বরাবরের মতো অধিকার আদায়ের দাবিতে আবারো উত্তপ্ত এম এম সি ক্যাম্পাস।
শিক্ষার্থী হোস্টেলের নিরাপত্তার জের ধরে মোট ৬ দফা দাবী নিয়ে এবারের আন্দোলন।
দাবীগুলো হল :
১.ছাত্র হোস্টেলে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন।
২. ছাত্র হোস্টেল এবং অত্র ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সি সি ক্যামেরা স্থাপন।
৩. ছাত্র হোস্টেলে আইডি কার্ড প্রদর্শন ব্যতীত প্রবেশ নিষিদ্ধকরণ।
৪. ছাত্র এবং ছাত্রী উভয় হোস্টেলের সামনের গেইট সংস্কার।
৫. ছাত্র হোস্টেলের দেয়াল মেরামত,উঁচুকরণ ও কাঁটাতার স্থাপন।
৬. যত দ্রুত সম্ভব ছাত্র হোস্টেল পর্যায়ক্রমে কলেজ ক্যাম্পাসে স্থানান্তর।
বহুদিন ধরে শিক্ষার্থীরা হোস্টেলের নিরাপত্তাজনিত বিষয়গুলো কলেজ প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে জানিয়ে আসছিলো ।
শিক্ষার্থীদের কাছে জানা গেল, ২ মাস আগেও তারা ২৫ দফা দাবী নিয়ে কলেজ প্রশাসনের কাছে যায় ।যেখানে মূল বিষয় ছিল হোস্টেলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা এবং কলেজ হোস্টেল সংস্করণ ।
শিক্ষার্থীদের আশা ছিল হোস্টেলে স্থানীয় সর্বসাধারনের অবাধ বিচরণ, নেশা আর মাতলামির আখড়া হয়ে ওঠা মমেক হোস্টেল এবার তার পুরানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে ।সেই ১১ বছর আগে বসবাস অযোগ্য হিসাবে ঘোষিত হলগুলার সংস্করণ হবে । কিন্তু লিখিত স্মারক লিপি সহ যথাযথ ভাবে কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করার পর ২ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার আশ্বাস এবং ২/১ দিনের পুলিশ সিকউরিটি ছাড়া আর কিছুই মিলেনি শিক্ষার্থীদের কাছে জানা যায় ।
কিন্তু গত বৃহস্পতিবার আকস্মিক ভাবেই ঘটে যায় এক অপ্রীতিকর ঘটনা অর্থ্যাৎ গত ১৪ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার বিকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ছাত্র হোস্টেল সংলগ্ন একটি সেপটিক ট্যাঙ্কে একটি লাশ পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে এলাকাবাসী থানায় খবর দিলে পুলিশ গিয়ে সেপটিক ট্যাংকি থেকে জাহাঙ্গীর নামক ১৮ বছরের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ময়নাতদন্তের পর লাশ তার পরিবারে ফেরত দেয়া হয়। আসামীদের ধরার চেষ্টা চলছে।
উক্ত ঘটনায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শিক্ষার্থীদের কোন সম্পৃক্ততা না থাকলেও এই নিয়ে তাদের মনে ভয় ও শংকার সৃষ্টি হয়, প্রশ্ন ওঠে নিরাপত্তার ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী প্ল্যাটফর্ম প্রতিনিধি কে জানান , “চাকু দেখিয়ে মোবাইল, ল্যাপটপ নেওয়া , রুম থেকে চুরি তো সবসময়কার ঘটনা। এছাড়া হলের ওয়ালের উপর দিয়ে গাজার ব্যবসা, ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় ইয়াবা, গাজার আসর হরহামেশা হতেই থাকে। আমাদের সামনে দিয়ে অন্যদের রুম থেকে চুরি করা জিনিস,জামা কাপড় নিয়ে যেতে দেখলে বাধা দিলে ভয় দেখায় এই সকল চক্র আর হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছিল কয়েকবার “।
আরও জানা যায়, ক্যাম্পাসের ছাত্রীদের হলেও বাইরের ছেলেরা অনেক সময় ঢুকে যায় আর ইভ টিজিং এর শিকারও হতে হয় তাদের সবাইকে । এর আগে ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ম-৪৩ ব্যাচ থাকাকালিন সময়ে আন্দোলন হয়েছিল এবং ক্যাম্পাসও বন্ধ ছিলো ৪ দিন। আশ্বাসও পেয়েছিলো ছাত্ররা ; কিন্তু ফলাফল শুন্য ।
তাই এবার শিক্ষার্থীরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অধিকার আদায়ের এই যুদ্ধে। আন্দোলনের অংশ হিসাবে প্রথমদিন শনিবার কলেজ একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় এবং অধ্যক্ষের নিকট স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। অধ্যক্ষ মহাদয় আশ্বাস দেন এবং পরের দিন একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং আহবান করেন। আন্দোলন রবিবারও একই ভাবে চালিয়ে যায় শিক্ষার্থীরা ।
রবিবার সকাল ১১ টার মিটিং শেষ এ সকল দাবী নিয়ে অধ্যক্ষ মহাদয়সহ পুরা একাডেমিক কাউন্সিলকে সাথে নিয়ে ছাত্র ও মিডিয়ার মুখোমুখি হন উপাধ্যক্ষ জনাব আ.ন.ম ফজলুল হক পাঠান।
তিনি ছাত্রদের এই দাবী শতভাগ যৌক্তক বলে অভিহিত করেন এবং আশ্বাস দেন বিকাল থেকেই দাবী ২,৩ এর কাজ শুরু হবে এবং আরো বলেন স্থায়ী ক্যাম্প ( দাবী ১ ) এর প্রশাসনিক জটিলতা শেষ হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী ক্যাম্প চালু করবেন।
৬ নম্বর দাবিটিকে সাদরে গ্রহন করেন এবং এ বিষয়ে কতৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলে জানান। এছাড়া ৪ ও ৫ নম্বর দাবির কার্যাবলী শুরু করার জন্য কিছুদিন সময় চেয়ে নেন তিনি।
কিন্তু শিক্ষার্থীরা জানায় তাদের ৬ নম্বর দাবি ব্যতিত অন্যান্য সকল দাবি বাস্তবায়নের দৃশ্যমান কোন পদক্ষেপ না নেওয়া পর্যন্ত তারা ক্লাস, ওয়ার্ড সহ একাডেমিক সকল কার্যাবলী থেকে নিজেদেরকে দূরে রেখেছে , রাখবে। তবে দাবীগুলো মৌখিক ভাবে মেনে নেওয়ায় তারা একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলানোকে সাময়িকভাবে বন্ধ রাখবে বলে জানানো হয়েছে। নিয়মমত ক্লাসে যেতে চায় তারা কিন্তু প্রতিবারের মতো আশ্বাস কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক কোন ধুম্রজালে পরে দাবী আদায়ের পথ থেকে সরে যাবেনা এবার তারা । নিরাপত্তা নিয়েই পড়ার টেবিলে ফিরে যেতে চায় তারা আবারো।
আশ্বাস আর প্রশাসনিক বেড়াজালে শিক্ষার্থীরা চিরদিনই বন্দি , কিন্তু আর না। নিরাপত্তা তাদের অধিকার, শুধু দাবিই নয়।
লাশটা আজ হয়তো হোস্টেল সংলগ্ন কেষ্টপূর এলাকার এক যুবকের কিন্তু কাল তো নিজেদের কেউ হতে পারে। সাদা এপ্রন পরতে এসে সাদা কাফন যেন কারো ঠিকানা না হয় ।
তথ্যঃ এস এম রাকিব (ম-৫২তম)