আজকের ভাবনা: দন্তচিকিৎসাশাস্ত্রে ভবিষ্যৎ দর্শন

লিখেছেন ঃ ডাঃ ফাহমিদা হোসেন

আমার ‘আজকের ভাবনা’ আসলে কমপক্ষে ১মাসের পুরানো ভাবনা। কিন্তু প্রচণ্ড ব্যস্ততার কারণে পয়েন্টগুলা নোট করে রাখলেও এতদিন বিস্তারিত লেখার সময় পাইনি। জুলাই মাসের ১তারিখে কাজের শেষে গাড়িতে উঠবো। এমন সময় দেখি এলাকার একটা দোকানে ফোর্থ অফ জুলাই, অর্থাৎ ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে-র জন্য অনেক জিনিস সাপ্লাই এসেছে। ক্রেট ভর্তি জিনিসপত্র বেইসমেন্টের গুদাম ঘরে সাজিয়ে রাখার জন্য এক অভিনব পন্থা ব্যবহৃত হচ্ছে দেখে আমি থামলাম। তাদের পরিচিতি গোপন রাখার জন্য উপরের এবং নীচের ঘরের কারো চেহারা ভিডিও বা ছবিতে ধারণ করবো না, এই শর্তে সেই দুই ব্যক্তির অনুমতি নিয়ে আমি কিছু ছবি তুললাম এবং সাথে ছোট্ট একটা ভিডিও করে ফেললাম। সেই ভিডিও  লিঙ্ক নিচে দেওয়া হলঃ

ভিডিওটি ঃ https://www.facebook.com/fahmida.hussain.52/videos/10154402110214414/?hc_location=ufi

খুব আহামরি কিছু না হলেও বুদ্ধিটা কিন্তু মন্দ না! একটা ঢালু তলের মধ্যে কয়েকটা সারিতে অনেকগুলা ছোট ধাতব চাকা লাগানো আছে। অতএব, উপর থেকে এক ক্রেট করে পানির বোতল ছেড়ে দিলে খুব দ্রুত সেটা দ্বিতীয় ব্যক্তির কাছে পৌঁছে যাচ্ছে। প্রতি ক্রেটের পিছনে বড়জোর ১০সেকেন্ড সময় ব্যয় হওয়ায় ঐ ২ ব্যক্তি মিলে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ৫০ ক্রেট পানি নামিয়ে ফেললো। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে প্রতি ক্রেটে ৫০০ মি.লি.-র ২৪টা করে বোতল থাকে। সুতরাং ১টা ক্রেটের ওজন কিন্তু নিতান্ত কম না! আপাতদৃষ্টিতে এটা খুব সাধারণ ব্যাপার মনে হলেও আমার কাছে কিন্তু এর তাৎপর্য অনেকখানি। আনুমানিক ২০০২ সালের দিকে ২/৩ বছরের জন্য আমার নিজেরও একটা গ্রোসারী স্টোর ছিলো। সেখানে আমি নিজেও এইরকম পানি এবং পানীয়ের আনলোডিং-এর কাজ করেছি। প্রচণ্ড খাটনির কাজ! এই বুদ্ধিটা তখন জানা থাকলে অতটা কষ্ট হতো না। ফুলটাইম কাজ এবং সংসার সামাল দিয়ে আবার এতো পরিশ্রম করে পড়তা পড়েনি বলে শেষমেশ সেই দোকানের স্বত্ব বিক্রি করে দিই। হ্যাঁ, জীবনে আমার এইরকমই বহু উদ্ভট অভিজ্ঞতা আছে।

যাই হোক, পদার্থবিজ্ঞানের মূল সূত্র কাজে লাগিয়ে দৈনন্দিন কাজের সুরাহা করা পশ্চিমা দেশে কোন ব্যাপার না। শুধুমাত্র আমাদের দেশেই পুঁথিগত বিদ্যা আর বাস্তবসম্মত বুদ্ধির মধ্যে যোগসূত্রতা স্থাপন করা শিখানো হয় না বলে আমরা জানি না কিভাবে একটা বিরাট সমস্যার সহজ সমাধান বের করতে হবে। সেই একই কারণে ২ আর ২ মিলে যে ৪ হবে, সেই উপলব্ধিটুকুও আমাদের মধ্যে কাজ করে না। আবার কখনওবা নিজের অজান্তেই অনেক উন্নতমানের প্রযুক্তি বা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে ফেলি, কিন্তু সেই প্রয়োগের পিছনে আসল যুক্তি কি সেটার ব্যাখ্যা দেওয়ার মত ক্ষমতা রাখি না।

আজকে আমার মূল বক্তব্যে উপনীত হওয়ার আগে ছোট্ট অথচ খুবই সাধারণ কৌতুকের কথা দিয়ে শুরু করছি। দন্তচিকিৎসাশাস্ত্র সম্বন্ধে প্রায়শই দু’টা কৌতুক ব্যবহৃত হয়; যার প্রথমটা হলো টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনে একজন দন্তচিকিৎসকের স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করা হাস্যকর ব্যাপার, যে কথার সাথে আমি নিজেও কিছুটা হলেও একমত। এর কারণ হলো যে অধিকাংশ দন্তচিকিৎসকের পেশার যে প্রয়োজনীয়তা, তার মধ্যে দৈনন্দিনভাবে স্টেথোস্কোপের ব্যবহার বলতে গেলে শূন্য। সেই কারণেই স্টেথোস্কোপ আর দন্তচিকিৎসককে একসাথে দেখলে অনেক হাসির উদ্রেক হওয়াটাই স্বাভাবিক।
তবে হাস্যরসের আসল কারণ সেটা হলে কথা ছিলো না। সবার ধারণা যে আমরা মনে হয় স্টেথোস্কোপ কাকে বলে তা-ই জানি না। কিন্তু কথাটা কি আসলেই সত্যি? জনসাধারণের ধারণা যে দন্তচিকিৎসকরা জীবনেও স্টেথোস্কোপ হাতে লাগিয়ে দেখে না। ধারণায় ভ্রান্তি সেখানেই। এর আগেও বলেছি যে আমাদেরকেও কিন্তু অ্যানাটমি, এম্ব্রায়োলজি, ফিজিওলজি, প্যাথলজি, ফার্মাকোলজি, মাইক্রোবায়োলজি, রেডিওলজি, মেডিসিন, সার্জারি — এইসব বিষয়ে মেডিক্যালের মতই আদ্যোপান্ত পড়াশুনা করে ডিগ্রী অর্জন করতে হয়। মেডিসিন আর সার্জারির রোটেশনের সময় আমাদেরকেও ‘স্টেথোস্কোপ সহকারে’ একই রোগী দেখে পরীক্ষা পাস করা লাগে। মজার ব্যাপার হলো যে এই কথাটা কিন্তু চিকিৎসকরাও জানেন। কিন্তু কৌতুক করার সুযোগ পেলে কি আর ছাড়তে ইচ্ছা করে? আর সত্য কথা সহজেই প্রকাশ বা স্বীকার করে ফেললে তো পেশাগতভাবে তাদের সেই সামাজিক উচ্চমর্যাদা থাকবে না! তবে আমি অস্বীকার করবো না, যে পেশার প্রয়োগের প্রাধান্যের উপর ভিত্তি করে কিছু বিষয় সংক্ষিপ্ত আকারে পড়ানো হয় বা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয় না। যেমন গাইনোকলজি! কিন্তু আসলেই কি আমরা কম পড়াশুনা করি? সেই আলাপে আসছি পরে।

আগেই বলেছি যে অধিকাংশ দন্তচিকিৎসকের বি.ডি.এস. ডিগ্রী অর্জনের পর পেশার যে প্রয়োজনীয়তা, তার মধ্যে স্টেথোস্কোপের ব্যবহার একেবারেই নাই। সেটা কিন্তু এম.বি.বি.এস. ডিগ্রী অর্জনের পর একজন চিকিৎসকেরও কর্মজীবনের দায়িত্বের উপর নির্ভর করে। এই ব্যাপারে আমার ২টা তুচ্ছ প্রশ্ন থাকবেঃ
১] একজন রেডিওলজিস্ট এক্স-রে পর্যবেক্ষণ করার জন্য কিভাবে স্টেথোস্কোপ ইস্তেমাল করেন সেটা কি আমাকে বুঝিয়ে বলবেন?
২] একজন প্যাথলজিস্ট বা হিস্টোপ্যাথলজিস্ট অথবা মাইক্রোবায়োলজিস্টও কবে স্টেথোস্কোপ দিয়ে বায়োপ্সি করেছেন বা স্লাইড দেখেছেন সেই ব্যাখ্যা কি দয়া করে আমাকে দিবেন?
জানি, এর কোন সদুত্তর কোন চিকিৎসক দিতে পারবেন না। 🙂 এর কারণ হলো যে চিকিৎসক হয়েও উল্লিখিত সেই পেশাজীবীরা স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করেন না। বাস্তবে এম.বি.বি.এস. ডিগ্রী অর্জনের পর তারাও স্টেথোস্কোপ সিকায় উঠিয়ে রাখেন। 🙂 আসলে সবকিছুই নির্ভর করে ডিগ্রী অর্জনের পর সেটার নিয়মিত প্রয়োগ কতটুকু হচ্ছে অথবা দৈনন্দিন কাজে কোন যন্ত্রপাতি বেশী ব্যবহৃত হচ্ছে, তার উপর। পড়াশুনার চর্চা না থাকলে সাফল্যের সাথে পাস করেও পরে অনেককিছুই মনে থাকার কথা না। বলা বাহুল্য, যে সেই দোষে কিন্তু আমি নিজেও দোষী। বাংলাদেশ থেকে দন্তচিকিৎসাশাস্ত্রে পাস করার ২৩ বছর পরেও আমি এখনও পড়াশুনার চর্চা বজায় রেখেছি। আমার পেশায় দেশে এবং বিদেশে ২টা ডিগ্রী নেওয়ার পরে আমি চাকুরী করেও অন্যান্য বিষয়ে পড়াশুনা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিই। সেটা সম্পূর্ণভাবে আমার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিলো। সাধারণত কাজের পর বিকালে গিয়ে আমি ক্লাস করি। বিজনেস, ল’, এডুকেশন ছাড়াও বায়োএথিক্স এবং পাবলিক হেলথের পড়াশুনার জগতে আমার বিচরণ। কারণ আমি পড়াশুনাকে শুধুমাত্র জীবিকার মাধ্যম মনে করি না। আমার জন্য এটা সম্পূর্ণভাবে জ্ঞানার্জনের স্পৃহার সাথে সম্পৃক্ত।
তবে একজন মানুষের পক্ষে জ্ঞানাহরণ করা সহজ; কিন্তু জ্ঞান ধারণ করে রাখারও তো একটা সীমা আছে! নিয়মিত চর্চার অভাবে আমি এখন অনেক সাধারণ বিষয়ও ঠিকমত মনে করতে পারি না। খুব সহজ তথ্যের ব্যাপারেও ভুল করি। স্বাভাবিকভাবেই নিজের পেশাতেও যা নিয়মিতভাবে কাজে লাগে না, সেটা আর ঝালাই করা হয় না। তাই বলে চাইলেই যে আবার অবসরে পড়ে নেওয়া যাবে না, সেটাও ঠিক না। কিন্তু আমার মত ফাঁকিবাজের আর তা’ করা হয় কই? তবে সেই ব্যর্থতার দায় কেবলমাত্র আমার নিজের। এর সাথে আমার পেশার মানের কোন সম্পর্ক নাই। এই কথা অনস্বীকার্য যে পেশাদারী ডিগ্রী অর্জনের পর চর্চার অভাবে অনেক তথ্য স্মৃতির অতল গহ্বরে বিলীন হয়ে যায়। কিন্তু বেশীরভাগ মৌলিক জ্ঞান নিয়মিতভাবে ঝালাই করা ব্যতীত দন্তচিকিৎসকদের পক্ষেও পেশায় নিয়োজিত থাকা অসম্ভব। এখানে উল্লেখযোগ্য, যে চর্চার অভাবে স্মৃতিভ্রষ্টতার শিকার হওয়া কিন্তু মেডিক্যাল চিকিৎসকদের বেলাতেও প্রযোজ্য। সবই হলো অনুশীলনের ব্যাপার!
দন্তচিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে কৌতুকের কথায় ফিরে যাই। দ্বিতীয় কৌতুক হলো, যে এক ‘দাঁত’ পড়তে আর কত সময় লাগে? আগেই বলেছি, যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বেশীর ভাগ বিষয় আমাদের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু যেহেতু আমাদের জ্ঞানের প্রয়োগ শুধুমাত্র ‘ডেন্ট্যাল’ রিলেটেড, সেইজন্য বুঝার এই ভুল হতেই পারে। সেই কারণেই এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের ধারণা অসমাপ্ত। শুধু দাঁত না; ‘হেড এন্ড নেক’ অর্থাৎ মাথা থেকে শুরু করে পুরা ঘাড় পর্যন্ত সবধরনের রোগের চিকিৎসায় আমরা নিয়োজিত। আর কোনদিন কি মস্তকবিহীন কোন জীবন্ত মানুষ দেখেছেন? শরীরের প্রধান অংশই তো সেটা! আর দেহের যে কোন রোগবালাই তো আর শুধুমাত্র ভৌগলিক সীমারেখা বজায় রেখে অগ্রসর হয় না! দেহের বাকী অংশের যে কোন ব্যাধি ছড়িয়ে পড়ে সেখানে। আবার হেড এন্ড নেক-এর যে কোন রোগবালাইও বাকী দেহে ছড়িয়ে পড়ে অথবা সার্বিক সুস্থতাকে প্রভাবিত করে অনায়াসে।
হতাশাব্যঞ্জক ব্যাপার হলো যে বাংলাদেশের মেডিক্যাল চিকিৎসকরাও ডেন্ট্যাল চিকিৎসাশাস্ত্রের পাঠ্যসূচী তথা জ্ঞানের পরিধি সম্বন্ধে অনেকক্ষেত্রেই অনবগত। তাদের এইরকম চেটাল জ্ঞান সমাজে দন্তচিকিৎসক সম্বন্ধে আরও বেশী বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। সুতরাং, এই ব্যাপারে অজ্ঞ সাধারণ জনগোষ্ঠীকে দোষারোপ করে আর কি হবে? আগেই বলেছি, যে অনেকক্ষেত্রে আবার আধিপত্য বজায় রাখার জন্য মেডিক্যাল চিকিৎসকেরা ভালমত জানা সত্ত্বেও ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখেন যে দন্তচিকিৎসকেরা মেডিক্যালের সব বিষয় অধ্যয়ন না করে ‘বিডিএস’ ডিগ্রী অর্জন করতে পারেন না। এই ফেইসবুকেই আনুমানিক ২বছর আগে আমার একবার অভিজ্ঞতা হয়েছে যখন একজন হোমরাচোমরা চিকিৎসক সেই ‘স্টেথোস্কোপের’ কৌতুক শেয়ার করে যার-পর-নাই মজা লুটছিলেন! আমি যখন তাকে উপরোক্ত কথাগুলাই বললাম, তখন বললেন যে উনি নাকি আসল তথ্য ঠিকই জানেন, কিন্তু শুধু সরল রসিকতা করছেন! প্রশ্ন হলো যে সেটা কি আসলেই সরল রসিকতা? নাকি আধিপত্য বজায় রাখার নোংরা অপপ্রয়াস? সাধারণ মানুষের কাছে সত্য গোপন করে রসিকতা করার মাঝে তো সততা বা সরলতার কোন অবকাশ নাই; কারণ তারা তো সেই মিথ্যাকেই সত্যি মনে করছে!
আমাদের পাঠ্যসূচীতে আছে দন্তচিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য পৃথকভাবে অন্তর্ভুক্ত বিষয়াদিও। সেই অতিরিক্ত বিষয়গুলার মধ্যে অন্যতম হলো ওরাল সার্জারি ও এনেস্থেসিওলজি, ওরাল মেডিসিন ও প্যাথলজি, চিল্ড্রেন, প্রিভেন্টিভ ও কমিউনিটি ডেন্টিস্ট্রি, ডেন্ট্যাল রেডিওলজি, ডেন্ট্যাল ফার্মাকোলজি ইত্যাদি। হয়তো বলবেন যে এ আর নতুন কি? মানলাম, এই বিষয়গুলা আগে মেডিক্যালের ছাত্র-ছাত্রীদের সিলেবাস অনুযায়ী পড়ার পরেও সেই পূর্বে অধ্যয়নকৃত বিষয়ের ওভারল্যাপিং থাকাসত্ত্বেও শুধুমাত্র দন্তচিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য কাস্টমাইজ করে আবারও পড়ানো হয়। অতএব, এইক্ষেত্রেও কিন্তু এই তথ্য এটাই সমর্থন করছে, যে মেডিক্যালের এই সাবজেক্টগুলা আসলে পাস করার আগেই আমরা মূলত ২বার পড়ি।

তবে ডেন্টিস্ট্রির সিলেবাস কিন্তু সেখানেই শেষ না! সেই দীর্ঘ তালিকায় যুক্ত হয় ডেন্ট্যাল কেমিস্ট্রি এন্ড মেটিরিয়্যালস, প্রস্থডোন্টিক্স – ফিক্সড এবং রিমুভেবল, অর্থডোন্টিক্স, এন্ডোডোন্টিক্স, কনজারভেটিভ / অপারেটিভ ডেন্টিস্ট্র এই বিষয়গুলা। এখন আবার সেই ফিক্সড প্রস্থডোন্টিক্সে যুক্ত হয়েছে ইমপ্ল্যান্ট ডেন্টিস্ট্রি। সুতরাং পড়ার বিষয়ের কিন্তু শেষ নাই! যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু এর সাথেও আবার যুক্ত হয় এথিক্স, জুরিস্প্রুডেন্স এবং ফরেন্সিক ডেন্টিস্ট্রির উপর আরও অনেক ইউনিট। উপরন্তু, আমাদের পেশায় কিন্তু অধিকাংশ মেডিক্যাল চিকিৎসকের মত থিওরি শিখে শুধু প্রেসক্রিপশন লিখে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার মত অবকাশও নাই! সবই হাতের কাজ। সেইজন্য প্রয়োজন প্রচন্ডরকমের অনুশীলন। স্বভাবতই সেই চাহিদা মিটানোর জন্য দরকার পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় এবং সেই কারণেই অতিসম্প্রতি বাংলাদেশে বি.ডি.এস. [ব্যাচেলার অফ ডেন্ট্যাল সার্জারি] কোর্সের মেয়াদ ৪বছর থেকে বাড়িয়ে ৫বছর করা হয়েছে। বাস্তবে মাত্র ৪বছরে আমাদের পড়াশুনার মাত্রা ছিলো অনেক বেশী! নতুন ব্যবস্থার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ডেন্ট্যাল স্কুলগুলার মত আমাদের দেশেও অন্তত সমাপনী বর্ষে ছাত্রছাত্রীরা নির্বিঘ্নে ক্লিনিক্যাল কম্পোনেন্টের উপর আরও বেশী মনোযোগ দিতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। পুঁথিগত বিদ্যা এবং বাস্তবে তার প্রয়োগ নিশ্চিত করলে পেশার মান বাড়বে বৈ কমবে না। আল্লাহ্‌র কাছে হাজার শোকর, যে আমাদের সময় যে ঘাটতিটুকু ছিলো সেটা আমরা বিদেশে এসে আবারও স্কুলে পড়াশুনা করে মিটিয়ে ফেলতে পেরেছি।
বলাই বাহুল্য যে আমাদের পেশায় ফিলিং, ডেঞ্চার, সিমেন্ট ছাড়াও ব্যবহৃত যাবতীয় জিনিস এবং যন্ত্রপাতি মূলত ২টা বিষয়ের উপর নির্ভরশীল এবং সেগুলা হলো রসায়নশাস্ত্র [কেমিস্ট্রি] এবং পদার্থবিদ্যা [ফিজিক্স]। এমন কোন বস্তু নাই যার জন্য আমরা পৃথকভাবে ‘ডেন্ট্যাল কেমিস্ট্রি এন্ড মেটিরিয়্যালস’-এর মাধ্যমে রসায়নশাস্ত্রের চর্চা করি না! উদাহরণস্বরূপ সামান্য মাউথ ওয়াশ ও টুথপেস্ট, কিংবা এন্ডোডোন্টিক্সের রুট ক্যানাল ট্রিটমেন্ট-এ ব্যবহৃত ইরিগ্যান্ট সলিউশন থেকে শুরু করে গাটা পার্কা [কেউ কেউ বলে থাকেন ‘পার্চা’], এমনকি সীলার, রুট ক্যানাল মেডিকামেন্ট, কীলেটিং এজেন্ট [Chelating Agent], কম্পোজিট রেজিন ফিলিং-এর জন্য এচেন্ট, বন্ডিং, ক্যাটালিস্টের মাধ্যমে লাইট-কিওরিং, ডেন্ট্যাল কাস্টিং ও সেডারিং [Soldering] — এই সবই রাসায়নিক গুনগত মান এবং প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে আমাদেরকে নির্বাচন করতে হয়। একই কথা প্রযোজ্য অন্যান্য ফিলিং ম্যাটেরিয়্যাল বা ডেঞ্চার ম্যাটিরিয়্যালের ক্ষেত্রেও।
এই ব্যাপারে একটা গল্প না বললেই না! আমি তখন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অফ পেন্সিল্ভেনিয়া – গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ এডুকেশনে টীচিং, লার্নিং, এন্ড কারিকুলাম-এর উপর পড়াশুনা করছি। এক সেমেস্টারে ক্লাসে এসে জানতে পারলাম যে আমাদের শ্রেণীকক্ষে নতুন ওভারহেড প্রোজেক্টার ইন্সটল করা হবে। অতএব, সেদিন আমাদের ক্লাস অন্য কোন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু সামান্য অব্যবস্থাপনার কারণে সেদিন স্কুলে কোন কক্ষ আমাদের জন্য বরাদ্দ হয়নি। তড়িঘড়ি করে আমাদেরকে পাঠানো হলো রাস্তার অন্য পারে কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে। সেদিন আমরা যেন সতীনের ৩নম্বর বাচ্চা! সোজা নিয়ে ঢুকানো হলো বেইসমেন্টের একটা নির্জন কোণার এক কক্ষে। কিন্তু আমি এবং আমার পাগলামি! তাই কোথায় যাচ্ছি, সেই পথের প্রতিটা বিষয় লক্ষ্য করছি। পড়াশুনার সুবাদে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু বিভাগে আমি বিচরণ করেছি। কিন্তু সেদিন প্রথম ‘হল অফ ফেইম’-এর আদলে তৈরি ‘ওয়াল অফ ফেইম’ দেখেছিলাম! আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স এবং মেডিসিন বিভাগের বহু বিজ্ঞজন আজ পর্যন্ত নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন। শুধুমাত্র কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টেই আছেন তেমন জীবিত এবং মৃত ১০/১২জন। তাঁদের নাম এবং ছবি সম্বলিত সংক্ষিপ্ত জীবনী আলোকিত করে আছে সেই ‘ওয়াল অফ ফেইম’।
