প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ মে, ২০২০, মঙ্গলবার
ইমার্জেন্সি নাইট ডিউটির শুরুতে রোগী হিসেবে ৭ মাসের ফুটফুটে একটা শিশুর লাশ পেলেন ডাক্তার। মৃত্যুর কারণ ছিল, লিচুর আঁটি গলায় আটকে দম বন্ধ হয়ে যাওয়া। এভাবে আর কোন বাচ্চা যেন অকালে ঝরে না যায়, প্রয়োজন আরো অনেক বেশি সতর্ক হওয়া।
বাচ্চাদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন ডা. মোঃ আমিনুল ইসলাম আমিন।
১) বুকের দুধ খাওয়ানোর পর, বাচ্চাকে ঢেকুর তোলার জন্য কাঁধে নিতে এবং আলতো করে বাচ্চার পিঠে থাবা দিতে হবে, যা দুধটা হজমে সহায়তা করবে। খাওয়ানোর সাথে সাথে শুইয়ে দিলে বাচ্চা বমি করে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারে। এটা বাচ্চা বসতে শেখার আগ পর্যন্ত করতে হবে। এরপর বাচ্চা নিজ থেকে ঢেকুর তুলতে পারে।
২) বাচ্চাকে জোর করে কখনও খাওয়ানো যাবে না। ধস্তাধস্তি করতে গেলে বাচ্চা ঘাড়ে আঘাত পাবে ও শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। যার কারণ হচ্ছে আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস কেন্দ্র ঘাড়ে অবস্থিত।
৩) বাচ্চাকে চামচে অল্প করে খাওয়াতে হবে। একসাথে বেশি দিলে গিলতে পারবে না।
৪) ৪ বছরের নিচের বাচ্চাকে কখনই চকলেট খেতে দেওয়া উচিত না।
৫) ৩ বছরের নিচের বাচ্চাকে আঁটি জাতীয় খাবার যেমন- কুল, লিচু, জাম, ছোট আম ইত্যাদি খেতে দিলে, অবশ্যই আঁটি ফেলে শুধু শাঁসটুকু খেতে দিতে হবে।
৬) বাচ্চার হাতের নাগালে কোন কারেন্টের সকেট থাকলে, অবশ্যই সেগুলাতে টেপ লাগিয়ে রাখতে হবে।
৭) বাচ্চা যে সময় ঘুমাবে সেই সময় গোসল করতে যেতে হবে, কাপড় আয়রন করতে হবে।
৮) যারা হিটার/ইলেকট্রনিক চুলায় রান্না করেন, সেগুলাকে বাচ্চার হাতের নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
৯) গরম পানির বালতি থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখতে হবে।
১০) গরম পানি বালতিতে ঢালার সময় বা অন্য গরম কিছু কোথাও ঢালার সময়, বাচ্চা পিছনে আছে কীনা আগে দেখে নিতে হবে।
১১) ঘরে কোথাও পানি পড়ে থাকলে দ্রুত মুছে ফেলতে হবে।
১২) দরজার কোন ছিটকিনি বাচ্চার হাতের নাগালে থাকলে, সেটা বেঁধে রাখতে হবে।
১৩) শীতকালে বাচ্চাকে মাঝখানে রেখে একই কম্বলে বাবা-মা দুইপাশে ঘুমাবেন না। বাচ্চাকে আলাদা কম্বল দিয়ে একপাশে রাখবেন।
১৪) সিড়ির দরজা সবসময় বন্ধ রাখবেন।
১৫) ঘর সব-সময় পরিস্কার রাখতে হবে, যেন কোন পোকামাকড় না থাকে।
১৬) বাচ্চাকে গামলাতে অল্প পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে এবং সাথে থাকতে হবে যেন বাচ্চা ডুবে না যায়।
১৭) বাসার কাছে বড় ড্রেন, পুকুর বা ডোবা থাকলে বাচ্চাকে সবসময় নজরে রাখতে হবে।
১৮) ছুরি, কাঁচি, বটি, দা, ব্লেড ইত্যাদি ধারালো অস্ত্র নিরাপদে রাখতে হবে।
১৯) যেকোন ওষুধ বাচ্চার নাগালের বাইরে রাখতে হবে।
২০) ছোট বাচ্চাকে দঁড়ি অথবা তার দেওয়া যাবে না খেলার জন্য, সে গলায় পেঁচিয়ে ফেলতে পারে।
২১) বাচ্চা যেন খাট থেকে পড়ে না যায়, সেজন্য নিচু খাট অথবা মেঝেতে তোশক বিছিয়ে বাচ্চাকে রাখতে হবে।
আজকের শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত। তাই আমাদের নিজেদের জন্যই শিশুদের নিরাপদ রাখার ব্যাপারে অনেক বেশি সচেতন হতে হবে।
(ঈষৎ পরিবর্তিত)