২০০৬ সাল। ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজ থেকে এসএসসির পাস করার পর ভর্তি হলাম একই প্রতিষ্ঠানের কলেজ শাখায়। অন্য স্কুল থেকে অনেকেই ভর্তি হল। তখন শুনতাম একজন ছেলের নাম। বায়োলজিতে নাকি মাত্রাতিরিক্ত ভালো। বাবা মা দুইজনই ডাক্তার। বড় বোন ডাক্তারি পড়ে। তাই সেও মেডিকেলে পড়বে। নাম তার রিয়াসাদ আজিম ঈশপ। কলেজের পরীক্ষায় প্রথম দশের ভিতর থাকত। ভিন্ন সেকশন থাকায় তার সাথে কথা হত না। তার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠলো আসলে এইচএসসির পর। আমি, ফজলে, শাকিল ঈশপ, দিবাকর ভর্তি হলাম সব একসাথে মেডিকেল ভর্তি কোচিং এ। ৩ মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করলাম। আমি, ফজলে আর শাকিল চান্স পেলাম ঢাকা মেডিকেল কলেজে। ঈশপ পেল ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। তখন থেকেই বলত সার্জন হবে। কার্ডিয়ো থোরাসিক সার্জন হবে। ক্রিশ্চিয়ান বার্নার্ড ১৯৬৭ সালের ৩ ডিসেম্বর যেমন বিশ্বের প্রথম মানবদেহে হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন করেছিলেন আমার বন্ধুও স্বপ্ন দেখত বাংলাদেশের হৃদপিণ্ড প্রতিস্থাপন সে করবে। দুই শহরে থাকলেও তার সাথে যোগাযোগ ছিল প্রতিনিয়ত। ফেসবুকে চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে পেজ চালাতো সে। আমার লেখা শেয়ার দিত।
২০১৪ সালের ১০ মে। আমাদের জীবনে স্মরণীয় দিন। আমরা সে দিন এমবিবিএস চূড়ান্ত পেশাগত পরীক্ষা পাস করে ডাক্তার হলাম। ছোটবেলার স্বপ্ন পূরণ হল। এরপর শিক্ষানবিশ চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করলাম।
২০১৪ সালের ২৪ জুন। ফেসবুকে দেখলাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসক মারা গেছেন। আমি ঈশপকে ফোন দিলাম। ঘটনা জানতে ফোন ধরে না। হঠাৎ কোথায় দেখলাম ডাক্তার ঈশপ মারা গিয়েছে। মাথায় বাজ পড়লো। আমি ওর ওয়ালে গেলাম। তারপর দেখলাম তার বন্ধুরা শোক জানাচ্ছে। বিশ্বাস হল না। এমএমসির আরেক বন্ধুকে ফোন দিলাম। বলল নাইট ডিউটি করে আসার পর টয়লেটে যায়। সেখান থেকে তাকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সাডেন কার্ডিয়াক এরেস্ট।
বাসায় ওকে ভালো করে চিনত। কেউ বিশ্বাস করতেই চায় না।
মানুষের মৃত্যু কখন আসবে কেউ বলতে পারে না। কিন্তু এইভাবে অকালে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া কষ্টকর।
আজ ঈশপের প্রথম মৃত্যু বার্ষিকী। যেখানেই থাকিস ভালো থাকিস দোস্ত।
লেখকঃ রজত দাশগুপ্ত