লেখকঃ ডাঃ অনির্বাণ সরকার
ধরে নিচ্ছি- আমার আগের কাঁচা হাতের লেখাদুটো আপনারা পড়েছেন। কোনো প্রাপ্তির আশায় নয়, বরং দু-একজনও যদি আমার লেখা থেকে উপকৃত হন, তাহলেই নিজেকে ধন্য মনে করবো।
যাক, এবার আসল কথায় আসি। আজ আপনাদের বলবো- ইনজুরি সার্টিফিকেট (প্রচলিত ভাষায় এমসি বা Medical Certificate) কিভাবে লিখবেন। Assault-এর শিকার রোগীরা মামলা করলে আপনার হাসপাতালের অফিসে সাধারণত স্থানীয় থানা থেকে একটি অনুরোধপত্র আসবে। কখনো কখনো তা আসতে পারে উপজেলা বা জেলা আদালত থেকেও। আপনার অফিসে এটি গ্রহণ করা হবে, তারপর আপনাকে জানানো হবে। যদি সংশ্লিষ্ট রোগীকে আপনি ইমার্জেন্সিতে দেখে থাকেন, তার আঘাতের বর্ণনা লিখে থাকেন, ইনজুরি সার্টিফিকেটও আপনাকেই লিখতে হবে।
এই পত্রটি পাওয়ার পর আপনার করণীয়গুলো একে একে বলছি এবার:
১) আঘাতপ্রাপ্ত রোগীকে সাধারণত এই পত্রে ‘জখমী’ হিসেবে উল্লেখ করা থাকে। আপনি এই পত্রটি নিয়ে assault-এর খাতা বের করে তারিখ মিলিয়ে সংশ্লিষ্ট এন্ট্রিটি খুঁজে বের করুন।
২) আপনার হাসপাতালের অফিসে ইনজুরি সার্টিফিকেট লেখার যে ফর্ম আছে, সেটি সংগ্রহ করুন। অনেক হাসপাতালে ফর্ম থাকেনা, সাদা একটা খাতায় লিখতে হয়। আপাতত ফর্মে কিভাবে লিখবেন সেটা বলছি।
৩) দুটো ফর্ম কার্বন পেপার সংযুক্ত করে লিখবেন, কারণ একটি কপি অফিস সংরক্ষণ করবে। স্পষ্টাক্ষরে রোগীর নাম, বয়স, ঠিকানা, পিতা বা স্বামীর নাম ইংরেজিতে লিখুন। সনাক্তকারীর পরিচয়ও ইংরেজিতে লিখুন। কারণ ইনজুরি সার্টিফিকেট ইংরেজিতেই হয়।
৪) ইমার্জেন্সিতে রোগীর আগমনের তারিখ, সময়, আঘাত পাবার সময় লিখুন।
৫) লিখুন এই এন্ট্রিটির ইমার্জেন্সি রেজিস্ট্রেশন নম্বর, যেটি খাতায় আছে।
৬) আঘাতের সময়কাল: এটা হচ্ছে রোগী কতক্ষণ পর ইমার্জেন্সিতে এলো, তার সময়। যেমন- কোনো রোগী যদি আসে বিকেল পাঁচটায়, আর আঘাত পাবার সময় যদি হয় দুপুর একটা, তাহলে আঘাতের সময়কাল হবে চার ঘন্টা।
৭) আঘাতের বর্ণনা: ফর্মে ছক করা থাকে। এ অংশে আপনি খাতায় যা যা আঘাতের বর্ণনা যেভাবে লিখেছেন, ঠিক সেভাবে পয়েন্ট আকারে লিখবেন। খাতায় লেখা বর্ণনা পরিবর্তন করবে না। যেমন- খাতায় যদি Incised-looking wound লেখা থাকে, তাহলে তাই লিখুন, Split laceration লিখবেন না, যদিও দুটো একই।
৮) প্রতিটি আঘাতের বর্ণনার পাশে remark-এর ঘরে কোনটির জন্য কি Investigation দিয়েছিলেন, উল্লেখ করুন। রোগী রিপোর্টের ফটোকপি জমা দিয়ে থাকলে সেটা খাতায় উল্লেখ থাকবে (আমার প্রথম পোস্ট দেখুন), সেটি বের করে Investigation-এর ফাইণ্ডিংস লিপিবদ্ধ করুন। রোগী রিপোর্টের ফটোকপি জমা না দিলে লিখুন- Report was not submitted.
৯) এরপর পুলিশ/ আদালতের পত্রের স্মারক নম্বর, থানার নাম লিখুন।
১০) রোগী যদি ভর্তি করা থাকে, স্টাফ সিস্টারকে বলে রোগীর ইনডোরের ফাইল বের করে ইনডোরের রেজিঃ নম্বর উল্লেখ করুন।
১১) সবশেষে তারিখসহ আপনার ইনিশিয়াল দিন। এটিও যথেষ্ট নয়, আপনার পূর্ণ নাম, ডেজিগনেশন, কোড নম্বরও উল্লেখ করবেন। আপনার নামের সিল দিন এখানে।
তো, হয়ে গেলো ইনজুরি সার্টিফিকেট লেখা। এবার এ বিষয়ে কয়েকটি টিপস-
ক) স্পষ্টাক্ষরে ইংরেজিতে লিখবেন। কাটাকাটি হলে এটা ছিঁড়ে ফেলে নতুন ফর্মে লিখবেন।
খ) রোগীর কিংবা সনাক্তকারীর নাম, বয়স খাতায় একটা, আর পত্রে কাছাকাছি আরেকটা থাকতে পারে। যেমন- খাতায় আছে- নূর আলি, বয়স-২০, আর পত্রে আছে- নূর মিয়া, বয়স- ২৩। এক্ষেত্রে খাতারটা লিখুন।
গ) লক্ষ্য করুন ফর্মের নিচে কাউন্টার সাইনের জায়গা আছে কিনা। এটা থাকলে ভালো, সিনিয়র ডাক্তার কোনো ভাষায় আপত্তি করলে বা আপনার ভুল দেখিয়ে দিলে আপনি সংশোধন করতে পারবেন।
ঘ) ইনজুরি সার্টিফিকেটও সর্বোচ্চ গোপনীয়। এটি কাউকে দেখাবেন না, রোগীর লোক বা পুলিশকেও নয়। কাটাকাটিতে ছিঁড়ে ফেলার প্রয়োজন হলে ভালো করে ছিঁড়ে ফেলবেন।
( আজ এ পর্যন্তই। অত কথা হয়তো বোঝাতে পারিনি, তবে সরকারী ডাক্তার হিসেবে কাজ শুরু করলে যদি এই লেখাগুলো পড়েন, আমার ধারণা- কিছুটা হলেও উপকার পেতে পারেন। পরবর্তীতে এক্সপার্ট উইটনেস হিসেবে আদালতে কখন ও কিভাবে আপনি সাক্ষ্য দেবেন- এ নিয়ে বলার ইচ্ছে রইলো।)
আগের দুটি পর্বঃ
পর্ব-১