আসুন গ্যাস্ট্রাইটিস বিষয়ে সহজে জেনে নিই

1

আমরা যখন কোন খাদ্য গ্রহণ করি, তখন খাদ্য পরিপাকের জন্য এবং খাদ্যে উপস্থিত অনুজীবসমূহকে ধ্বংস করার জন্য পাকস্থলী থেকে হাইড্রোক্লোরিক এসিড (HCl) ক্ষরিত হয়, যা খাদ্য পরিপাকে সক্রিয় ভূমিকা রাখে।
একজন সুস্থ মানুষের পাকস্থলীতে প্রতিদিন প্রায়
১.৫ -২ লিটার HCl ক্ষরিত হয়।

এই হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরণ এর মাত্রা যদি কোন কারণে বেড়ে যায়, তখন পেটের ভিতরের আবরণ তথা মিউকাস মেমব্রেনে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। হাইড্রোক্লোরিক এসিড দিয়ে মিউকাস মেমব্রেনের যে প্রদাহ হয়, এই অবস্থাকে গ্যাস্ট্রাইটিস রোগ বলে।

গ্যাস্ট্রাইটিস হবার প্রক্রিয়া
আমরা জেনেছি যে, আমাদের পেট থেকে প্রতিনিয়ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড ক্ষরিত হয়, তাই যখন পাকস্থলী খালি (empty stomach) থাকে, তখন হাইড্রোক্লোরিক এসিডসমূহ ব্যবহৃত না হয়ে অধিক পরিমাণে জমা হয়ে যায়, কারণ হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কাজ হচ্ছে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করা। যখন খালিপেট থাকে, কিংবা যখন পেটে কোন খাবারই থাকবেনা, তখন অতিরিক্ত এসিড পাকস্থলীতে জমে যায়, অতিরিক্ত এসিডের কারণে তখন পাকস্থলীর ভিতর ক্ষত হয়ে যায়, এবং পর্যায়ক্রমে তা অন্ত্রের দিকেও ছড়িয়ে পড়ে। আবার পাকস্থলির উপরের দিকে খাদ্যনালী তথা ইসোফেগাসের দিকেও ছড়িয়ে যেতে পারে।

এসিড যদি পাকস্থলির উপরের দিকে খাদ্যনালী বা ইসোফেগাসকে আক্রান্ত করে, তবে এই অবস্থাকে
Gastro-Esophageal Reflux disorder (GERD) বলা হয়। এই ক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীদের বেশি বেশি ঢেকুর আসবে এবং রোগী তার বুক জ্বালাপোড়া করে বলে অভিযোগ করবে। সকালে ঘুম থেকে উঠলে গলাতে কফ জমে থাকতে পারে। বমিবমি ভাব থাকবে।

প্রদাহের পরিমাণ বেশি বেড়ে পাকস্থলির মাঝে আলসার তৈরী করতে পারে, যাকে আমরা গ্যাস্ট্রিক আলসার বলে থাকি।
আলসার হতে থাকলে সেখানে কোষসমূহের গাঠনিক পরিবর্তন আসতে পারে, এক প্রকারের কোষ অন্যপ্রকার কোষে রুপান্তরিত হতে পারে, যাকে Metaplasia বলা হয়, এবং পরিশেষে তা থেকে Dysplasia এমনকি ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।

গ্যাস্ট্রাইটিস রোগের উপসর্গ
১. পেটের বাম পাশে ব্যথা
২. বুক জ্বালাপোড়া
৩. খাবারে অরুচি
৪. পেট জ্বালাপোড়া
৫. পেট ফেঁপে থাকা
৬. মাথা ঘুরানো
৭. বমি বমি ভাব
৮. অল্প খাবার এর পর পেট পুরে গেছে মনে হওয়া
৯. GERD এর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা, অধিক হারে ঢেকুর ও বমিভাব
১০. ডিউডেনাম আলসার হলে পেটের মাঝামাঝি ব্যথা এবং ব্যাথা পুরো পেটে ছড়িয়ে পড়া
১১. গ্যাস্ট্রিক আলসারের সবচেয়ে আনকমন উপসর্গ হচ্ছে খাবার চাহিদা বেড়ে যাওয়া। অধিকহারে খাবার পরেও রোগীর ক্ষিধা লাগবে। কারণ আলসারের কারণে অনেক সময় দেখা যায়, পাকস্থলি থেকে ব্রেইনে Hunger সেন্টারে নার্ভ সিগনাল সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারেনা। তাই রোগী পেট ভরে খেলেও Hunger center সঠিক মেসেজ না পাওয়ার কারনে ক্ষিধার পরিমান বাডিয়ে দেয়।

