৩১ জানুয়ারি, ২০২০
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে যতটুকু ব্যবস্থা গ্রহন সম্ভব তা নেয়া হয়েছে। কেউ করোনা ভাইরাস বহন করছে কিনা এটা এয়ারপোর্ট কিংবা স্থলবন্দরে বসে নির্ণয় করা সম্ভব নয় তবে এক্ষেত্রে অন্যান্য দেশে যে ব্যবস্থা গ্রহন করা হয় দেশেও তাই হচ্ছে। সন্দেহভাজনদের শারিরীক তাপমাত্রা নির্ণয়ই হচ্ছে প্রাথমিক স্ক্রিনিং পদ্ধতি। যদি কেউ অসুস্থ বোধ করেন এবং রোগ লক্ষণ করোনা ভাইরাস আক্রান্তদের মত হয় সেক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়ের জন্য মহাখালীস্থ আইইডিসিআর এ পিসিআর ভিত্তিক প্যান করোনা ভাইরাস প্যানেল বসানো হয়েছে যা নতুন এবং পুরোনো সব ধরনের করোনা ভাইরাস নির্ণয় করতে পারে।
চীন থেকে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্তটি একজন সাধারন মানুষের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টিকারী মনে হলেও এ জন্য যতটুকু সতর্কতা নেয়া সম্ভব সবই করা হচ্ছে। যেহেতু সংক্রমনটি শুধুমাত্র চীন বা বাংলাদেশের বিষয় নয় এটা সারা পৃথিবীর বিষয়। এ কারনে চায়না থেকে চাইলেই যে কাউকে তার দেশে ফিরিয়ে নেয়া যায়না। চায়না তার নিজস্ব স্ক্রিনিং মেথড এর মাধ্যমে ভেরিফাই করেই জানায় যে কারা সুস্থ আছে এবং কাদের ফেরত নেয়া সম্ভব। চীনে আটকে পড়া বাংলাদেশী নাগরিকেরা কি অসহায় অবস্থায় আছেন সে বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবগত ছিলেন। দোকানপাট বন্ধ, খাবার সংকট, পানি সংকট, আতংক ইত্যাদি মিলিয়ে দুর্বিষহ অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা। তাই চীন যখন নিজস্ব ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে জানালো যে, প্রায় সাড়ে তিনশত বাংলাদেশী নাগরিককে ফিরিয়ে আনা সম্ভব যারা এই মুহুর্তে সুস্থ আছেন এবং সংক্রমণের সন্দেহমুক্ত আছেন তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত আদেশ দিলেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। বিগত ২৪ ঘন্টার মাঝে এ বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রনালয় বৈঠকের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে টিম গঠন করা হয়। সিদ্ধান্ত হয় যাদের ফিরিয়ে আনা হবে, অতিরিক্ত সতর্কতা হিসেবে তাদের সরাসরি আশকোনা হজ্ব ক্যাম্পে নিয়ে “আইসোলেশন” করে রাখা হবে ১৪ দিন (ভাইরাসটির ইনকিউবেশন পিরিয়ড)। এ সময়টিতে তারা কোথাও যেতে পারবেন না বা কেউ তাদের সাথে দেখা করতে পারবেনা। যে বিশেষ বিমানে তাদের আনা হচ্ছে সেই বিমান ও বিমানের ক্রুদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও উপকরণ দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আজ পররাষ্ট্র, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ এবং ত্রাণ ও দুর্যোগ্য ব্যবস্থাপনা মন্ত্রীগণ বিস্তারিত বলেছেন প্রেস ব্রিফিং এ। একই ভাবে অন্যান্য দেশও চীনে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে এনেছে বা আনছে বিশেষ বিমানে করে।
অনেকে বলছেন উহান করোনা ভাইরাস এর চিকিৎসা করার সক্ষমতা চীনের সবচেয়ে বেশি তাই তাদের চীনে রাখাই ঠিক ছিলো তারা ভুল ভাবছেন। এই ভাইরাসটির কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। ভাইরাস আক্রান্তরা শ্বাসকস্ট জনিত সমস্যায় ভোগেন এবং যাদের আগে থেকে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা আছে বা বয়স বেশি বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ আছে তারা বেশি খারাপ অবস্থায় পড়তে পারেন আক্রান্ত হলে। সেক্ষেত্রে আক্রান্তদের আইসিইউ সাপোর্ট লাগতে পারে যেখানে মূলত তাদের শ্বাসকস্টজনিত সমস্যা উত্তরণের জন্য মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশন সহ অন্যান্য সাপোর্ট প্রদান করা হয়৷ এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে ভালোভাবেই আছে। রোগ নির্ণয়, আইসোলেশন ও আইসিইউ সাপোর্ট এগুলোর যথাযথ ব্যবস্থা এদেশে আছে।
এরপরেও কি আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে এদেশে উহান করোনা ঢুকবে না? না, বলতে পারিনা। উন্নত দেশগুলো তাদের সর্বোচ্চ সতর্কতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও করোনা আটকাতে পারেনি। ফলে বাংলাদেশে করোনা কোনভাবেই ঢুকবেনা এ কথা হলফ করে বলা যায়না। আবার চীন থেকে বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে এবং কিছুদিন পরে যদি কোনো রোগীতে এই ভাইরাস শনাক্ত হয় এদেশে সেক্ষেত্রে এই দুই এ দুই এ চার মেলানো যাবে এমনটি ভাবাও অবান্তর। সুতরাং সরকার কি করছে, ভুল করছে না ঠিক করছে এ বিষয়টি নিয়ে সাধারন মানুষ হিসেবে আমরা অতিরিক্ত না ভেবে বরং কাজটি বিশেষজ্ঞদেরই করতে দেই এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অন্যান্য স্বাস্থ্য পরামর্শ এজেন্সির পরামর্শমত নিচের কাজগুলো সকলের করা কাম্য :
১) বারবার এলকোহলযুক্ত হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধোয়া ।
২) হাঁচি কাশি দেবার সময় কনুই বা টিস্যু দিয়ে মুখ ও নাক ঢেকে রাখা, টিস্যু সাথে সাথে নির্ধারত স্থানে ফেলা এবং হাত ধোয়া ।
৩) জ্বর, কাশি, শ্বাসকস্ট হলে মাস্ক ব্যবহার করা এবং চিকিৎসক এর সাথে দ্রুত যোগাযোগ করে নিজের যাতায়াত ইতিহাস ( traveling history) চিকিৎসককে জানানো ।
৪) কাঁচা বা আধা কাঁচা খাবার না খাওয়া ।
৫) মাস্ক ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার না করে সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করা, বিশেষ করে নিজে অসুস্থতা বোধ করলে।
উল্লেখ্য, বিগত বছর ডেংগুর প্রাদুর্ভাবে দেশের গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ সহ আপামর জনতার সচেতনতার ফলে এবং চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যবিভাগের সর্বস্তরের কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্মিলিত প্রয়াসে ভয়াবহতা সামলানো সম্ভব হয়েছিল।
এবারেও সবাই যার যার জায়গা থেকে দায়িত্বশীল হবেন বলেই প্রত্যাশা।
লেখা: ডা. মারুফুর রাহমান অপু
মেডিকেল অফিসার, সেন্টার ফর মেডিকেল বায়োটেকনোলজি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর