আমলাতান্ত্রিক জটিলতার পাশাপাশি চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত কটিয়াদী উপজেলার স্বাস্থ্য সেবা

মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষের চিকিৎসার একমাত্র ভরসাস্থল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হলেও এখনও প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি। তাই কটিয়াদী উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের চার লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতাল, ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৪১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। কিন্তু এ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোরও বেহাল দশা! চিকিৎসক সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা।

সবমিলিয়ে উপজেলায় চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ৩১ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও ১৪টি পদ শূণ্য রয়েছে। পদায়িত চিকিৎসকদের মধ্যেও ৫ জন চিকিৎক ডেপুটেশনে অন্যত্র আছেন। মাতৃত্ব ছুটিতে আছেন ১ জন। ফলে মাত্র ০৮ জন চিকিৎসক উপজেলার সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। চিকিৎসার প্রয়োজনে তারা ছুটে যাচ্ছেন জেলা শহর কিংবা বিভিন্ন জায়গার প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, উপজেলার ৪টি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র চিকিৎসক শূণ্য অবস্থায় আছে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বেশিরভাগ সময়েই বন্ধ রাখতে হয়। ৫০ শয্যার উপজেলা হাসপাতালে রয়েছেন একজন আবাসিক ও চারজন মেডিকেল অফিসার, দুই জন কনসালটেন্ট ও একজন ইউনানী চিকিৎসক। এই ৮ জনকে দিয়ে চলছে উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবা। মাতৃত্ব ছুটিতে আছেন ১ জন। তাদের বাইরে ডেপুটেশনে রাজধানীর কুমিটোলা ৫০০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১ জন, শেখ রাসেল জাতীয় গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল ১ জন, সিলেট এমজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ১ জন, কিশোরগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ২ জন। এ ছাড়াও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কালিহাতি টাঙ্গাইলে সংযুক্তিতে আছেন ১জন।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ভবন। কিন্তু ৭ মাস পেরিয়ে গেলেও এর কার্যক্রম আরম্ভ হয়নি। মূলত এখনো ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যার অনুমোদন না পাওয়ায় ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভবনটি ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না – বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে আছে উন্নত যন্ত্রপাতি সমৃদ্ধ অপারেশন থিয়েটার, কিন্তু অ্যানেস্থেসিয়া ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ না থাকায় বছরের পর বছর ধরে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে সরকারের অর্ধ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কোন কাজে আসছে না। বরং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আছে ডিজিটাল এক্সরে মেশিন, নেই রেডিওলোজিস্ট। ফলে তালাবদ্ধ রুমে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। আছে প্যাথলজি বিভাগ, নেই টেকনোলজিস্ট। ফলে রক্ত, মলমূত্র পরীক্ষা করতে রোগীদের বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে হয়। আছে শিশু, মেডিসিন, গাইনী ও সার্জারিসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ কিন্তু নেই কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে কাঙ্খিত স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, ৫টি জুনিয়র কনসালটেন্ট পদ দীর্ঘদিন থেকেই শূণ্য রয়েছে। এছাড়া টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন সহায়ক জনশক্তির ৭৩টি পদ শূণ্য আছে। স্থানীয়রা প্ল্যাটফর্মকে জানান, হাসপাতালে রোগ নির্ণয়ের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় বাধ্য হয়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ কোন ডাক্তার না থাকায় তাদের জেলা সদরে যেতে হয়। বিশেষ করে প্রসূতিদের জটিল প্রসব ও সিজারিয়ান সেবা নিতে যেতে হয় ৩০ কি.মি. দূরে কিশোরগঞ্জে, না হয় বেসরকারি ক্লিনিকে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা প্ল্যাটফর্মকে বলেন, “বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ শূন্যপদ পূরণে জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। তবে আমাদের যেটুকু রয়েছে সেটুকু দিয়েই সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি।”

প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদকঃ মঈন উদ্দীন আহমদ শিবলী

Moin Uddin Ahmad Sibli

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত

Tue Dec 3 , 2024
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ স্বাস্থ্য সেবাকে জনমুখী, সহজলভ্য ও সার্বজনীন করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য গঠিত ‘স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন’ এর আনুষ্ঠানিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (০৩ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কনভেনশন হলে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। কমিশনের প্রধান জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের সভাপতিত্বে সভায় স্বাস্থ্যখাত […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo