প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার
ডা. তাহমিনা আক্তার
ইন্টার্ন চিকিৎসক, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
আলহামদুলিল্লাহ। প্রথম নরমাল ডেলিভারী করালাম। ২ মাসের ইন্টার্ন জীবনে আজকে প্রথম।
অনেকবার উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু মায়ের উদরে অতি যতনে বেড়ে ওঠা প্রাণকে মায়ের কোলে তুলে দিতে যে সাহসের প্রয়োজন, সেটা আমার পর্যাপ্ত ছিল না তখন। মায়েদের কষ্টের তীব্রতায় প্রথম প্রথম চোখ ভিজে যেতো। “আ….., মরে যাবো, এর থেকে ভালো মাইরা ফেলেন, আর পারি না…” এরকম আর্তচিৎকারে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যেতাম।শুধু দেখতাম অন্যেদের ডেলিভারী করানোটা।
আর অবাক হতাম মায়েদের মাতৃত্ব দেখে। দেখতাম অবর্ণনীয় কষ্টের পর ভালো বাচ্চার খবর শুনে মায়ের পুলকিত চেহারাটা।
একটু আগেই যে মা মরে যেতে চেয়েছিল, সেই মায়ের ‘বাচ্চা কাঁদলো কিনা ‘সেই আকুতিমাখা মুখটা চুপ করে দেখতাম। এত কষ্টের শেষে যখন একটা অসুস্হ / মৃত বাচ্চা জন্ম নিত, তখন মায়েদের বহুগুণ বেড়ে যাওয়া কষ্টটা যেনো নিজে অনুভব করতে পারতাম।
তখন শুধু মায়ের কথা মনে হতো। মনে হতো তখনি ছুটে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরি। রাজরাণী করে তাকে সেবা করি যার আমি প্রথম সন্তান, যাকে অন্য সন্তানদের চেয়ে বেশি কষ্ট দিয়ে আমি পৃথিবীতে এসেছি। আবার আমি যদি আমার মায়ের সিরিয়ালের পরের সন্তানও হতাম, তবে তো আমি আরো ভাগ্যবান। আমার মা আবারো মরতে চাওয়ার মতো কষ্টের ঝুঁকি নিয়ে আমাকে তার উদরে ধরে রেখেছে।
একান্ত চাওয়া পৃথিবীর সব মায়েদের আল্লাহ ভালো রাখুন। মেয়েরা নাকি মায়েদের কষ্ট বেশি বুঝে। কিন্তু চাই, ছেলেমেয়ে সব সন্তানরাই বুঝতে পারুক। সব মায়েরা সম্মানিত থাকুক সারাজীবন। মা হয়ে সন্তানের কাছে, সন্তানের মা হয়ে স্বামীর কাছে, নাতি-নাতনীর মা হয়ে শ্বশুর শাশুড়ীর কাছে, স্বামীর মা হয়ে পূত্রবধুর কাছে, স্ত্রীর মা হয়ে মেয়ে জামাইয়ের কাছে।
আরো প্রার্থনা, কোনো মায়ের মাতৃত্বে যেন আমার মাধ্যমে কখনো আঘাত না লাগে। প্রার্থনা আরো ….
মায়েদের অনেক বেশি আআাাাা…গোঙানীর মধ্য দিয়ে যে সন্তানেরা বের হয়ে আসে, তারা যেন মায়েদের সাথে উহ!!! শব্দটিও না করে। জানি বৃদ্ধ বাবা মায়ের অবুঝপনায়, অনেক সময় মেজাজ ধরে রাখা কষ্ট হয়ে যায়, তবে মায়েরও তো কষ্ট হয়েছিল, মরে যাওয়ার মতো কষ্ট!