প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১১ মে ২০২০, সোমবার
ডা. মেহেদী হাসান
এই করোনাকালে লকডাউনের বদৌলতে মানুষ পরিবারকে আরো বেশি সময় দিতে পেরেছে। আমার ক্ষেত্রে হয়েছে উল্টোটা। আমি আরো বেশি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছি। বাবা মাকে দেখতে যাবার কথা থাকলেও এই মহামারী আমাকে ঢাকা ছাড়তে দিল না। ভিডিও কলে অশ্রুসজল বাবা মাকে দেখি আর শান্তনা দিয়ে বলি অচিরেই শেষ হয়ে যাবে এই ভয়াল সময়। কষ্ট লুকিয়ে বলি খুব দ্রুত দেখা হবে ইনশাআল্লাহ। আদতে কবে কাটবে এই কালোরাত, কোন ভোরের আলোয় দেখা হবে – জানি না!
এই করোনাকাল আমার মত অনেক সম্মুখ যোদ্ধাকেই ঘরছাড়া করেছে। প্রায় অর্ধমাস আগে আইসিইউ এর উদ্দেশ্যে বাসা ছেড়েছিলাম। ডিউটি আর হোটেল কোয়ারান্টাইন শেষে আজ বাসায় ফিরব দুইদিনের জন্য। কর্মচারীবিহীন এই হোটেল জীবনের কষ্টের গল্প অন্য দিনের জন্য তোলা থাক। মেহেরিমা ও তার মা বাসায় অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
আমাদেরকে অনেকে ফ্রন্টলাইন ফাইটার বলছে। কথাটা মিথ্যা নয়, মানুষের জীবন বাঁচাতে যুদ্ধ আমরা করছি ঠিকই, কিন্তু আমাদের পরিবার এরচেয়ে বড় যুদ্ধের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা সেই প্রথম দিন থেকেই দিন গুনছে। ফোন দিলেই জিজ্ঞেস করে, “বাবা! আর কয়দিন পর আসবা?” গত দুই তিন দিন ধরে আমাকে সাবরাইজ (সারপ্রাইজ) দেবার প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
মায়ের কাছে আগেই বলে রেখেছে এ দুইদিন সে আমার সাথেই ঘুমাবে। গতকাল সে আমার একটা প্যান্ট পাশে নিয়ে ঘুমাতে গেছে। অবশেষে আজ অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে। পোস্টটা বাসায় যাবার আগেই লিখছি কেননা বাসায় তার কড়া শাসনে থাকা লাগে। পাকনা বুড়ির মত বলবে, দুইদিনের জন্য বাসায় আসছো, বউ বাচ্চাকে সময় দাও – ফেকবুক (ফেকবুকই বলে সে) টিপবা না।
মাদ্রাসা ছুটি – বাসায় তার খেলার সাথী আমি। স্বভাবতই, এতদিন বাইরে থাকায় সে-ই বেশি হার্ডটাইম কাটাচ্ছে। আল্লাহর কাছে খুব করে চাই মেয়েটাকে যেন হাফেজা, আলেমা বানাতে পারি। বড় শান্ত মেয়েটা। এ রমাদান কষ্টে কাটছে আমাদের। বিশেষ করে ইফতারের আগে সবাইকে নিয়ে আল্লাহর দরবারে হাত তোলাটা মিস করি।
সময় বড় কিমতি জিনিস। লকডাউনে ঘরে বসে কাটানো সময়টা কাজে লাগাতে পারেন। আপনজনদের বেশি বেশি সময় দেন। স্ত্রীর কাজে হেল্প করুন। দাম্পত্য জীবনের গ্যাপগুলো পূরণ করে ফেলুন। গল্পে গল্পে বাচ্চাকে ইসলামের স্বর্ণযুগের ইতিহাস জানান। মুফতে পেয়ে গেছেন এক সুবর্ণ সুযোগ। হেলায় হারাবেন না।
এই করোনাকাল কতকিছু দিয়ে গেল, কতকিছু নিয়ে গেল।