আজ ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮।
আপনার বাবা মা, আপনজন হাঁটুর ব্যথায় (অস্টিওআর্থ্রাইটিসে) কষ্ট পাচ্ছেন?
বয়সজনিত হাঁটুর ব্যথা চিকিৎসায় নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে পিআরপি থেরাপি।
চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির কাছে হার মানতে যাচ্ছে মানুষের আরো একটি অসহায়ত্ব, হাড়ক্ষয় জনিত হাঁটুর ব্যথা বা অস্টিওআর্থ্রাইটিস। প্লেটিলেট রিচ প্লাসমা বা পিআরপি থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসকেরা হাঁটু ব্যথার দীর্ঘস্থায়ী উপশম অর্জনে সক্ষম হয়েছেন। বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেইন মেডিসিন ইউনিট ২০১৬ সাল থেকে পিআরপি থেরাপি সাফল্যের সাথে প্রদান করছে। কেবল চিকিৎসাই নয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই নবতম সংযোজন অস্টিও আর্থ্রাইটিসে পিআরপি থেরাপির উপর অধ্যাপক একেএম আখতারুজ্জামান এর নেতৃত্বে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম গবেষণা পরিচালিত হয়।
পিআরপি থেরাপি কি?
হাঁটুর অস্থিসন্ধিতে প্লেটিলেট রিচ প্লাসমা বা পিআরপি ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। এর আগে রোগীর নিজ শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করে সেন্ট্রিফিউজ মেশিনের মাধ্যমে প্লেটিলেট রিচ প্লাসমা প্রস্তুত করা হয়।
পিআরপি থেরাপি কিভাবে কাজ করে?
রক্তকণিকা প্লেটিলেট মূলত রক্তজমাট বাধঁতে ভুমিকা রাখে। এছাড়া কোন কাঁটাছেড়া বা আঘাতে শরীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষতস্থানে প্লেটিলেট পৌঁছে বিভিন্ন গ্রোথ ফ্যাক্টর নিঃসরণ করে। এভাবে মানব দেহের সহজাত ক্ষয়পূরণ প্রক্রিয়ায় প্লেটিলেট অংশ নেয়। একারণে সাম্প্রতিককালে টেন্ডন, লিগামেন্ট ও অস্থিসন্ধির বিভিন্ন আঘাতে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে প্ল্যাটিলেট রিচ প্লাসমা ব্যবহৃত হয়।
পিআরপি কিভাবে তৈরি এবং প্রয়োগ করা হয়?
সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মত ১৮-২০ মিলি রক্ত সংগ্রহ করে সেন্ট্রিফিউজ মেশিনের মাধ্যমে লোহিত ও শ্বেত রক্তকণিকা থেকে প্লেটিলেট ও প্লাজমা আলাদা করা হয়। এরপর অস্টিওআর্থ্রাইটিক হাঁটুর ব্যথা স্থানে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে পিআরপি দেয়া হয়। থেরাপির ছয় সপ্তাহের মাঝে রোগীর হাঁটু ব্যথা কমে আসে এবং পূর্বের চেয়ে অধিক কর্মক্ষম হয়ে থাকে। যে সকল রোগীর ক্ষেত্রে পিআরপি কার্যকর হয় তাদের দুবার থেকে ছয়বার থেরাপি প্রয়োজন পরে। থেরাপির পর ফিজিক্যাল থেরাপি দেয়া হলে অধিকতর ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে থেরাপির পর সাধারণত এন্টিইনফ্ল্যামেটরি ড্রাগ সেবন করা থেকে বিরত থাকতে উপদেশ দেয়া হয়।
অস্টিওআর্থ্রাইটিসে পিআরপি প্রাথমিক চিকিৎসা নয়। অন্যান্য নিয়মিত চিকিৎসার পরেও যাদের ব্যথা থাকে তাদের জন্য পিআরপি হাঁটুতে স্টেরয়েড, হায়ালুরনিক এসিড ইঞ্জেকশন এমনকি হাঁটুর অস্থিসন্ধি প্রতিস্থাপনের বিকল্প হতে পারে।
দক্ষ পেইন ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞের অধীন পিআরপি চিকিৎসা নিরাপদ। তবে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে চিকিৎসার নূন্যতম ঝুঁকি যেমন সংক্রমণ, স্নায়ুর আঘাত, রক্তপাত ইত্যাদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেহেতু রোগীর নিজ দেহের রক্ত নিয়ে প্রক্রিয়াজাত করে পিআরপি থেরাপি দেয়া হয় সেহেতু এলার্জিক রিএকশন বা অন্যান্য সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকে।
পিআরপি থেরাপি কেবল অস্টিও আর্থ্রাইটিসেই নয়, লাম্বার ডিস্ক সম্পর্কিত ব্যথা, রোটেটর কাফ ইনজুরি, টেনিস এলবো, এংকেল স্প্রেইন, একিলিস টেন্ডিনাইটিস, প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস, কার্পাল টানেল সিন্ড্রোম, স্যাকরো ইলিয়াক জয়েন্ট পেইনে দেয়া যেতে পারে।
আপনার পিতা মাতা, আপনজনের কারো বয়সজনিত দীর্ঘস্থায়ী হাঁটু ব্যথা(অস্টিওআর্থ্রাইটিস) থেকে থাকলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেইন ক্লিনিক, রুম নং ১০১৩, সি ব্লক, ১০ তলায় যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
হাঁটু ব্যথায় পিআরপি থেরাপির মত ব্যথা উপশমের আধুনিকতম চিকিৎসা যেমন ব্যথা মুক্ত নরমাল ডেলিভারি, অপারেশন ছাড়াই প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ল্যাম্বার ডিস্ক প্রলাপ্সের ওযোন থেরাপিসহ পেইন মেডিসিনের বিভিন্ন বিষয়ের উপর একটি আন্তর্জাতিক কনফারেন্স সাউথ এশিয়ান রিজনাল পেইন সোসাইটির “8th Congress on Pain” অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ২৪-২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায়, বাংলাদেশ সোসাইটি অফ স্টাডি অফ পেইন এর আয়োজনে।
এ কনফারেন্সে আপনিও অংশ নিতে পারেন e-Poster Competition এর মাধ্যমে।
বিষয়ঃ “Pain Management” ।
অংশগ্রহণকারীদের কংগ্রেস সেক্রেটারিয়েট, রুম নং ১০১৪, সি ব্লক, ১০ তলা, বিএসএমএমইউতে রেজিস্ট্রেশন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুনঃ [email protected]।
এই কনফারেন্সের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে আয়োজিত ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কনফারেন্সগুলোর জন্য একটি নতুন মাইলস্টোন অর্জন করতে যাচ্ছে। চোখ রাখুন প্ল্যাটফর্ম এর অফিসিয়াল পেইজে।
তথ্য সম্পাদনায়ঃ ডা. মোহিব, রেসিডেন্ট-ডিপার্টমেন্ট অফ অনকোলজি এবং ডা. মিরাজ , রেসিডেন্ট- ডিপার্টমেন্ট অফ এনেস্থেশিয়া (এনেস্থেশিয়া, এনালজেশিয়া এন্ড ইন্টেন্সিভ কেয়ার মেডিসিন)।
তথ্য সংযুক্তিঃ কালের কন্ঠ ১৯ মে, ২০১৬ সালে প্রকাশিত সংবাদ- বিএসএমএমইউয়ে পিআরপি থেরাপি চালু হলো