গ্যাস্ট্রাইটিস রোগের কারণ
১. অনিয়মিত খাবার খাওয়া
২. তেলে ভাজা খাবার কিংবা অধিকহারে তৈলাক্ত খাবার খাওয়া
৩. কোল্ড ড্রিংক খাওয়া
৪. ধূমপান করা
৬. পানি কম খাওয়া
৭. রাত্রে খাবার খেয়ে সাথে সাথে ঘুমিয়ে যাওয়া (এই ক্ষেত্রে GERD হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি)
৮. অধিক হারে গোস্ত খাওয়া
৯. NSAID (পেইন কিলার মেডিসিন) এর Adverse effect হিসাবে গ্যাস্ট্রাইটিস ও গ্যাস্ট্রিক আলসার হতে পারে। তাই NSAID নিলে সাথে একটি PPI দিয়ে দিবে।
১০. H. Pylory দ্বারা ইনিফেকশন হলে ডিউডেনাল আলসার হতে পারে

গ্যাস্ট্রাইটিস প্রতিরোধে পরামর্শ
১. নিয়মিত খাবার খান, বেশী বেশী পানি পান করুন
২. রাত্রে খাবারে পর ২০-৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করে ঘুমাবেন
৩. রেগুলার সকাল বেলায় ইসুপগুলের ভূসি ভিজিয়ে পান করুন। এতে করে অতিরিক্ত হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিউট্রালাইজড হয়ে যাবে।
৪. সকালে খালি পেটে ২ গ্লাস পানি পান করুন।
৫. দৈনিক কখনোই যেন ১৩০ গ্রামের বেশী গোস্ত খাওয়া না হয়।
৬. তেলে ভাজা ও তৈলাক্ত খাবার পরিহার করুন
৭. অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।

গ্যাস্ট্রাইটিসের জন্যে মেডিসিন
১। প্রোটন পাম্প ইনহিবিটরি শ্রেনীর মেডিসিনগুলি এসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে ভূমিকা রাখে। যেমন – Omeprazol, Esomeprazole, Pantoprazole, Rabeprazole ইত্যাদি
২। এন্টাসিড শ্রেণীর ড্রাগসমূহ
৩। H. pylori ডায়াগনোসিস হলে ট্রিপল থেরাপি দেওয়া হয়।
৪। বমিবমি ভাব থাকলে Domperidon ব্যবহার হয়।

ডা. ইসমাইল আযহারি
DCMC/2013-14

প্ল্যাটফর্ম ফিচার রাইটার:
সামিউন ফাতীহা
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর

Platform

One thought on “আসুন গ্যাস্ট্রাইটিস বিষয়ে সহজে জেনে নিই

  1. FYI, He’s not doctor yet. He is my batchmate
    and final year medical student.

    Mohaimenul Auntor
    DCMC (2013-14)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

ইদ ও বিশেষ ডিউটি: ব্যক্তিগত স্মৃতি

Tue Jun 4 , 2019
সরকারি চাকরিজীবনের প্রথম দিকে, যখন আমি মেডিকেল অফিসার, চাকরি করছি সীমান্তপারের এক জেলায়, ইদের আগে আগে শুনতে পেলাম যারা মুসলিম নন, এমন চিকিৎসকদের জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ইদের বিশেষ ডিউটি করতে হবে। কিছুটা অস্বস্তি আর ভয়ও ছিলো। তবে শেষ অবধি অন্য উপজেলায় যেতে হয়নি, কর্মস্থলেই ডিউটি করেছিলাম। এমনটা বারবার হয়নি। পরবর্তী […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo