“আমাদের করোনা কালের জীবন গাঁথা”- অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ মনির হোসেন

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, রবিবার, ১২ জুলাই ২০২০

ডা. মোহাম্মদ মনির হোসেন
অধ্যাপক
(এন আই সি ইউ ও ক্রিটিকাল কেয়ার অফ পেডিয়াট্রিকস)
ঢাকা শিশু হাসপাতাল

রাত ১১টা, ফারজানার ফোন,

“স্যার, এইমাত্র পি আই সি ইউ-৭ (পেডিয়াট্রিক ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট) এর রিপোর্ট পেলাম। করোনা পজিটিভ! স্যার রোগীতো ভেন্টিলেটরে। এত রাতে কোথায় যাবে?”

রোগীর সেরেব্রাল পাল্সি, নিউমোনিয়া, সেপ্টিসেমিয়া। গত ৩ দিন ধরে আমরা পুরো টিম রোগীটাকে নিয়ে জমে-মানুষে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি। আমরা সবাই আক্রান্ত হলে এত দিনে হয়ে গিয়েছি। নতুন করে ভয় পাবার কিছু নেই। ডাক্তারদের ভিতর প্রথম “ববি” পজিটিভ হলো। তার প্রেক্ষিতে পি আই সি ইউ (পেডিয়াট্রিক ইনটেন্সিভ কেয়ার ইউনিট) লকডাউন। ঢাকার সিভিল সার্জন আমাকে ফোন দিয়ে বলেছিল,

“স্যার আমি আর গেলাম না, আপনার উপরই লকডাউন-এর ভার দিলাম।”

তারপর প্রথম রোগী করোনা পজিটিভ।

Meningoencephalitis with Sub dural effusion! শিশু হাসপাতালে ১৮ দিন ছিল, কনভালশন নিয়ন্ত্রণ হচ্ছিলনা, সেজন্য এসেছে। সবাই কোলে কাঁধে নিয়ে চিকিৎসা করলো, জড়িয়ে ধরে এলপি(লাম্বার পাংচার) করলো। ২ দিন পর শিশু হাসপাতাল থেকে জানানো হলো রোগী কোরোনা পজিটিভ। আবারো লকডাউন! নার্স ডাক্তার কোয়ারেনটাইনে। একে একে শিবলী, অনিমা, সুমি, শিপলু, ইভা, আতিয়ার পজিটিভ হলো। নজরুল, রাজ্জাক, রাজিয়া, লিমা, মনিকা, কোভিড এর মত উপসর্গ নিয়ে ভুগলো অনেক দিন।

ইদের আগের দিন রাত থেকে আমার জ্বর শুরু হলো। জ্বরের ২য় দিন অর্থাৎ ইদের দিনই আরটি পিসিআর করলাম, নেগেটিভ আসলো। কিন্তু সিআরপি( সি রিয়েক্টিভ প্রোটিন) অনেক বেড়ে গেলো। লিম্ফোসাইট কাউন্ট হয়ে গেলো মাত্র ১৭%। ডি ডাইমার, ফেরিটিন, এলডিএইচ বেড়ে গেলো। প্রো ক্যালসিটোনিন অবশ্য নরমাল ছিলো। প্রচন্ড গলা ব্যাথা, প্রচন্ড শরীর ব্যথা। প্রথম প্রথম রোগী বা ডাক্তার রা করোনা পজিটিভ হলে পি আই সি ইউ বন্ধ করে দেয়া হতো। এখন শুধু ঐ বেডে কয়েকদিন পেশেন্ট রাখিনা। ডাক্তাররাও এক সপ্তাহের ভেতর কাজে ফিরে আসার জন্য অস্থির হয়ে যায়। আমরা সবাই এখন ধীরে ধীরে করোনাতে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি।

গতকাল নুসরাত ফোন করলো,

“স্যার আপনাদের পিআইসিইউতে বেড খালি আছে? একটা রোগী পাঠাবো। আমার অনেক পরিচিত। ১১ বছর বয়স। এপোলোতে বেড খালি নাই।”
“আচ্ছা পাঠাও, কিসের রোগী?”
“স্যার সাস্পেকটেড করোনা, নিউমোনিয়া আছে, খারাপ।”
“আরেকটা করোনা!”
“স্যার আপনার কাছে ছাড়া আর কোথায় পাঠাবো?”

আজকেও ৪-৫টা সাসপেক্টেড করোনা রোগী ভর্তি হয়েছে। আগের দিন সারাদিন হাসপাতাল, চেম্বার, এন আই সি ইউ, পি আই সি ইউ দেখে প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠার পর ঢোক গিলে দেখি গলা ব্যাথা করছে কিনা? কপালে হাত দিয়ে দেখি জ্বর আছে কিনা? আহারে! নতুন পৃথিবীতে প্রতিদিন বেঁচে থাকাটা কত না আনন্দের! কত না মধুর!

Md. Nafiul Islam

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

কানের ক্যান্সার ও কাঁঠালের গল্প

Sun Jul 12 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১২ জুলাই, ২০২০, রবিবার চিকিৎসকের প্রতি কৃতজ্ঞতাসরূপ কাঁঠাল নিয়ে হাজির হলেন কানের ক্যান্সার থেকে আরোগ্যলাভ করা কাজী জহিরুল ইসলাম। গত ৭ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক, কান, গলার সার্জারী বিভাগে এই ঘটনাটি ঘটে। কাজী জহিরুল ইসলাম, পেশায় একজন কৃষক। তিনি অনেকদিন ধরে কানের ব্যথায় ভুগছিলেন এবং শুনতে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo