আপনার দেহগাড়ি ঠিক আছে তো………
ঢাকা বা দূরে যাবার আগে আমরা গাড়ি চেক করতে বলি, বিশেষ করে গাড়ির ব্রেক, চাকা, গাড়ির এয়ার ক্লিনার, ইঞ্জিন, মবিল কবে চেঞ্জ করা হয়েছে ইত্যাদি। এসব করার কারন, এই গাড়ি এত দূর যেতে পারবে কিনা? রাস্তায় বন্ধ হবে কিনা? ইত্যাদি ধারনা নেয়া। অবস্থা খারাপ হলে এই গাড়ি বাদ দেয়া হয় আর সমস্যাগুলো ঠিক করতে হয় দ্রুত। মানুষের শরীরটাও ওই গাড়ির মত। আপনাকে আপনার কিছু জিনিস সব সময় জানতে হবে, যদি ওগুলো সঠিক না থাকে তবে হঠাত করে খুব খারাপ পরিনতি এমনকি মৃত্যুও হতে পারে। নিজের শরীরের যে জিনিসগুলো সবসময় জানতে হবে-
১। উচ্চতা আর ওজনঃ মানুষের উচ্চতা অনুযায়ী ওজনের একটা সীমা থাকে। ওজন বেশি হলেই সব সমস্যার শুরু হয়। যেমন হাইপ্রেসার, ডায়াবেটিস, হার্টের অসুখ, লিভারের অসুখ, কোমড় আর হাঁটুতে ব্যাথা ইত্যাদি।
২. পেটের ও কোমরের মাপের অনুপাত: সোজা করে বলি, আপেলের অনেক বড় পেট আর কলার কোন পেট নেই। আমাদের পেট কলার মত হতে হবে। আপেল পেট হলে সমস্যার বীজ বোনা শুরু হয়।
৩. ব্লাডপ্রেসার: এটি অত্যান্ত জরুরী। ব্লাড প্রেসার নরমাল থাকলে বছরে এক দু বার মাপুন। তবে ঔষধের দোকান বা হাতুড়ে কারো কাছে না। প্রেসার একদুবার নরমাল মানে এইনা যে বাকি জীবনেও নরমাল থাকবে। যাদের হাইপ্রেসার আছে নিয়মিত ঔষধ খাবেন আর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মত ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন। হাইপ্রেসারের ঔষধ কখনই ডাক্তারের পরামরশ ছাড়া বন্ধ করবেন না, এতে মারাত্নক সমস্যা হতে পারে।
৪. ব্লাড সুগার বা ডায়াবেটিসের পরীক্ষা: আপনাকে অবশ্যই আপনার ব্লাড সুগার জানতে হবে। ব্লাড সুগার একদুবার নরমাল মানে এইনা যে বাকি জীবনেও নরমাল থাকবে। মাঝে মাঝে (বছরে একবার) ডায়াবেটিসের পরীক্ষা করুন। যাদের ডায়াবেটিস আছে নিয়মিত ঔষধ খাবেন আর নিয়মিত ডাক্তারের পরামর্শ মত ডাক্তারের সাথে দেখা করবেন। ডায়াবেটিসের ঔষধ কখনই ডাক্তারের পরামরশ ছাড়া বন্ধ করবেন না, এতে মারাত্নক সমস্যা হতে পারে।
৫. ক্রিয়েটিনিন বা কিডনির পরীক্ষা: কিডনি রোগের প্রাথমিক অবস্থায় কোন লক্ষন থাকে না, শুধুমাত্র পরীক্ষা করে নির্ণয় করা সম্ভব। মনে রাখবেন যখন কিডনী রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় তখন অনেক দেরী হয়ে যায়। তাই মাঝে মাঝে (বছরে একবার) কিডনির পরীক্ষা করুন।
৬. চর্বির পরীক্ষা: আমাদের রক্তে অনেক ধরনের চর্বি থাকে, কেউ ভালো, কেউ মন্দ। সেগুলোর একটা নির্দিষ্ট অনুপাত আছে, সেটা ঠিক না থাকলেই হার্টের অসুখ, স্ট্রোক হতে পারে।
৭. ইসিজি বা হার্টের পরীক্ষা: এটিও কিডনি পরীক্ষার মত (বছরে একবার) করা উচিত। কারণ ইসিজি করে অনেক হার্টের অসুখ প্রাথমিক অবস্থায় জানা যায়।
৮. লিভারের পরীক্ষা: এটিও মাঝে মাঝে করে দেখা উচিত।
৯. পেটের আল্ট্রাসনোগ্রাম: এই পরীক্ষা করে অনেক কিছু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, যেমন পিত্ত থলি, কিডনি ইত্যাদিতে কোন পাথর বা টিউমার আছে কিনা, পেটে পানি আছে কিনা ইত্যাদি।
উপরের সব জিনিসগুলো হল আপনার শরীরের ব্রেক, চাকা ইত্যাদি। এসব ভালো না থাকলে যে কোন সময় এ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে। তবে এগুলো একবার দুবার করলেই দায় শেষ না। সাধারনত শরীরে কোন সমস্যা না থাকলে বছরে অন্তত একবার এসব চেক করা উচিত। কোন সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের শরনাপন্ন হওয়া উচিত। আপনি বছরে একবার যেমন বেড়াতে যান, দুবার বা তিনবার ড্রেস কিনেন, দেহগাড়িকে চেক করাটাকে এমন রুটিন করে ফেলুন।আপনার গাড়ির যত্ন নিলেই গাড়ি ভালো থাকবে।
মরতে হবেই সবাইকে তবে অকালে মৃত্যু কোনভাবেই কাম্য নয়।
….
লেখকঃ ডা. রতিন মন্ডল
এফসিপিএস, মেডিসিন।