রণ: চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের জন্য সঠিক নির্দেশিকা এবং নিয়মাবলী অনুসরণ করা উচিত।
সঠিক চিকিৎসা: রোগীদের উচিত সম্পূর্ণ অ্যান্টিবায়োটিক কোর্স সম্পন্ন করা এবং চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ গ্রহণ না করা।
গবেষণা ও উদ্ভাবন: নতুন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ এবং বিকল্প চিকিৎসার দিকে গবেষণা বাড়াতে হবে, যাতে এএমআর-এর বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।
কৃষিতে নজরদারি: কৃষিতে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের উপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো উচিত, যাতে খাদ্য চেইনের মাধ্যমে এএমআর ছড়িয়ে পড়া কমানো যায়।
উপসংহার
অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা, যা একক দেশ বা অঞ্চলের সমস্যা নয়, বরং একটি বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য সেবা, কৃষি এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে এএমআর প্রতিরোধে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। একসঙ্গে কাজ করার মাধ্যমে, আমরা একটি স্বাস্থ্যকর ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারি এবং অ্যান্টিবায়োটিকের কার্যকারিতা বজায় রাখতে পারি।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: এস. এম. এম. মুসাব্বির উদ্দিন
ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