ব্যাপারটা দেখে বেশ অভিভূত হলেও তেমন স্মরণীয় ছিলো না। কিন্তু কিছুদিন পর আমার কাছে চিকিৎসা নিতে হাজির হলেন তাঁদের মধ্যেই নোবেল লরিয়েট ড. আরউইন অ্যালেন রোজ। রসায়নবিদ [এবং বায়োলজিস্ট] বিধায় সব বস্তুর রাসায়নিক গুণ তাঁর নখদর্পণে! আমি যে সিমেন্ট বা ফিলিং ম্যাটেরিয়্যালই ব্যবহার করতে যাই, সেটার উপরেই উনি পড়া ধরা শুরু করলেন! :-/ আমি কোনমতে স্মৃতি হাতড়ে উত্তর দিতে লাগলাম। দ্বিতীয়দিন উনি আরও বেশী প্রস্তুত হয়ে আসলেন। ডেঞ্চারে ব্যবহৃত এক্রিলিক — পলিমার, মনোমারের রাসায়নিক গঠণ, কিভাবে পোরোসিটি প্রিভেন্ট করতে হবে, কোন ধরণের রাসায়নিক বিক্রিয়া, জিঙ্ক ফসফেট সিমেন্টে ক্যাটালিস্ট কোনটা, রাসায়নিক বিক্রিয়া কোন ধরণের এবং মিশানোর সময় কি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সহ যাবতীয় প্রশ্ন! :O ডেঞ্চার বেইসের মেট্যালিক কম্পোজিশন বলার পর প্রতিটা উপাদানের ভুমিকা কি সেটাও আমি কোনমতে বলে ফেললাম। যেটুকুও সেদিন পেরেছি, সেটা তখন চর্চা ছিলো বলে সম্ভব হয়েছে, এখন আমি নিশ্চিত যে তার অনেক তথ্যই মনে করতে পারবো না। যাই হোক, আমি অবলীলায় উত্তর দিয়ে যাচ্ছি দেখে উনি মুচকি হাসি দিয়ে আরও ধূর্ত বুদ্ধি প্রয়োগ করলেন। 😛 ক্রোমিয়াম, নিকেল, আর স্টেইনলেস স্টীলের শতকরা ভাগ উল্টে দিলে কি হবে? এবার আমি হার মানলাম। 🙁 উনি তৃপ্তির হাসি দিয়ে বিদায় হলেন। হাজার হোক, তিনি হলেন সেই বিষয়ে ওস্তাদ। তাঁর সাথে কি জ্ঞানে পারা যায়? 🙂
এইতো গেলো ডেন্টিস্ট্রিতে রসায়নবিদ্যার প্রয়োগের মাত্র কয়েকটা নমুনা। আর বেশী বলে বিরক্ত করবো না। কিন্তু আমাদের পড়াশুনার ব্যাপকতা নিয়ে এখনও অনেক কথা বলা হয়নি! এখন আসি এই পেশায় পদার্থবিদ্যার প্রয়োগের কথায়। এন্ডোডন্টিক্সে ইরিগ্যান্ট সলিউশন কিভাবে পুষ করলে ব্যাকওয়ার্ড ফ্লো হবে এবং এপেক্স দিয়ে এক্সপালশন হবে না, সিমেন্টেশনে সেটিং স্ট্রেংথের সাথে ফ্রিকশন্যাল ফোর্স কিভাবে জড়িত, একইভাবে ক্রাউন-ব্রীজ প্রিপারেশনে টেপার এবং প্রিপারেশনের হাইটের সাথে ফ্রিকশন্যাল ফোর্স / রিটেনশন কিভাবে উঠানামা করবে, সামান্য ফিলিং, অনলে বা ইনলে-র ওয়াল কোন অ্যাঙ্গলে তৈরি করলে রিটেনশন এবং স্ট্যাবিলিটি বাড়বে, অথবা ডেঞ্চারের জন্য গাইড প্লেইন, প্যাথ অফ ইন্সারশন, প্যাথ অফ ড্র, রিটেন্টিভ আর্ম, রেসিপ্রোকেটিং আর্ম — এই সবই কিন্তু ফিজিক্স-নির্ভর মাপ এবং প্রয়োগ শিখায়! সার্ভেয়িং-এর প্রয়োজনীয়তা সেই কারণেই। ক্যান্টিলেভার ব্রীজে বা ডেঞ্চারেও কিভাবে টর্ক [Torque] মোকাবেলা করতে হবে, হ্যান্ডপিস আর ট্রাইচ্যুরেটার কত আর.পি.এম.-এ ঘুরবে, কনডেনসার সাইজ আর প্রেসার কতটুকু হওয়া দরকার, আল্ট্রাসোনিকেটারের কার্যপদ্ধতি — এর সবকিছুই কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত!
আরও ব্যাপকভাবে বলতে গেলে কার্ভ অফ স্পী, কার্ভ অফ উইলসন এবং অক্লুস্যাল প্লেইনের উপর ভিত্তি করে প্রতিটা দাঁতের এলাইন্মেন্ট কিভাবে হবে, কিভাবে লং এক্সিস নির্ধারণ করতে হবে, ভার্টিক্যাল ডাইমেনশনের মাধ্যমে কিভাবে ম্যাস্টিকেটরি ফোর্স ম্যাক্সিমাইজ করা যাবে, সামান্য দাঁত তোলাতেও কিভাবে ফালক্রাম ব্যবহার করতে হবে, হুইল অ্যান্ড এক্সেল প্রিন্সিপল ব্যবহার করে এলিভেট করতে হবে, অর্থডোন্টিক্সে মোলার আপরাইটিং, টিপিং, বডিলি মুভমেন্ট, প্যালাটাল এক্সপানশন, কিংবা হেড গীয়ার বা ইনভিজিলাইনের ব্যবহারও পদার্থবিদ্যার উপর ভিত্তি করেই আবিষ্কার এবং প্রয়োগ করা হয়েছে। সেইক্ষেত্রে গ্রোথ / ট্রিটমেন্ট রেজাল্ট প্রেডিকশনও কিন্তু কি ধরণের ফোর্স প্রয়োগ করে ম্যানিপুলেট করা যায়, সেগুলাই শেখায়। এর সাথে সাথে আনুষঙ্গিক আরও বিষয়, যেমন পেন গ্রাস্প, মডিফাইড পেন গ্রাস্প এবং পাম অ্যান্ড থাম্ব গ্রাস্পের মত ইন্সট্রুমেন্ট হোল্ডিং টেকনিক চলে আসে। অতএব, বলার অপেক্ষা রাখে না, যে চিকিৎসাবিজ্ঞানের জ্ঞানের বাহিরেও আমাদের পেশা রসায়নশাস্ত্র এবং পদার্থবিদ্যার ব্যাপক এবং বাস্তবিক প্রয়োগসমৃদ্ধ। বলা বাহুল্য, যে দন্তচিকিৎসকগোষ্ঠী এই বিষয়গুলা শুধু প্রয়োগই করেন না, তাদেরকে এই তত্ত্ব এবং তথ্য ব্যাপকভাবে পড়াশুনা করেই ডিগ্রী অর্জন করতে হয়।
এইক্ষেত্রে আমার এক শিক্ষকের কথা উল্লেখ না করে পারছি না। প্রায় সত্তর বছর বয়স্ক ডা. রবার্ট টিসোটের মাথাভর্তি টাক আর সাদা দাঁড়ি। এইজন্য তাঁকে আমরা ডাকতাম ‘পাপা স্মার্ফ’। দন্তচিকিৎসকের পাশাপাশি উনি একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারও ছিলেন। সেইজন্য যে কোনরকম পরিস্থিতিতে উনি ফিজিক্স-নির্ভর স্ট্রাকচার‍্যাল ডিজাইন করে ক্রাউন-ব্রীজ বানিয়ে ফেলতেন এবং আশ্চর্যজনকভাবে সেটা টিকে যেতো কম করে হলেও ১০/১৫ বছর! 🙂 আসলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই বিশেষ শাখায় এইরকম জ্ঞান কাজে লাগানো শিখতে লেগে যায় অনেক সময়। কিন্তু একবার পারদর্শী হয়ে উঠলে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কোন ব্যাপারই না!
এন্ডোডন্টিক্সের অন্তর্ভুক্ত মাইক্রোস্কোপিক সার্জারিগুলার কথা তো এখনও উল্লেখই করিনি! ওরাল সার্জিক্যাল প্রসিডিওরগুলা অথবা পেরিওডন্ট্যাল সার্জারিও যে কত ব্যাপক, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না! আর এই স্বল্প পরিসরে সেটার পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যাপ্রদান করাও সম্ভব না। মেডিসিনের অন্যান্য শাখার মত থ্রী-ডি ইমেজিং, কিংবা থ্রী-ডি প্রিন্টিং টেকনোলজীও আমাদের পেশাতে ব্যবহৃত হচ্ছে নৈমিত্তিকভাবে। এছাড়াও কিন্তু আমরা কিছু আর্টিস্টিক কাজও করে থাকি। রঙের নির্বাচনে আর্টিস্টদের মতই আমাদেরকে হিউ, ক্রোমা, এবং ভ্যালু নির্ধারণ করতে হয়। নীচে সংক্ষেপে বিবরণ দেওয়া একটা লিঙ্ক দিলাম। ইচ্ছা হলে দেখতে পারেন। এছাড়াও আমাদের কাজে সিমেট্রি, শ্যাডো এফেক্ট, ট্র্যাঞ্জিশন লাইন এফেক্ট এবং ভ্যারিয়েবল প্লেইনের বহুবিধ ব্যবহার আছে। সিমেট্রি না থাকলে সামান্য গাড়ি নির্বাচনের ক্ষেত্রেও অঘটন ঘটে যেতে পারে। যদিও আজকাল বলা হচ্ছে যে এসিমেট্রিক্যালি প্লেইসড থ্রী-ডোর গাড়িও নাকি এখন একটা ফ্যাশন স্টেটমেন্ট! কিন্তু যে কোন আনাড়িও বুঝে যে নিজের চেহারা বা হাসির ব্যাপারে এসিমেট্রি কতটুকু গ্রহণযোগ্য হতে পারে! :-/
এখানে বলা বাহুল্য, যে আমাদের পেশায় ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি অনায়াসে চিকিৎসাশাস্ত্রের অন্য যে কোন শাখাকে হার মানাবে। সামান্য ফিলিং করা থেকে শুরু করে অন্য যে কোন কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত ছোটবড় যন্ত্রপাতির সংখ্যা অগণিত এবং সেগুলা বিশেষভাবে ব্যয়বহুল। ল্যাবরেটরিতে পাঠিয়ে ক্রাউন, ব্রীজ, বা ডেঞ্চার ইত্যাদি বানানোর খরচও কম না! সেইজন্য আমাদের পড়াশুনার খরচ থেকে শুরু করে, ক্লিনিক পরিচালনা করাসহ বিজনেসের ভাষায় যাকে বলা হয় ‘ওভারহেড কস্ট’ অনেক বেশী। নীচে সামান্য একটা উদাহরণ দিই। 🙂 আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের [ইউনিভার্সিটি অফ পেন্সিল্ভেনিয়া] মেডিক্যাল এবং ডেন্ট্যাল স্কুলে পড়াশুনা করার বাৎসরিক খরচ কত সেটার লিঙ্ক অন্তর্ভুক্ত করলাম। যারা এই বিশ্ববিদ্যালইয়ের সাথে পরিচিত নন, তাদের জন্য সংক্ষিপ্তভাবে বলছি, যে এটা যুক্তরাষ্ট্রের তথা পুরা বিশ্বের বহুল প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এবং এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন বিদ্যুতের আবিষ্কারক বেঞ্জামিন ফ্র্যাঙ্কলিন। যাই হোক, লিঙ্ক দু’টায় খুব সহজেই দেখতে পাবেন যে ডেন্ট্যাল বা দন্তচিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াশুনা করার বাৎসরিক খরচ সাধারণ চিকিৎসাশাস্ত্রের পড়াশুনার খরচের চেয়ে বহুগুণে বেশী! তুলনামূলকভাবে চিকিৎসাশাস্ত্রের এই শাখা আরও বেশী প্রতিযোগিতামূলক বিধায় যুক্তরাষ্ট্রে বিদেশ থেকে এসে মেডিক্যাল চিকিৎসকরা শুধুমাত্র কয়েকটা বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই বেতন বা ভাতাসহ রেসিডেন্সী ট্রেনিং শুরু করে দিতে পারেন। কিন্তু দন্তচিকিৎসকের ক্ষেত্রে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়াই যথেষ্ট নয়। তাদেরকে আবারও স্কুলে পড়াশুনা করে বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হয়। এর আগে রেসিডেন্সীও নাই। এর কারণ হলো, যে এই বিষয়টাকে যতটুকু সহজ মনে করা হয়, আসলে ততটুকু সহজ বা ফেলনাও নয়। 🙂
সমস্যা হলো, যে দেশের মানুষ একথাগুলা জানে না। শুধু তাই না; আমরা নিজেরাই নিজেদের পেশা যে কতটুকু উন্নত সেটা ঠাহর করার মত জ্ঞান রাখি না। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা অসম্পূর্ণ এবং অসংলগ্ন হওয়ায় আমরা বুঝতেই পারি না, যে আমাদের পেশা কতগুলা স্পেশ্যাল্টি সাবজেক্টের সমন্বয়ে গঠিত! আমাদেরকে যা বুঝানো হয়, আমরা তাই বুঝি। আমাদের মনে বদ্ধমূল ধারণা দেওয়া হয়েছে, যে আমরা মূলত মেডিক্যাল চিকিৎসকদের সহকারী; অর্থাৎ, আমরা হলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর চিকিৎসক। সেই কাজের জন্য তো নার্সগোষ্ঠী আছেই! একমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়া দুনিয়ার আর কোন পেশায় রসায়নশাস্ত্র এবং পদার্থবিদ্যার এতো ব্যাপক প্রয়োগ আছে তা’ কি বলতে পারবেন? অতএব, নতুন প্রজন্মের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে যে তোমরা নিজেদের আসল পোটেনশিয়্যাল বুঝতে শিখো। তোমরা কয়টা চেম্বার দিলে, কত দামী গাড়ি কিনলে আর কতবার বিদেশে ঘুরলে, সেই প্রদর্শনী করে পেশার ন্যায্য মান অর্জন হবে না। বরং, আমাদের জ্ঞান এবং দক্ষতা কিসে এবং কেন আমাদের পেশা অন্যান্য পেশার থেকে পৃথক এবং উন্নত, তার যথাযথ ব্যাখ্যা দেওয়ার মত ক্ষমতা অর্জন করো।
এখানে আরেকটা কথা উল্লেখযোগ্য। আমাদের দেশে সাধারণত দন্তচিকিৎসকদের প্রতি অবজ্ঞা নিজ ঘরেই প্রথমে শুরু হয়। একই পরিবারে মেডিক্যাল চিকিৎসক এবং ডেন্ট্যাল চিকিৎসক থাকলে তো কথাই নাই! দন্তচিকিৎসার ব্যাপারে যাবতীয় মন্তব্য দেওয়া তাদের পক্ষে জায়েজ। অথচ তারা কিন্তু তাদের নিজেদের পেশায় অন্যান্য শাখার চিকিৎসকের কোন বিষয়ে নাক গলান না! আবার প্রত্যুত্তরে পরিবারের সদস্যের মঙ্গলার্থে দন্তচিকিৎসকও যদি অন্যান্য চিকিৎসার ব্যাপারে কোন মূল্যবান তথ্য সরবরাহ করেন বা সাধারণ মন্তব্যও করেন, সেটা তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না! রোগীর নিজের অজ্ঞতা এবং অপেশাদারী মনোভাবের কারণ দর্শানো যায়। কিন্তু পেশাদারী মানুষের অপেশাদারিত্ব ব্যাখ্যা করা দুরূহ হয়ে পড়ে বৈকি! :-/
উদাহরণস্বরূপ আমার শাশুড়ির কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি। উনার ওরাল হেলথ খারাপ দেখে আমি সব দাঁত ফেলে দিয়ে কমপ্লিট ডেঞ্চার করার জন্য আমার প্রোফেশন্যাল অ্যাডভাইস দিলাম। কিন্তু দন্তচিকিৎসার ব্যাপারে আমার কথার উপর তার আস্থা হলো না। আমি বাদে আর সবার কাছ থেকে উনি পরামর্শ নিয়ে অন্য ক্লিনিকে গিয়ে করালেন পার্শিয়্যাল ডেঞ্চার। স্বভাবতই সেটা কার্যকরী হলো না। নড়বড়ে হওয়ায় গালে খোঁচা লাগতে শুরু করলো। কয়েকবার অ্যাডজাস্ট করেও লাভ হলো না দেখে আমি উপদেশ দিলাম যেন উনি সেটা আর ব্যবহার না করেন। কিন্তু আবারও আমার কথা উনার পছন্দ হলো না। আরও আড়াই বছর ব্যথার ঔষধ সেবন করে পরে গেলেন সেই ‘ইল ফিটিং ডেঞ্চার’। যতক্ষণে গিয়ে উনি আমার কথা শুনলেন ততদিনে উনার গালে স্কোয়ামাস সেল কার্সিনোমা [ক্যান্সার] হয়ে গিয়েছে।  সার্জারি এবং রেডিয়েশন থেরাপি করেও আর লাভ হয়নি। ২০১২ সালে ডায়াগনোসিসের ৬ মাসের মধ্যে উনি মৃত্যুবরণ করেন। এরকম বহু অভিজ্ঞতা আমার হয়েছে, যেখানে আমারই পেশার ব্যাপারে জমিদার থেকে শুরু করে জমাদার — সবাই বেশী জানেন বলেই ভাব দেখিয়েছেন বা দেখিয়ে থাকেন।  যাই হোক, কথা বাড়ালেই তিক্ততা বাড়ে। তবে এটুকু বলবো, যে নিশ্চয়ই স্কুলে গিয়ে পড়াশুনা করে দন্তচিকিৎসক হওয়ার কোন মূল্য আছে! আর যদি বুঝতাম সেই শিক্ষা পানির দরে আসে!

এখানে জেনে রাখা ভালো, যে যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু একজন দন্তচিকিৎসক অনেকক্ষেত্রেই একজন মেডিক্যাল চিকিৎসকের চেয়েও বেশী সমাদৃত হয়ে থাকেন! উপরন্তু, এখানে অফিশিয়্যালি এই পেশাকে বলা হয় ‘ডেন্টাল মেডিসিন’ — শুধু ‘ডেন্টিস্ট্রি’ না! এই সূক্ষ্ম ব্যাপারগুলা নিয়ে আমরা ভাবি না বলেই আমাদের দেশে পদ্ধতিগতভাবে এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে অনেক ঘাটতি থেকে যায়; আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় আমাদের পেশা। আগে বহুবার আলাপ করেছি যে শুধুমাত্র শল্যচিকিৎসক ছাড়া বাকি মেডিক্যাল চিকিৎসকদের পরিশ্রমের ধরণ দন্তচিকিৎসকদের পরিশ্রমের ধরণ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এবং বহুমাত্রায় কম। একজন দন্তচিকিৎসককে কঠোর কায়িক পরিশ্রম করতে হয়। উপরন্তু ব্যবহৃত উপকরণ এবং যন্ত্রপাতি তৈরির প্রযুক্তিগত খরচও গগনচুম্বী। সেই কারণেই তাদের পারিশ্রমিকও সমানুপাতিক হারে ঊর্ধ্বমুখী। পেশা হিসাবে উচ্চ মর্যাদা কিন্তু সেখানেই সীমাবদ্ধ না! বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত অনেক দন্তচিকিৎসক নিয়মিতভাবে সেখানে মেডিক্যাল এবং ডেন্ট্যাল, এই দুই অনুষদেই অধিষ্ঠিত থাকেন। আমাদের শিক্ষক প্রয়াত ডা. জে সীবার্ট ছিলেন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের দন্তচিকিৎসক। তাঁর দাপট দেখলে অবাক হতাম! পরবর্তীতে অবশ্য দুঃখজনকভাবে উনি লু-গেহরিগস ডিজিজ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এমন আরও অনেক দন্তচিকিৎসক আছেন, যারা পুরা চিকিৎসাশাস্ত্রে গুরুজন বলে স্বীকৃত। তেমনই একজন হলেন ডা. এলিয়ট হারশ। তাঁর গবেষণায় উঠাবসা করে এখানের পুরা চিকিৎসক সমাজ এবং ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি। ডা. পীটার কুইন হাঁটু বা হিপ জয়েন্টের মত টি.এম.জে. [Temporomandibular Joint]-এর ইমপ্ল্যান্ট আবিষ্কার করেছেন। অতএব, সবই নির্ভর করছে পাস করার পর কে কোন বিশেষ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে চায় এবং কতটুকু উচ্চতর প্রশিক্ষণ লাভ করছে, তার উপর। মনে রাখা দরকার, যে — ‘Sky is the limit.’
আরও জেনে রাখা ভালো, যে আমরা যে ক্যারিজ বা ডেন্ট্যাল ডিকে-র জন্য জি.ভি. ব্ল্যাক-এর ক্লাসিফিকেশন ব্যবহার করি, সেই ডা. জি.ভি. ব্ল্যাক কিন্তু একজন মেডিক্যাল এবং ডেন্ট্যাল চিকিৎসক ছিলেন! বাংলাদেশে আমাদের পেশার জনক শ্রদ্ধেয় ডা. আবু হায়দার সাজেদুর রহমানও কিন্তু মেডিক্যাল এবং ডেন্ট্যাল চিকিৎসক, দু’টাই ছিলেন। হয়তো আপনারা প্রশ্ন করতে পারেন, যে সেটা কি করে সম্ভব? সেইজন্যই আমি এখানে আরেকটা কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই।
আগেই বলেছি যে আমরা কোন বিষয়ে স্পেশ্যালাইজ করবো, সেটার উপরেই আমাদের সার্বিক জ্ঞান নির্ভর করছে। যুক্তরাষ্ট্রে কিন্তু একজন ওরাল সার্জনকে তাদের জ্ঞানের পরিধির কারণে এতোই সমীহ করা হয়, যে তিনি এখানের ডেন্ট্যাল ডিগ্রী [ডি.ডি.এস. (ডক্টর অফ ডেন্ট্যাল সার্জারি) বা ডি.এম.ডি. (ডক্টর অফ ডেন্ট্যাল মেডিসিন)] পাস করে ভাল কোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওরাল সার্জারিতে স্পেশ্যালাইজেশন করলে পরীক্ষা দিয়ে সরাসরি এম.ডি. (ডক্টর অফ মেডিসিন), অর্থাৎ বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এম.বি.বি.এস. ডিগ্রীও অর্জন করতে পারেন! আর হ্যাঁ, একজন ওরাল সার্জন, যিনি কিনা আসলে একজন দন্তচিকিৎসক, কিন্ত আপনাদের সেই ‘মহামূল্যবান’ স্টেথোস্কোপ ব্যবহার করেন!
পক্ষান্তরে, একজন মেডিক্যাল চিকিৎসক কিন্তু কোনদিনও পরীক্ষা দিলেও সরাসরি ডেন্ট্যাল ডিগ্রী পাবেন না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি আবার ডেন্ট্যাল স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা না করছেন! 🙂 এর কারণ হলো, যে আসলে আমরা তাদের থেকে পদার্থবিদ্যা এবং রসায়নশাস্ত্রসহ আরও অনেক টেকনিক্যাল / প্র্যাক্টিক্যাল বিদ্যা বেশী পরিমাণে শিখি। আমাদের দেশে এইচ.এস.সি. পরীক্ষা পাস করার পর চিকিৎসকদের আর ঐসব বিষয়ে কোন চর্চাই থাকে না। আবার আমরা যে হাতের কাজ শিখি, সেগুলা আমাদের পেশার জন্য একচেটিয়া জ্ঞান, যা কিনা চোটি পড়ে বা ইউটিউবে ভিডিও টিউটরিয়্যাল দেখে শিখা সম্ভব না! 😀 সুতরাং, এটা বুঝতে হবে যে কেউ আমাদেরকে এই ব্যাপারগুলা চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দিবে না। কারণ, কেউ জেনেশুনে চাইবে না যে সমাজে তাদের ‘আপাত’ উচ্চাবস্থান ফসকে যাক! যতদিন জনগণ এইসব ব্যাপার না বুঝে এবং জানতে না পারে, তা’তেই তাদের মঙ্গল! 😉 আর আমরা নিজেরাই যদি না বুঝি, তাহলে তো আরও সোনায় সোহাগা! অতএব, অ–নে–ক হয়েছে। Let us NOT be the second one anymore. Instead, let us be the ONLY one that captures most of the fruits of Medicine along with the other fields that we specialize in!
সবশেষে বাংলাদেশে আমাদের পেশার কর্ণধার অধ্যক্ষ / অধ্যক্ষা এবং ডেন্ট্যাল সোসাইটির কাছে অনুরোধ থাকবে, যে এখন যেহেতু কারিকুলাম ৫বছর ব্যাপী হবে, সেহেতু সবরকম চক্রান্তকে উপেক্ষা করে বি.ডি.এস.-এর বর্তমান সিলেবাসে কোনরকম কাটছাঁট না করে পারলে আরেকটু বাড়িয়ে এথিক্স, জুরিস্প্রুডেন্স এবং ফরেন্সিক ডেন্টিস্ট্রির উপর কিছু লেকচার ক্লাস সংযুক্ত করেন। সেই সাথে আমাদের দেশের ওরাল সার্জনরা যেন তাদের ট্রেইনিং শেষ করে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে এম.বি.বি.এস. ডিগ্রী অর্জনেরও সুযোগ লাভ করেন সেই বন্দোবস্ত করেন। আমাদের পেশার পথিকৃৎরা আমাদেরকে পথের সূচনা দেখিয়েছেন। এখন বুদ্ধিমত্তার সাথে পেশার উন্নতি এবং অগ্রগতি নিশ্চিত করার দায়িত্ব আমাদের সবার। তবে আমরা যারা প্রবাসে আছি, তারা আপনাদেরকে শুধুমাত্র তথ্য সরবরাহ করতে পারবো। প্রকৃতপক্ষে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আপনাদেরই। আজ থেকে হয়তো ২০বছর পর আমার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। তখন অনেকের মত আমি নিজেও হয়তো সেই পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ কিংবা নীচু মানের ডেন্টিস্ট হিসাবে পরিগণিত হবো। কিন্তু সেই পরাজয়ে কোন হীনতা থাকবে না; বরং থাকবে নিজের পেশাকে উন্নত অবস্থানে আসীন দেখার পরিতৃপ্তি। আজ থেকে শুরু হলো আমার সেই হার মানার জন্য অপেক্ষার পালা।
***যুক্তরাষ্ট্রে গাড়ির নম্বর প্লেটে সংখ্যার বদলে লেখা জুড়ে দেওয়ার এক প্রবণতা আছে। সেগুলার ছবি সংগ্রহ করা আমার অনেকগুলা শখের মধ্যে একটা। সেই সংগ্রহ থেকেই আজকের লেখার সাথে মিলিয়ে ২টা ছবি জুড়ে দিলাম।

13934990_10154402316264414_5042800922475222587_n

Ishrat Jahan Mouri

Institution : University dental college Working as feature writer bdnews24.com Memeber at DOridro charity foundation

6 thoughts on “আজকের ভাবনা: দন্তচিকিৎসাশাস্ত্রে ভবিষ্যৎ দর্শন

  1. অভিনন্দন ! ফাহমিদা ৷ দারুন মনোমুগ্ধকর একটা লিখা, অনেক কিছু নতুন করে জানলাম ৷ সংগ্রহে রাখার মতো লিখা ৷

  2. ধন্যবাদ ইব্রাহীম। আসলে অনেকদিন ধরেই এই বিষয়ে লেখার ইচ্ছা ছিলো। তোমরা তো জানো যে আমার দুই ভাই মেডিক্যাল ডাক্তার। তাই পারিবারিক যে অভিজ্ঞতার কথা লিখেছি, সেটা আমার জন্য নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশুনা করে পেশায় নিয়োজিত হয়ে আস্তে আস্তে দেখা শুরু করলাম, যে এই দেশের আর বাংলাদেশের অবস্থায় আকাশ-পাতাল তফাৎ। এখানে ডেন্টিস্টদের সামাজিক এবং পেশাগত অবস্থান অনেক সুদৃঢ়। তবুও বারবার পরিবারেই তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপারে অপ্রিয় ঘটনা ঘটতেই লাগলো, যেটা চূড়ান্ত রূপ নিলো ২০১২ সালে। মারা যাওয়ার আগে অমার শ্বাশুড়ি বারবার একটা কথাই বলেছিলেন: ‘কেন যে তোমার কথা তখন শুনলাম না!’ এর চেয়ে চরম উদাহরণ ার কি হতে পারে? কিন্তু আমি এটাও বুঝি, যে দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গী না বদলে কিছুই করা যাবে না। শুধু তাই না, আমরা নিজেরাই যদি নিজেদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে না শিখি, তাহলে কি করে চলে? সেইজন্যই আমার এই প্রচেষ্টা। দেখা যাক কি হয়! অরিজিন্যাল লেখাটা আমার ওয়ালে আরও এডিট করেছি। চাইলে দেখতে পারো। নীচে লিঙ্ক দিলাম। আবারও কষ্ট করে পড়ার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

    https://www.facebook.com/notes/fahmida-hussain/আজকের-ভাবনা-দন্তচিকিৎসাশাস্ত্রে-ভবিষ্যৎ-দর্শন/10154402233919414

  3. সংশোধনঃ
    মারা যাওয়ার আগে আমার শ্বাশুড়ি বারবার একটা কথাই বলেছিলেন: ‘কেন যে তোমার কথা তখন শুনলাম না!’ এর চেয়ে চরম উদাহরণ আর কি হতে পারে?

  4. বি.ডি.এস 1st yr পড়ি।জানতাম বাইরের দেশে ডেন্টিস্ট্রির কদর,কিন্তু বুজতামনা,বুজাইতেও পারতামনা।আপনার পোস্টটি অনেক তথ্যবহুল ও বাস্তবসম্মত।এখন পোস্টটি দেখিয়েওবলতে পারবো felling proud to be a #Dentist.(Doctor+Engineer+Artist)?
    পরিবর্তন হচ্ছে,পরিবর্তন চলবেই।☺

  5. Apa apnar likhata pore onek valo laglo. Nijeke notun kore chinlum ! Very rich writing, and I do follow you as well as your advice to reach my goal. Thanks.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ডিজি হওয়ায় অভিনন্দন

Sun Aug 21 , 2016
সদ্যপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয় নোটিশ অনুসারে, প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ স্যার কে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আজ রবিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নোটিশটি প্রকাশ করা হয়। প্রফেসর আবুল কালাম আজাদ এর পূর্বে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) এবং পরিচালক, MIS পদে নিযুক্ত ছিলেন। খুব স্বল্প সময়েই প্রফেসর আজাদ সারাদেশের […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo