প্ল্যাটফর্ম নিউজ
শুক্রবার, ১৭ই এপ্রিল, ২০২০
বর্তমানে (১৭ই এপ্রিল ২০২০) মুন্সীগঞ্জে মোট করোনা আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ জন। আর এখন পর্যন্ত মারা গেছে ৪ জন। যেখানে গত ৭ই এপ্রিল এ সংখ্যা ছিল ৭ জনে। একবারও ভেবে দেখেছেন কি! দিন দিন আক্রান্ত সংখ্যা কেন বেড়ে চলেছে? কেনো মুন্সীগঞ্জে করোনা সংক্রমন হলো? কে বা কারা প্রথম সংক্রমিত হয়েছে এবং তারা কিভাবে সংক্রমিত হয়েছে? প্রথম যারা সংক্রমিত হয়েছে তারা সবাই কোনো না কোনো ভাবে অন্য জেলাগুলোর মাধ্যমে সংক্রমিত হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো অন্য জেলার মানুষের সংস্পর্শে তারা কি করে এলো? লকডাউন বা অন্য জেলার সাথে সংযোগ রোড তো অনেক আগে থেকেই বন্ধ করা হয়েছে। তারমানে আমরা অনেকেই অবৈধভাবে লকডাউন লিক করে জেলায় প্রবেশ করেছি। আবার তথ্যও গোপন করেছি অনেক জেলায় প্রবেশ করার জন্য। তাহলে লাভ কি? আমরা কি লকডাউন এর যথাযথ নিয়ম গুলো সত্যিই মেনে চলেছি?
মুন্সীগঞ্জ, সি অফ ল্যান্ড (নদী দিয়ে ঘেরা) যাকে বলা যায়। জেলাটির চারপাশেই রয়েছে নদী। একদিকে পদ্মা নদী দিয়ে সংযুক্ত শরিয়তপুর, মাদারিপুর। অন্যদিকে মেঘনা ও পদ্মা দিয়ে সংযুক্ত চাঁদপুর বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও ভোলা। আবার শহরের প্রাণকেন্দ্রকে ঘিরে ধলেশ্বরী হয়ে বুড়িগঙ্গা দিয়ে ঢাকা ও শীতলক্ষ্যা দিয়ে নারায়নগঞ্জ চলাচল আমাদের। এবার আসি বড়মহাসড়ক প্রসঙ্গে, ঢাকা-মাওয়া চার লেনের বড় মহাসড়ক। শহরের দিকে মুক্তারপুর ব্রীজ দিয়ে একমাত্র প্রবেশ পথ আর লঞ্চ অনেক আগে থেকেই বন্ধ। খুব বেশিনা প্রবেশদ্বার। খুব সহজ ছিল এই নদী সংযোগ আর সড়ক গুলোতে যথাযথ লকডাউন নিশ্চিত করা। করাও হয়েছিলো কিন্তু লাভ হয়নি। যে বাঁচতে চায়না তাকে বাঁচানো কঠিন। প্রশ্ন করুন নিজেকে আমরা কেনো পারলাম না এই জেলাতে করোনার প্রবেশ প্রতিরোধ করতে? তাহলে কি এখনও লকডাউন নিয়ম মানা হচ্ছে না? লকডাউন মানা হচ্ছে হয়তো কিন্তুু মূল প্রবেশপথ বাদেও মানুষ প্রবেশ করেছে অন্ধকারের পথ দিয়ে। যে পথে কেউ আলো ফেলেনি। ছোট নৌকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে, বাল্কহেড শিপ দিয়ে, ট্রলারে করে মধ্যরাতে প্রবেশ করেছে অনেকেই। নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা মানুষের সংখ্যা সবথেকে বেশি। আর কিভাবে বাঁচাবেন শহরকে? গত মাসে অনেক মানুষ নতুন করে বাসা ভাড়া নিয়েছেন মুন্সীগঞ্জে! কোথা থেকে এলো এরা? খবর নিয়েছেন? টাকার জন্য ভাড়া দিয়ে দিলেন নিজের বাসায়। অথচ ভালো করে ভেবে দেখলে, আপনি সামান্য কিছু টাকা নিয়ে করোনাকে বাসায় ঠাই দিলেন। এভাবে চলতে থাকলে খুব বেশি দিন লাগবে না পুরো জেলাতে করোনার সংক্রমন ছড়াতে। এখনোও সময় আছে, যারা করোনা আক্রান্ত হয়ে গিয়েছে তাদের যথাযথ আইসোলেশনে (রোগাক্রান্ত মানুষকে সম্পূর্ন ভাবে আলাদা করে রাখা) নিতে হবে। যাতে তাদের দ্বারা আর একজনও আক্রান্ত না হয় সে ব্যাপারে বিশেষভাবে নজর দিতে হবে। নতুন এই মাসে যারা বাসা ভাড়া দিয়েছেন তারা ভাড়াটিয়াদের সব খবর নিন। বাইরে থেকে আসলে তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করুন। এদের করোনা না থাকলেও করুন। লকডাউন অবস্থায় উনি কেনো আসলেন, কিভাবে আসলেন! করোনা নেই মানে সে নিরপরাধ নয়। উনার মতো কেউ না কেউ এসেই শহরের ফুসফুসটাকে আক্রান্ত করেছে। উনারা শাস্তি প্রাপ্য। যে সড়ক, নদী সংযোগস্থল গুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে সেগুলোর উপরে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। আরো কঠোর হতে হবে প্রত্যকটি থানা এবং ইউনিয়ন পর্যায়কে। বিশেষ করে গ্রামদিকে। গ্রামদিকে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে যদি একবার শুরু হয়। উনারা সচেতনতার দিক থেকে খুবই উদাসীন। সচেতনতা বাড়াতে হবে। বড় বড় বাজার গুলোতে জনসমাগম আরো সীমিত করতে হবে। বাড়াতে হবে আইনি ব্যবস্থা। সবার আগে বাড়াতে হবে আত্ম সচেতনতা। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কোনো ভাবেই বাড়ির বাইরে যাওয়া যাবে না। আমাদের একটু অসাবধানতার কারনে আক্রান্ত যেন না হয়ে যায় আপনার- আমার কাছের মানুষটি! শহরটা আপনার আমার সবার, নিজেকে বাঁচান, শহর বাঁচবে। বাসায় থাকুন, ভালো থাকুন।
মূল লেখকঃ রিমন আহমেদ সীমান্ত
নিজস্ব প্রতিবেদক /সিলভিয়া মীম