আওয়ামী দোসররা আমার ক্যারিয়ার নষ্ট করে দিয়েছে: ডা. নিলুফা

বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

আওয়ামী লীগ সরকারের দোসরদের বিরুদ্ধে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করার অভিযোগ তুলেছেন বঞ্চিত চিকিৎসক ডা. নিলুফা ইয়াসমিন। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে এফসিপিএস পার্ট-২ প্রশিক্ষণে বাধা দিয়ে আওয়ামী দোসররা আমার গাইনিকোলজিস্ট ক্যারিয়ার নষ্ট করেছে।’

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সুপ্রিম কোর্টের ল রিপোর্টার্স ফোরামের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন ডা. নিলুফা ইয়াসমিন।

    ল’ রিপোর্টার্স ফোরামে সংবাদ সম্মেলনে ডা. নিলুফা ইয়াসমিন। ছবি-সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে ডা. নিলুফা ইয়াসমিন দাবি করেন, ‘আমার বাধ্যতামূলক তিন বছরের প্রশিক্ষণ এফসিপিএস ডিগ্রির জন্য অপরিহার্য ছিল। কিন্তু আমাকে বিভিন্ন স্থানে বদলির কারণে এসব ব্যাহত হয়েছে। স্বৈরশাসকের দোসরদের এমন পদক্ষেপ আমার গাইনেকোলজিস্ট হিসেবে পেশাগত বিকাশকেও করেছে বাধাগ্রস্ত।’

লিখিত বক্তব্যে ডা. নিলুফা ইয়াসমিন জানান, তিনি ২০০৩ সালের ১০ ডিসেম্বর ২২তম বিসিএসের মাধ্যমে ভান্ডারিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রথম চাকরিতে যোগ দেন। পরবর্তীতে মানিকগঞ্জ ও আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও তিনি কর্মরত ছিলেন। জুলাই ২০০৮ সেশনে এফসিপিএস (গাইনি) প্রথম পর্ব পাসের পর ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ট্রেনিং পোস্টে (বহিঃ) মেডিকেল অফিসার পদে যোগ দেন তিনি। এফসিপিএস পার্ট-২ দেওয়ার জন্য নিয়ম অনুযায়ী তিন বছরের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক হলেও তা পূর্ণ হওয়ার আগেই তাকে ঢাকা বিভাগে ন্যস্ত করা হয়।

ডা. ইয়াসমিন আরও জানান, ২০১১ সালের ১০ মার্চ আদেশ স্থগিতের জন্য অথবা বাংলাদেশের যে কোনো মেডিকেলে ট্রেনিং পোস্টে পদায়নের জন্য আবেদন করেন তিনি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজি তাকে প্রস্তাব দেওয়ার নির্দেশ দেন। এ প্রেক্ষাপটে ২০১২ সালের ৮ জানুয়ারি আবারও তিনি আবেদন করেন এবং ডিজি অনুমোদন করে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়ার নির্দেশ দেন। পদায়িত করার জন্য কালক্ষেপণ করায় উচ্চ আদালতে একটি রিট দায়ের করলে উচ্চ আদালত আগের আদেশ স্থগিতকরণ ও কেন পদায়ন করা হবে না মর্মে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করেন।

আওয়ামী সরকারের সময়ে হাইকোর্ট রিটটির কোনো নিষ্পত্তি করেননি দাবি করে ডা. ইয়াসমিন বলেন, ‘সরকার পতনের পর ২০২৪ সালের ২২ অক্টোবর উচ্চ আদালতের রায় আমার পক্ষে আসে, যার সার্টিফাইড কপি গত ৬ নভেম্বর হাতে পাই আমি। কিন্তু আদেশের পরও আমাকে আমার ন্যায্য অধিকার ফেরত দেওয়া হয়নি। এজন্য বাধ্য হয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে হচ্ছে।’

এই চিকিৎসক বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে আমি আমার প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। এই নোংরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে উচ্চতর ডিগ্রি- এফসিপিএস (গাইনি অ্যান্ড অবস্) করতে না পারায় আমি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। বর্তমানে আমার বয়স পঞ্চাশের ওপরে। চাকরি স্থায়ী করার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা বরাবর দুইবার আবেদন করেছি। ২২তম বিসিএসের চিকিৎসক কর্মকর্তারা ২০২৪ সালের ৩১ জানুয়ারি চতুর্থ গ্রেডে উন্নীত হয়ে অনেকেই পরিচালক হিসেবে কর্মরত আছেন এবং ২৮তম বিসিএসের চিকিৎসক কর্মকর্তারা ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল পঞ্চম গ্রেডে উন্নীত হয়ে কর্মরত আছেন। অথচ আমি ২২তম বিসিএস হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো উচ্চতর গ্রেড পাইনি। তাই আমি বাধ্য হয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছে কমপক্ষে ষষ্ঠ গ্রেডে উন্নীত করে সহকারী পরিচালক পদে পদায়নের জন্য আবেদন করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার কোনো ফলাফল পাওয়া যায়নি। আর কত বঞ্চিত হলে আমি বঞ্চিতদের তালিকায় পড়ব এবং কত সময় অপেক্ষা করলে আমি আমার ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবো?’

সবশেষে আক্ষেপ প্রকাশ করে ডা. নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার এক ছেলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন (অটিজম) এবং আমার সংসারও ভেঙে গেছে। দীর্ঘ ছয় বছর ধরে দুই সন্তান নিয়ে একাকী মানবেতর জীবনযাপন করছি। ২০১১ সালে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা আমাকে প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার আগেই ট্রেনিং পোস্ট থেকে সরিয়ে দেয়। বর্তমানেও ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসররা আমাকে বিভিন্ন ধরনের লিখিত ও মৌখিক হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।’

প্ল্যাটফর্ম/এমইউএএস

প্ল্যাটফর্ম কনট্রিবিউটর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

বাড়ানো হল ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করার সময়সীমা

Thu Feb 27 , 2025
বৃহস্পতিবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র ডাউনলোড করার সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। আগামীকাল (২৮ ফেব্রুয়ারি) পরীক্ষা শুরুর একঘন্টা আগ পর্যন্ত ডাউনলোড করা যাবে প্রবেশপত্র। বুধবার স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. মোঃ মহিউদ্দিন মাতুব্বর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষে বিডিএস […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo