আওয়ামীলীগের তিন এমপির সুপারিশে যশোরের সিভিল সার্জন হয়েছিলেন ডা. মাহমুদুল হাসান

শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

ডা. মাহমুদুল হাসান (ফরিদপুরের সিভিল সার্জন) যশোরের সিভিল সার্জন হবার আগে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত বছরের ১০ জুন তিনি যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে যোগদান করেন।

ছবিতে উপরে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান। নিচে ডান থেকে – আওয়ামীলীগের কুড়িগ্রাম ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও যশোর -৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুর ইসলাম। ছবি – সংগৃহীত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তার নিকটাআত্নীয় আওয়ামীলীগের কুড়িগ্রাম ৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশ, যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ ও যশোর -৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আজিজুর ইসলামের ডিও লেটার (সুপারিশ পত্র) নিয়ে তিনি যশোরের সিভিল সার্জন হিসেবে পদায়িত হয়েছিলেন।

যশোরের সিভিল সার্জনের দায়িত্ব নিয়ে তিনি জেলার চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের আওয়ামী লীগের প্রভাব প্রদর্শন করতেন। তার নিকটাত্মীয় সাবেক সংসদ সদস্য বিপ্লব হাসান পলাশের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি প্রভাব বিস্তার করেছিলেন।

অভিযোগ আছে, ডা. মাহমুদুল হাসান যশোরে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এমনকি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স হালনাগাদ করতে মালিকদের মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিতেন। এমনকি নতুন লাইসেন্সের জন্য টাকার অংক (ঘুষ) নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন তিনি। এমনকি বিগত দিনে সিলগালা করা অনেক অযোগ্য ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে চালু করে দিয়েছেন। আউটসোর্সিং নিয়োগ দেওয়ার নামে নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন তিনি। এ বিষয়ে সে-সময়ে বেশ ক’টি জাতীয় দৈনিকে সংবাদও প্রকাশিত হয়। দৈনিক ইত্তেফাকে তাকে নিয়ে ‘যশোরের সিভিল সার্জনের আন্দোলনবিরোধী ভিডিও ফাঁসে তোলপাড়’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ।

ভোল পাল্টেও শেষ রক্ষা হলো না যশোরের সিভিল সার্জনের – শিরোনামে সময়ের কন্ঠস্বরে প্রকাশিত সংবাদ।

আন্দোলনকারীদের ‘জঙ্গি বলা সেই সিভিল সার্জন এখন আ.লীগ বিরোধী – শিরোনামে সারা বাংলায় প্রকাশিত সংবাদ।

যশোরের সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একটি সূত্রে জানা গেছে, যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও তার নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্যপ্রতিষ্ঠানসমূহে ১১-২০ তম গ্রেডে (৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি) ১৯৯ পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন ছিল। নিয়োগ শেষ না হলেও এসব নিয়োগ সম্পন্ন করার জন্য আট উপজেলার জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে মোটা টাকার মাধ্যমে বাণিজ্য করেছেন ডা. মাহমুদুল হাসান।

এদিকে আওয়ামী লীগের দোসরের ভূমিকায় থাকলেও তিনি গত বছরের ৫ আগস্টের পর নিজের ভোল পাল্টানোর চেষ্টা করেছেন। আগে অফিসে ও আওয়ামী লীগের শীর্ষনেতাদের কাছে নিজেকে আওয়ামী চেতনার পরিচয় দিলেও; রাজনীতি পটপরিবর্তনের পর তিনি ছাত্রজীবনে শিবির করতেন বলে পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু শান্তি সমাবেশে তার বক্তব্যের একাংশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

দৈনিক ইনকিলাবকে দেয়া বার্তা!

এ ব্যাপারে দৈনিক ইনকিলাবকে দেয়া এক বার্তায় (ইনকিলাবে প্রকাশিত সে সংবাদ) তিনি (যশোরের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান) বলেছিলেন, “আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ থেকে পাশ করেছি। সেখানে শিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলাম। গত সরকারের আমলে স্বাচিব নেতারা আমাকে দিয়ে জোর করে কোটা বিরোধী ছাত্রদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিতে বাধ্য করেছে। আর আমি দুর্নীতি করেছি কেউ প্রমান করতে পারবেনা। আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত চলছে।”

পরবর্তীতে গত বছরের ডিসেম্বরে তাকে যশোর থেকে ফরিদপুর জেলায় সিভিল সার্জন হিসেবে বদলি করা হয়।

সবশেষ গতকাল তিনি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ম্যাটস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের নিয়ে কটূক্তি করলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরই প্রেক্ষিতে তিনি আজ (২২ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নেন।

প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলেছে গণঅভ্যুত্থান

Sat Feb 22 , 2025
শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে আয়োজিত এক বৈজ্ঞানিক সেমিনারে জানানো হয়েছে, গণঅভ্যুত্থান (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলেছে। গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে কেন্দ্র করে দেশের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। শনিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুল ইসলাম লেকচার হলে সেন্টার […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo