শুক্রবার, ১০ এপ্রিল, ২০২০
সারাবিশ্বে কোভিড-১৯ এর থাবায় ছিন্নভিন্ন বহু দেশ। পুরো দেশ লকডাউন। কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কেউ বের হচ্ছে না। সবার জন্যেই বিরাজমান এক আতঙ্ক। এ যেন এক যুদ্ধাবস্থা। কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রে নেই কোন সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী কিংবা বিমানবাহিনী। যুদ্ধক্ষেত্রে আছে সাদা এপ্রোণ পড়া ডাক্তার, সাথে আছে নার্স, আছে সকল স্বাস্থ্যকর্মী। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। বাংলাদেশেও চলছে যুদ্ধ। শত্রুরা ছড়িয়ে পড়ছে এক দেহ থেকে আরেক দেহে। শনাক্ত করার কাজ চলছে। এর মধ্যেই শনাক্ত হয়ে গেছে ৪২৪ দেহে। এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কি করছেন আমাদের সম্মুখযোদ্ধারা। “আমাদের ডাক্তাররা কি করছেন” এই ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আমরা সেই যোদ্ধাদের গল্পগুলোই জানব।
ডাক্তাররা কি কর্মস্থলে আছেন, নাকি চিকিৎসা দিচ্ছেন না, বসে আছেন ঘরে। এই ধারনা বা ভাবনার উদ্ভব আমাদের যে কারণে তা হচ্ছে, অধিকাংশ ডাক্তার প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসা দিচ্ছেন না, বন্ধ রেখেছেন। আর আমরা তো প্রাইভেট চেম্বারেই চিকিৎসা নিয়ে অভ্যস্ত। কিন্তু আমরা একবারও ভাবছি না যে ডাক্তাররা কেন তাদের প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রেখেছেন ? করোনা ভাইরাসের ভয়ে ? কিন্তু তারা তো সকলেই হাসপাতালে যাচ্ছেন, রাউন্ড দিচ্ছেন। ভর্তি রোগী দেখছেন। এমনকি এই করতে গিয়েও তো এরইমধ্যে আক্রান্ত হয়ছেন বেশ কজন ডাক্তার। জনগণকে বুঝতে হবে, ডাক্তাররা প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ রেখেছেন রোগীর স্বার্থে, দেশের মানুষের স্বার্থে। চেম্বারে বসা প্রতি ডাক্তার করোনা ভাইরাস ছড়ানোর একেকজন কার্যকর মাধ্যম। আপনার আগের রোগী যদি কোভিড-১৯ বা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়, আক্রান্ত হবেন ডাক্তার। তার নিজের কথা তিনি নাহয় চিন্তা নাই করলেন, চিকিৎসা দিতে দিতে বিলিয়ে দিলেন নিজের জীবন। কিন্তু তিনি তো শুধু নিজে একলা আক্রান্ত থাকবেন না। তিনি যতজন রোগী দেখবেন, ছড়াবেন প্রত্যেকের মাঝে। একজন ডাক্তার এর প্রাইভেট প্র্যাকটিসের মাধ্যমে কত রোগী আক্রান্ত হতে পারে, যার মধ্যে হয়তোবা আপনিও থাকতে পারতেন, ডাক্তারের প্রতি নাখোশ হবার আগে সেটা কি একবার ভেবে দেখেছিলেন ?
এখন কথা হচ্ছে দেশের প্রতিটা মানুষ তো আর করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত না, আরো অনেক কারণেই তো অসুস্থ হচ্ছে মানুষ। তারা কি চিকিৎসা পাবে না ? অবশ্যই পাবে, তাদের জন্যেই হাসপাতালগুলোতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন আমাদের ডাক্তার, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। তারা হয়তোবা পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যেই কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের প্রশংসা না করুন, কিন্তু সমালোচনা করে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেবেন না প্লিজ।
চালু আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চালু আছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ, চালু আছে করোনা বিশেষায়িত কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষনা দিয়ে জানাতে হয়েছে চালু আছে দেশের ৬৯ টি বেসরকারী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আপনাদের চিকিৎসা দেয়ার জন্যে। চালু আছে সকল হাসপাতাল, দেশের সব ছুটি হলেও ছুটি হয়নি হাসপাতাল আর তার কর্মীদের। ছুটি হয়নি পুলিশের, ছুটি হয়নি সেনাবাহিনীর, ছুটি হয়নি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের অনেক কর্মচারীর। এই যুদ্ধের সকল কর্মীদের জন্যে আমাদের হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরী বিভাগে চিকিৎসা সেবা চলছে ২৪ ঘন্টা। পার্সোনাল প্রটেকটিভ ইকুইপমেন্ট পরিধান করে চিকিৎসা সেবা বহাল রেখেছেন চিকিৎসকরা। এই সুরক্ষাও শুধু তাদের নিজের জন্যে না, তাদের ও রোগীদের জন্য। জনগণের জন্যে। শুধু তাই নয়, অপারেশন চলছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারী অপারেশন থিয়েটারে। চিকিৎসকরা এই দুর্যোগেও তাদের দায়িত্ব পালন করছেন।
চিকিৎসা চলছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে। রাউন্ড এ আছেন চিকিৎসকেরা, রোগী দেখছেন, অপারেশন করছেন। স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাসান মশিউর শাওন বলেছেন,
” শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় আমাদের চিকিৎসা কার্যক্রম চলমান”
কেন জনগণ চিকিৎসা পাবে না যেহেতু ডাক্তার হাসপাতালে ? কান নিয়েছে চিলে শুনেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সমালোচনা করবেন না, বরং পারলে তাদের কাজের সম্মান দিন। দেশজুড়ে আরো হাজারো যে চিকিৎসকেরা আমাদের জন্যে তাদের কর্মক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সম্মানার্থে চলবে এই ধারাবাহিক প্রতিবেদন “আমাদের চিকিৎসকেরা কি করছেন ?”
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক/ জামিল সিদ্দিকী