প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২০ মার্চ, ২০২১, শনিবার
লেখা: ডা. জাহিদুর রহমান
গত বছর এই সময়ে একটি প্রতিষ্ঠানের গুটিকয়েক জ্ঞানপাপী নিজেদের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখার জন্য দেশবাসীকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন যে, করোনা ভাইরাস শনাক্ত করার জন্য পিসিআর করার ব্যবস্থা শুধু তাদের হাতেই আছে। অথচ বাস্তবতা হল, বর্তমানে প্রায় দেড়শ সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে দিনে ১৮-২০ হাজার করে পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে। একই অবস্থা করোনা ভাইরাসের সিকুয়েন্স বের করার ক্ষেত্রেও ঘটছে। ইউকে এবং সাউথ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট ধরা পড়েছে জানুয়ারি মাসে, অথচ সেটি ঘোষণা করা হল মার্চে এসে। মহামারি নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব এরকম প্রতিষ্ঠানের হতে থাকলে ভবিষ্যতে আমাদের আরো অনেক ভোগান্তি পোহাতে হবে।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট খুঁজে বের করা ছাড়াও আরো কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে এই মুহূর্তে কয়েকটি পিসিআর ল্যাবে করোনা ভাইরাসের সিকুয়েন্স বের করার মেশিন বসানোর দরকার আছে। করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ৩ সপ্তাহ পরও যদি কেউ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়, তখনও সেই রোগীর শরীর থেকে স্যাম্পল নিয়ে করোনা ভাইরাসের সিকুয়েন্স বের করতে হবে। একজন মানুষ একাধিকবার আক্রান্ত হলেও তার ক্ষেত্রে করোনা ভাইরাসের সিকুয়েন্স বের করা প্রয়োজন। বিভিন্ন ধরনের এপিডেমিওলজিকাল স্টাডির জন্য করোনা ভাইরাসের সিকুয়েন্স বের করা প্রয়োজন।
একটি সর্বাধুনিক মানের নেক্সট জেনারেশন সিকোয়েন্সিং মেশিনের দাম মাত্র ৭০ লাখ টাকা, যার মাধ্যমে মাত্র ১২ ঘণ্টার মধ্যে ১৬ জন রোগীর সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব। আরেকটু বেশি দামের মেশিন কিনলে ৪৮ বা ৯৬ জন বা তারও বেশি স্যাম্পল এক সাথে সিকোয়েন্সিং করা সম্ভব। বর্তমানে চলমান পিসিআর ল্যাবগুলোতে এই মেশিন বসাতে বাড়তি কোন লোকবল, স্থান, আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি, বিশেষ কোন প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই। করোনা মহামারি মোকাবেলা করতে হাজার হাজার কোটি টাকার বাজেট হয়েছে। অথচ মাত্র একশ কোটি টাকা খরচ করলেই আমরা বেশ কয়েকটি করোনা ল্যাবে নিয়মিত সিকোয়েন্সিং করতে পারি।
এ কথা ঠিক যে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা কিছু পাই নাই। ক্ষতিপূরণ, প্রণোদনা, দৈনিক ভাতা, কিচ্ছু না। তারপরও আশপাশে টাকা উড়তে দেখে কয়েকজন বেকুবের হাত নিশপিশ করে উঠে। না, বাতাসে উড়ে টাকা ছুঁয়ে দেখার আমাদের কোন ইচ্ছা নেই। আপনারা সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে দেশের মানুষের স্বার্থে আমাদের কয়েকটা সিকোয়েন্সিং মেশিনের ব্যবস্থা করে দেন। আপনারা সামান্য আন্তরিকতা দেখালেই সেটি সম্ভব। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় ডাক্তারদের গবেষণা করতে উৎসাহ দেন। আমরা তো গবেষণা করতে চাই, কিন্তু বরাদ্দ তো পাই না। আমি একজন সরকারি মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। করোনা আসার পর প্রটোকল সাবমিট করতে যেয়ে জানতে পারলাম গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ নাই। হতে গোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে খুবই কম পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। সেগুলো কারা পায় বলে আর কাউকে বিব্রত করতে চাই না। তাছাড়া চাকরির মায়া আমারও আছে।
যাই হোক, আসল কথা হল, আমরা সিকোয়েন্সিং করতে পারি। আমাদের ইচ্ছা আছে, ল্যাব আছে, জনবল আছে। এবং এই কাজটি করা শুধু গবেষণা নয়, এই মুহূর্তে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও খুব প্রয়োজন। আমাদের শুধু কয়েকটা সিকোয়েন্সিং মেশিনের ব্যবস্থা করে দেন।