মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪
বরগুনাঃ বরগুনার বেতাগীতে জরায়ুমুখ ক্যানসার প্রতিরোধে কিশোরীদের এইচপিভি টিকা দেওয়ার একদিন পর একটি বিদ্যালয়ে ৩৩ ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে। উপজেলার মোকামিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাঠে অ্যাসেম্বলি চলাকালে গতকাল সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, টিকার কারণে নয়, ছাত্রীরা ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতি ও রোববার বিদ্যালয়ের ৯০ ছাত্রীকে এইচপিভি টিকা দেওয়া হয়। গতকাল পাঠদান শুরুর আগে শিক্ষার্থীরা অ্যাসেম্বলিতে (পিটি) অংশ নিলে তীব্র রোদে এক ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর অল্প সময় পর আরেক এক ছাত্রী শ্রেণিকক্ষে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এরপর আরও অনেক ছাত্রী অসুস্থ হতে শুরু করে। পরে তাদের চিকিৎসার জন্য বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়।
বেতাগী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মাহমুদ হাসান বলেছেন, ‘৩৩ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তবে তারা কেউ টিকার কারণে অসুস্থ হয়নি। রোদে পিটি করার কারণে কিছুটা দুর্বল হয়ে দুই–একজন অসুস্থ হয়ে গিয়েছিল। এটা দেখে বাকি মেয়েরা আতঙ্কিত (ম্যাস প্যানিক) হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে।’
ঝিনাইদহঃ সারা দেশের মতো গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় এইচপিভি বা জরায়ুমুখ ক্যান্সারের টিকার কার্যক্রম শুরু হয়। গতকাল সোমবার (২৮ অক্টোবর) তৃতীয় দিনের মতো সকাল ১০ থেকে কালীগঞ্জ উপজেলার মনোহরপুর পুকুরিয়া দাখিল মাদরাসার মেয়েদের এই টিকা দেওয়া হয়।
টিকাদান কর্মসূচি শুরুর দুই ঘণ্টায় প্রায় শতাধিক মেয়ের টিকা দেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের টিকা নেওয়ার প্রায় ২৬ জন মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্যে ২৩ জনকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্রেক্সে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হয়।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন জানান, ‘মাদরাসার শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হওয়ার খবর শুনে আমি নিজেই সেখানে যাই। এটাকে ম্যাস হিসটেরিয়া বা দেখাদেখি আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়া বলে। যে-সব বাচ্চা অসুস্থ হয়েছে অধিকাংশয় সকালে না খাওয়া ছিল। পরবর্তীতে আমি না খাওয়া বাচ্চাদের টিকা দিতে নিষেধ করি এবং অসুস্থ বাচ্চাদের আমি আমার গাড়িতে এবং হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসি। ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কারো স্যালাইন ও অন্যান্য ওষুধ দিয়ে সুস্থ হাওয়ার পর বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। একটি মেয়ে বাড়িতে যাবার পর আবারো হাসাপাতালে আসছে, বাকিরা সবাই এখন ভালো আছে।’
ভোলাঃ আজ একই ঘটনা ঘটেছে ভোলায়। সেখানে টিকা নেয়ার পর আতঙ্কে অসুস্থ হয়েছে ৫৩ জন। আর টিকা না নিয়ে অসুস্থ হয়েছে ১১ জন।
বিশেষজ্ঞরা এজন্য জনসচেতনতাকে দায়ী করেছেন। সম্প্রতি সরকার কিশোরীদের বিনামূল্যে এইচপিভি (জরায়ুমুখ ক্যান্সার) এর টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর, একটি মহল এর বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছে। এজন্যও শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
প্ল্যাটফর্ম প্রতিবেদক: মঈন উদ্দিন আহমদ শিবলী