প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৭ অক্টোবর ২০২০, বুধবার
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ঘোড়াঘাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে সরকারি বাসভবনে ঢুকে ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এসময় হাতুড়ির আঘাতে আহত বাবা- মেয়েকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর থেকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে ঢাকায় এনে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করা হয়।
৩ সেপ্টেম্বর দুপুর ৩.১৫ মিনিটে তিনি হাসপাতালে পৌছান। তাকে প্রথমে আইসিইউতে রাখা হয় এবং প্রাথমিক সমীক্ষাতে দেখা যায় তার রক্তচাপ অনেক কম, হৃদস্পন্দনের হার বেশি এবং জ্ঞানের মাত্রা (GCS) অনেক কম। এই সমস্যাগুলোর চিকিৎসা করার ফলে অবস্থার উন্নতি হলে রাত ৯ টার সময় ৬ সদস্যর মেডিকেল টিম এর তত্ত্বাবধানে দীর্ঘ দুই ঘন্টার সফল অস্ত্রোপচার করা হয় এবং অস্ত্রোপচারের পর ৭২ ঘণ্টা ওয়াহিদা খানমকে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে রাখা হয়। অস্ত্রোপচারে ওয়াহিদা খানমের মাথায় প্রায় ৯ টির মত আঘাত দেখা যায়। অত্যন্ত দক্ষতার সাথে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে মস্তিষ্কের ভিতরে ঢুকে থাকা হাড়ের টুকরোগুলো মস্তিষ্কের কোষ অক্ষুণ্ণ রেখেই বের করে আনা হয়। এরপর আঘাতগুলো পরিষ্কার করে খুলির ৮ টুকরো হাড় জোড়া দেয়া হয়। এর মধ্যে মাথার দুই ভাগে তিন টুকরো করে ছয় টুকরো। মুখের এক টুকরো এবং চোখের এক টুকরো হাড় জোড়া দেয়া হয়।
দ্রুত ও সফল অস্ত্রোপচারে ফলে অস্ত্রোপচারের পর থেকেই ধীরে ধীরে ওয়াহিদা খানমের শারীরিক অবস্থার ক্রমশ উন্নতি হতে থাকে। পরবর্তীতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে ৭ সেপ্টেম্বর আইসিইউ থেকে তাকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়। প্রায় ১ মাস চিকিৎসার পর গত বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। পরে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় মিরপুরের সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অফ দ্যা প্যারালাইজড (সিআরপি) হাসপাতালে।
ওয়াহিদা খানমের জটিল চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান এবং জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অধ্যাপক ডা. জাহেদ হোসেন এই সাফল্যের পিছনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘ওয়াহিদা খানম যখন প্রথম এখানে আসেন, তখন অপারেশন করার মতো অবস্থায় ছিলেন না। আমরা তাকে অপারেশেন করার মতো অবস্থায় আনি। এর পর তার অস্ত্রোপচার করি। অপারেশনের পর ডান দিক নাড়াতে পারছিলেন না। তবে র্দীঘ ১ মাস চিকিৎসার পর এখন তিনি হাঁটতে পারছেন। তিনি এখন সুস্থ এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারছেন। হাঁটছেন, খাচ্ছেন, কথা বলছেন। সামান্য দুর্বলতা আছে, একটু খোঁড়াচ্ছেন। তিনি স্ট্রেচারে করে এসেছিলেন, এখন হেঁটে বাড়ি ফিরছেন।’
তিনি আরও বলেন, ওয়াহিদা খানম এখনো কিছুটা দুর্বল। কিন্তু এখন তেমন কোনো রিস্ক ফ্যাক্টর নেই। ফলোআপ চিকিৎসা এবং ফিজিওথেরাপি নেওয়াই এখন প্রধান কাজ। তাকে সিআরপিতে বা নিজ বাড়িতেই ফিজিওথেরাপি নেবার প্রাথমিক পরামর্শ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আলোচনার মাধ্যমে তাকে সিআরপি তে ফিজিওথেরাপি নেবার জন্য পাঠানো হয়।