লেখকঃ ডাঃ সাজ্জাদ শাহিদ
২০০১ সাল। মে মাসের বৈশাখী লূ হাওয়ায় নববর্ষের আনন্দের সাথে বিসিএস নামক সরকারী চাকুরীর পদায়নের আনন্দও নাযিল হল। অনেক আনন্দিত মুখের মাঝে থেকেও আমি আর আমার বন্ধু বিদ্যুৎ মুখ কালো করে বসে আছি। অনেক ধরাধরি করে ঢাকা বিভাগে পোস্টিং নিয়েছিলাম… তো ঢাকা বিভাগ যে নেত্রকোনার আটপাড়া আর অষ্টগ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত, সে সম্বন্ধে কোন ধারণাই ছিলনা। তার ওপর বিভাগীয় অফিস এর পিওন পদায়নের কাগজ দেওয়ার সময় নদীর এই পাড়ে পোস্টিং এর সুখবর দেওয়ার দাবী করে মিষ্টি খাওয়ার পয়সা আদায় করে নিয়েছে। নদী যে মাগরা নদী, তা তো বুঝি নাই, এই পাড় যে ঢাকা থেকে ৩০০ কিলোমিটার দুরে…তাও বুঝি নাই। তারও ওপর… এটাই সবচাইতে বড় সমস্যা … বন্ধু বিদ্যুৎ মাত্র অল্প কিছুদিন আগে বিয়ে করেছে আর এই অধম এর বিয়ের গুনে গুনে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ৩১ মে যোগদান করতে হবে চাকুরীতে আর ৭ জুন যোগদান করতে হবে আমারই বিয়ের অনুষ্ঠানে।
বাসায় ফিরতে ফিরতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, ওষুধ কোম্পানির এক্সিকিউটিভ পদের লোভনীয় বেতনের চাকরীটা ছাড়বনা। আরও বড় একটা কোম্পানির সাথেও কথা হয়ে গেছে। সেটার নাম শুনলে বাসা থেকে আর কিছু বলবে না। ফলাফল… ৩১ মে ভোরবেলা পদায়নের ‘কার্ড’ আর বিয়ের কার্ড নিয়ে আটপাড়ার উদ্দেশে এই আটকপালীর যাত্রা শুরু হল। বিয়ের কার্ড নিলাম এটা দেখিয়ে টিএইচও-র মন গলানোর জন্য।
যাত্রা পথে মোটামুটি একটা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করে ফেললাম। হাসপাতালটা যখন গ্রামে, তখন সেখানকার পরিবেশটাও নিশ্চয়ই ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড়। মাথায় ঘুরছিল সোমেশ্বরি নদী আর পাহাড়। কাছাকাছি যখন… আটপাড়াও নিশ্চয়ইএরকমই হবে। আমার কাছের বন্ধুরা জানে, আমি কতটা “প্রকৃতি প্রেমি”; একটা ছোট সাজানো গোছানো কোয়ার্টার, সামনে বাগান, ঘরে নতুন বউ, ক্ষেতে টাটকা সবজী…আহা !! কিন্তু হাতের বাঁয়ে বিরিশিরি রেখে বাস যতই এগিয়ে যেতে থাকলো…আমার প্রকৃতি প্রেম ততই পিছিয়ে যেতে থাকলো। অতঃপর চোখের সামনে দৃশ্যমান হল আমার যোগদান স্থল। এ আমি কি দেখছি… এটা কি উপজেলা হাসপাতাল না সোনারগাঁর সংরক্ষিত রাজবাড়ি? মুল ভবন যাও বা কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে… বাকী গুলো পক্ষাঘাতে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। ওগুলোকে কোয়ার্টার বলেই মনে হল। পক্ষাঘাতে আক্রান্ত রোগীর মতই পা টেনে টেনে অফিসে ঢুকলাম।
আমি জানতাম, আমার সাথে আরও বেশ কয়েকজন ডাক্তারের এখানে পোস্টিং হয়েছে। কিন্তু তারা যে অতি রূপবতী দুইজন মহিলা… তা জানা ছিলোনা… একজন তো এত সাদা যে বিলাতি বলেই মনে হয়। প্রথমেই চোখে পড়ল, রূপবতীদের মুখে নতুন চাকরীর আনন্দ নেই… ভয়াবহ আতঙ্ক আর বিষাদ মিলে একাকার। বিষাদ যে রাজবাড়ী দেখে- তা বুঝে ফেললাম… আর আতঙ্কের কারন দেখে আমি তাদের চেয়েও আতঙ্কিত হয়ে পড়লাম।
নতুন যারা…মানে বিসিএস- এর মাধ্যমে গ্রামে প্রথম পদায়ন পাওয়া ভাগ্যবান যারা, তাদের জন্য বলছি, কোন নিভৃত উপজেলা হাসপাতালে নতুন কারো পোস্টিং হলে দশগ্রামে খবর হয়ে যায়। আমাদেরও হল। অফিস ভরতি লোকজন। এর মধ্যে একজনের হাতে একটা রাইফেল…এয়ার রাইফেল বলেই মনে হল…কিন্তু রাইফেল তো। চেয়ার এ পায়ের ওপর পা তুলে বসা লুঙ্গি পরা ছেলেটা অস্ত্রটা নিয়ে এদিক ওদিক নিশানা ঠিক করছে আর সেই সাথে ক্ষণে ক্ষণে তার বানী আমদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে যার সারমর্ম হচ্ছে এরকম… কয়দিন আগে টিএইচ ও কে বাঁশডলা দেওয়া হয়েছে…সে আর আসেনা…এখন কোন ডাক্তার যদি এখান থেকে চলে যেতে চায়… তাহলে……। বাকীটা সে তার অস্ত্র আন্দোলন করে বুঝিয়ে দিল।
অফিস এ কথা বলে বুঝলাম আসলে এখানে এই মুহূর্তে মাত্র একজন ডাক্তার আছেন। আর এম ও ডাক্তার কুদ্দুস। স্থানীয়। তিনিও এই মুহূর্তে নাই। কোন এক প্রভাবশালী নাকি তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে। এর মধ্যে খবর ছড়িয়ে গিয়েছে… তিনজন ডাক্তার এখানে যোগদান করতে এসেছে… একজন আবার বিদেশী। স্থানীয় এক নেতা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়ে ফেলেছেন… সরকারের উপর মহলে প্রভাব খাটিয়ে তিনি এই নতুন তিনজন ডাক্তারকে এখানে এনেছেন। যোগদান আর করব কি… নতুন ডাক্তার আর বিদেশী ডাক্তারকে তাদের মাত্রা ছাড়া কৌতূহল আর সাবধান বানীর উত্তর দিতে দিতেই বেলা গড়াতে লাগলো। যে দুজন মহিলা ডাক্তার এখানে পোস্টিং পেয়েছে তাদের একজনের বাচ্চার বয়স ৬ মাস আর একজনের বাচ্চা ১ বছরের। যৌক্তিক কারনেই তারা কোনোমতে যোগদান এর কাগজ এবং সেই সাথে আগাম ছুটির কাগজ রেখে ঢাকায় রওনা দিলেন। পড়ে রইলাম কেবল আমি।
রাতে থাকার মত কোন ব্যবস্থা অফিস এর লোকজন করতে পারলনা। প্রায় সব কোয়ার্টারই ভাঙ্গা। যে কয়টি ভাল আছে তাতে বাকী স্টাফরা থাকে। সবগুলোর চাবিও তাদের কাছে নেই। টিএইচও-র সাথে দেখা না করে যেতেও চাচ্ছিনা। শেষে রাতে থাকার জন্য মাগরা নদীর পাড়ে রেস্ট হাউস নামক একটা ঘরে আমাকে পাঠানো হল… যেখানে বিজলী নাই, ধারে কাছে খাবার দোকানও নাই। রাস্তায় খাওয়ার জন্য কেনা এনার্জি বিস্কুট এবং মশার কামড় খেয়ে আটপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ আমার প্রথম রাত কাটল।
পরদিন সকালে আমাকে আউটডোরএ বসিয়ে দেয়া হল। প্রথম রোগী আমার সামনে এসে দাঁড়াল। কি সমস্যা? জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তর হল… ১০ টা এনটাসিড। আবার জিজ্ঞাসা করলাম… উত্তর সেই একই। অবাক হয়ে গেলাম, তাঁরা নিজের রোগ ডায়াগনোসিস করে কি ঔষধ খাবে তাও ঠিক করে ফেলেছে। কি সমস্যা আমাকে বলার কোনও প্রয়োজন সে বোধ করছেনা। আমি স্লিপএ ঔষধ এর পরিমান লিখে দিলে ফার্মাসিস্ট সেই ঔষধ রোগীকে দিয়ে দেবে। লিখে দিলামনা। যে কোন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স আউটডোরএ প্রতিদিন কমবেশি ২০০- ৩০০ রোগী আসে। কিন্তু এখানে দেখে মনে হল অন্তত ৪০০ রোগী বাইরে অপেক্ষা করছে। আমার পাশে একজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট রোগী দেখছিল… তাকেই অনেককিছু চালাতে হয়। রোগীরা তার কাছ থেকে খুশি মনে ফিরে যাচ্ছিল। আমি খুশী মনে কাউকে ফেরাতে পারছিলামনা। কারন এর পরের রোগীর অসুখের নাম ২০ টা টেটরাসাইক্লিন… তারপর ক্রমান্বয়ে হিসটাসিন, প্যারাসিটামল, ওরস্যালাইন… চলতেই থাকলো। দুই চারজন সত্যিকারের রোগী যে ছিলোনা তা না… কিন্তু শুধু ঔষধ যারা নিচ্ছিল তারা সব স্বাস্থ্যবান, এদের ডিঙিয়ে তারা আর ডাক্তার পর্যন্ত যেতে পারছিলনা। আরও চমৎকৃত হলাম যখন অনেকগুলো স্কুল এর বাচ্চা এসে ভিটামিন চাইল। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম গেটের পাশেই স্কুল। টিফিন টাইম এর ছুটিতে তাঁদের মাঝে একটা প্রতিযোগিতা হয় কে কত বেশী ঔষধ নিতে পারে। এদেরকেও ফেরাতে হল। কিন্তু আমার এই সুকর্মের ফল যে আমাকে দুই এক দিনের মধ্যেই হাতেনাতে পেতে হবে, তা জানা ছিলোনা।
আরএমও- র সাথে পরিচয় হল। ভাল মানুষ। তাঁর উপায় নেই এখান থেকে পালানোর। পরের উপজেলাতেই তাঁর বাড়ি। পরিবার নিয়ে থাকেন। জানতে পারলাম স্থানীয় লোকজনের কাণ্ডকারখানা। হাসপাতাল সরকারী প্রতিষ্ঠান, তাই এটা তাঁদের… এখানকার ঔষধ তাঁদের, এখানকার ডাক্তাররা তাঁদের পারিবারিক ডাক্তার, ওয়ার্ড এর বিছানা তাঁদের… এমনকি ভাল দেখে দুই একটা কোয়ার্টারে তাঁরা দয়া করে থাকছেনও। তিনি জানালেন, পরিবার নিয়ে তিনি এখানে থাকেন এবং সেখানে কোনও প্রাইভেসি নেই। যখন তখন তাঁরা বাসায় ঢুকে পরে, রোগী না থাকলেও… সরকারী কোয়ার্টার হিসেবে, সরকার এর মুখপাত্র হিসাবে তাঁরা নানান রকম উপদেশ ও হুমকি দান-খয়রাত করে। কয়দিন আগে পানিতে ডোবা একটি মৃতদেহ তাঁরা তাঁর বাসার দরজার সামনে রেখে দিয়ে চলে গিয়েছিল, কারন তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছিল। ডাক্তার তাঁকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই করেননি… এটাই তাঁর অপরাধ। মৃতদেরকে বাঁচানোর ক্ষমতা আমার নাই…কিন্তু বুঝে গেলাম যে মৃত কেউ আসলে বাঁচানোর চেষ্টা করতে হবে। জীবন রক্ষাকারী কিছু ইঞ্জেকশান ঐ মুহূর্তে দেওয়াটাই হচ্ছে মৃতপ্রায় কে বাঁচানোর শেষ চেষ্টা। কিন্তু তিনি জানালেন এ পদ্ধতিতে ইঞ্জেকশান দিয়ে মৃত ঘোষণার পর রোগীর লোকজন তাঁর ওপর একবার চড়াও হয়েছিল কারন ইঞ্জেকশান দিয়ে নাকি রোগীকে মেরে ফেলা হয়েছে। এ তো দেখি মহা সমস্যা!!
টিএইচও-র অন্তর্ধান এর কারন জানতে পারলাম। একজন প্রভাবশালির নাকি পেট বুক ব্যথা করছিল… যথারীতি তাঁরা নিজেরা ডাক্তারি করে এনটাসিড হাসপাতাল থেকে নিয়ে তাঁকে খাইয়েছে এবং এক সময় ব্যথা বেড়ে যাওয়ায় ডিউটি ডাক্তার কে তলব করা হয়েছে বাসায়। একা ডাক্তার কতদিকে যাবেন, ওয়ার্ডেও রোগী খারাপ, তাই তাঁকে নিয়ে আসতে অথবা জেলা হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। সরকারী ডাক্তার… যে সরকার জনগন ভোট দিয়ে বানায়… তাঁরা বাসায় আসবেনা কেন… এই অজুহাতে তাঁরা অহেতুক দেরি করেছিলেন। ফলাফল… রেফার করার পর জেলা হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু। সম্ভবত একিউট এম আই। পরদিন কয়েকশ লোক হাসপাতাল আক্রমন করল লাঠিসোঠা নিয়ে। যে যেখান থেকে পারল পালালো, শুধু ডায়াবেটিস এর রোগী টিএইচও পালাতে পারলেননা। আহত টিএইচও-র খুব শীগগির হাসপাতালে আসার সম্ভাবনা নেই। ঠিক করলাম দুই একদিন দেখে ছুটির কাগজ জমা দিয়ে জেলা সদরে টিএইচও- র সাথে দেখা করে যাব।
পরবর্তী কয়েক দিন গ্রামের দরিদ্র জনগনের স্বাস্থ্যসেবার এক নতুন দিগন্ত আমার সামনে উন্মোচিত হল। মোটামুটি দুই ধরনের ‘রোগী’ পেলাম। যারা অসুস্থ এবং যারা অসুস্থ না। এই দুই ধরনের রোগীদেরই ঔষধ দরকার। শুধু ইনডোর এ যারা থাকেন…. তাদেরকেই সত্যিকারের রোগী বলে মনে হচ্ছিলো। কারন আর কিছুইনা… সুস্থ মানুষ ইনডোর এ বেশিক্ষন থাকতে পারবেননা। ঔষধ এর অপ্রতুলতা, পরিষ্কার পরিচছনতার একটা ব্যাপার তো আছেই, আরও বড় কারন হল ডায়েট। হোস্টেলে থেকে মেডিকেল পড়েছি, হোস্টেল এর খাবার ছিল বিখ্যাত… কিন্তু এখানকার খাবার আরও বিখ্যাত, ডাল আরও স্বচ্ছ। স্থানীয় নেতাদের নির্বাচিত ডায়েট কন্ট্রাক্টর তাঁর স্বচ্ছতা বজায় রেখেই রোগীদেরকে দুই বেলা খাওয়াচ্ছেন। এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও হাসপাতাল স্টাফরা কিভাবে তাঁদের কাজটুকু করে যাচ্ছেন ভাবতে পারছিলামনা। ভাবতে না পারলেও পৃথিবীর সেরা রম্য লেখক শিবরাম চক্রবর্তীর রম্য কথা “ যখন যেমন, তখন তেমন” এর মত আমাকেও মনে হল মানিয়ে নিতে হবে। অন্তত তাঁর পরদিন আমাকে মানানোর বা সাইজ করার জন্য স্থানীয় বিশিষ্ট নেতাদের আগমন দেখে তাই মনে হল।
এর মধ্যে আমার থাকার জন্য একটা বাসা ঠিক করা হয়েছে। আহত বিস্ময় এর সাথে দেখলাম, এটিও একটি পক্ষাঘাতগ্রস্থ বাসা। বাসা দুই তলায়, কিন্তু নীচতলার অর্ধেক আগেই ভেঙে পড়ে গেছে। কিভাবে এটা দাঁড়িয়ে আছে বুঝলামনা… নিজের জীবন বাঁচানোর জন্য নীচতলার অর্ধেক যেটুকু বেঁচে আছে, তার ওপরের রুমটার দখল নিলাম।
পরদিন আউটডোর – এ ঢোকার পর আগত গণ্যমান্যদের সাথে পরিচয় হল। একজনের নাম এম পি খাইরুল। পরে জানতে পেরেছিলাম, এম পি ইলেকশনে দাঁড়ানোর জন্য একবার তিনি টিকেট কিনেছিলেন। তাতেই তিনি এম পি। এভাবে আরও কয়েকজন গণ্যমান্য নিজের পরিচয় দিলেন। যখন তাঁরা আমার সাথে কথা বলা শুরু করলেন, তখন মনে হল তাঁরা আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাঁরা নিজেরা কে কতটা প্রভাবশালী জানিয়ে দিয়ে কোন কোন ‘রোগী’ তাঁদের কার কার আত্মীয় এবং তাদেরকে ঔষধ না দেওয়ার দুঃসাহস আমি কোথায় পেলাম সেই কৈফিয়ত চাইলেন। কৈফিয়ত দিলাম আর সেই সাথে এভাবে ঔষধ খাওয়ার কুফল এবং সরকারী ঔষধ অপচয় না করার কথা জানালাম। ‘সরকারী ঔষধ আপনি রাখার কে’ জানিয়ে দিয়ে তাঁরা নানান রকম হুমকি দিয়ে চলে গেলেন। একটু ভয়ই পেয়ে গেলাম… বিয়ের পাত্র তো। কিন্তু যখন একজন “গ্রামের সহজ সরল” রোগী তাঁর গরুর পেট খারাপ এর জন্য দশটা টেটরাসাইক্লিন চাইতে আসলো তখন ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। জেদ চেপে গেল… কিছুতেই এভাবে ঔষধ দেবনা। এতে পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হতে লাগলো… আমি যাতে এক মুহূর্ত বসে থাকতে না পারি তাঁর ব্যবস্থা করা হল… প্রায় প্রতি রাতেই ‘খারাপ রোগী’ দেখার জন্য মাগরা নদীর এপার ওপার করতে হল। ঘুম নেই, খাওয়া নেই… দুঃসহ অবস্থা।
কয়েকদিন পরেই আমার নতুন সহকর্মীরা আসলেন এবং আমিও আমার শুভকার্য সম্পাদনের জন্য কয়েকদিনের ছুটি পেলাম। পরবর্তীতে তাঁদের অবস্থা জানতে পেরেছিলাম, এরকম বা এরচেয়েও খারাপ পরিস্থিতিতে তাঁদের পড়তে হয়েছিল। ফলাফল পরবর্তী এক বছরের মধ্যে আবার তাঁদের ভরসা সেই ডাক্তার কুদ্দুস।
চাকুরী জীবনের শুরুতেই এরকম জায়গায় পোস্টিং হওয়ার কারনে সরকারী চাকরীর ওপর চরম বিতৃষ্ণা এসে গিয়েছিল। ৪৩০০ টাকার স্কেল এর চাকরী, বাকী সব মিলিয়ে ৭০০০ টাকার মত হয়… একজন নব্য বিবাহিতের জন্য, এমনকি বিবাহিত না হলেও, কি বলব…… ভাষা খুজে পাচ্ছিনা। জেনেই তো এসেছি… কিছু বলার আসলেই মুখ নাই।
পরবর্তী কয়েক বছর বেশ কয়েকটা জায়গায় কাজ করতে হয়েছিল। কমবেশি সব জায়গার অবস্থা এক রকম হলেও, যেখানে ডাক্তারদের থাকার মত পরিবেশ আছে সে সব জায়গায় পরিস্থিতি একটু ভাল। গ্রামে ডাক্তারদের থাকার জন্য অতি প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রী গন হুঙ্কার দিয়ে এসেছেন… থাকার জন্য কোনও চলনসই ব্যবস্থা তাঁরা এখনও করতে পারেননি। এখনও উপজেলার চাকরীতে বেতনের শতকরা ৫৫ ভাগ বাড়িভাড়া, যেটা শহরে ৬৫ ভাগ, গ্রামে কোয়ার্টার এ থাকতে হয় বলে সেটাও কেটে নেওয়া হয়… এমনকি না থাকলেও। অফিস ডিউটির অতিরিক্ত ইভিনিং ডিউটি, নাইট ডিউটি, শুক্রবার এর ডিউটি… কোনও কিছুতেই অতিরিক্ত কোন ভাতা নেই। বাংলাদেশ এর স্বাস্থ্যসেবা কাঠামো পৃথিবীতে অনুকরণীয়… সামান্য কিছু পরিবর্তন এর অভাবে এটা এখন কাঠামো সর্বস্ব। আর তাই ডাক্তার হিসেবে নিজের সন্মান রক্ষার্থে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্রাকটিস করতে হয়, অনেক অনৈতিক দাবীর কাছে মাথাও নিচু করতে হয়। অথবা বাধ্য হয়ে শহরমুখি হতে হয়। যার দায় শুধু ডাক্তারদেরই নয়।
So what is the solution?
Been there long time back. Its my village & Thana (Atpara). Seems like Health care infrastructure not yet developed. But you wrote really fantastic. I could have imagined the whole picture at a Glance.
অসাধারণ লিখেছেন, ডা: সাজ্জাদ। গ্রামে ডাক্তারদের এই কঠোর বাস্তবতার যা চিত্র আপনি এঁকেছেন, এ এক উঁচুমানের সাহিত্যর্কমে উন্নীত হলেও, আপনার সে অসহায় সময়ের মর্মবেদনার কথা ভেবে, কষ্ট লাগলো। প্রায় অনুরূপ অভিজ্ঞতা আমার হয়েছিল ১৯৮৮ সালে স্ত্রীর খালিয়াজুড়ি উপজেলায় পোস্টিং এর সময়। অনুমান করুন, আটপাড়ারই যদি এই অবস্থা, খালিয়াজুড়ির সে সময়কার অবস্থা কেমন হতে পারে। তবে মানতে হবে, ডাক্তার হয়ে, জনগনের সেবক হওয়া সত্ত্বেও আপনাকে যে অপমানকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছে, আমার সময়কালটা আপনার সময়ের চাইতে সম্ভবত আরও আগে বলে, আমজনতার মাঝে এই শ্রদ্ধাহীনতা লক্ষ্য করিনি।
আমাদের জাতীয় জীবনের অনেক কিছুই বিগত বছরগুলিতে অর্জিত হলেও, সে অর্জন ম্লান হয়ে যায় এই মূল্যবোধের অবক্ষয় দেখে।
খুব সুন্দর ও প্রানোজ্জ্বল বর্ননা । এরকম ভাবেই সকল ডাক্তার, রোগী,সিস্টার,নার্স আরো অনেকে যারা প্রত্যক্ষ ও পরক্ষ ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত তাদের এগিয়ে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা প্রবন্ধের আকারে লিখে জনসমক্ষে আনা উচিৎ।তাতে করে আজ না হলেও ধীরে ধীরে ভালো হবে। এতটা করুণ হয়তো ছিল না । যারা করেছে ,তাদেরকে চিহ্নিত করে সকলের সামনে রাখতে হবে ..যত বেশী হবে তত মঙ্গল ।
Thanks for the write-up. I was also posted in Atpara on 21 August, 2006 for my first posting. But my wife was also posted with me together with the help of so called DD office staffs in the name that both of is were posted in the same place! Though we were in the merit list but alas, no one helped us to get a better place! My experience was same. I found Dr. Kuddus bhai as RMO. I was allowed to stay in the quarter and it wad horrible. We passed a lot of times sleepless night after night fear of snakes through holes. No electricity, no good toilet, no place to cook or to take food from a restaurent. I was speech less. The cook of the hidpital felt prity on us and his wife used to cook for us and his daughter carry it for us twice a day, I used to pay weekly basis! My parents asked me to leave the job but . . . . People used to come there to take drug not for treatment. I stopped those things and I refused to give certificates. So, leaders were annoyed and I told them to transfer us feom there or I will continue these things. Till I sit in my OPD, I will do whatever I like. No way. But after some months we were able transfer to a new place. My horrible experience about village.
thanks for a wonderful elaboration. My experiences were even worse. So, as expected, soon I completed my FCPS, I left the service for good. I believe, this rural service for the physicians are nothing but a mockery for the service providers where none are being benefited.
Thanks,doctor for your real pen picture n experience about 1st horrible posting there.I also experienced it some how but i was not disturbed due to my locality.My several colleges physically assaulted including a female assistant surgeon,2010.The general people r mockers ,get pleasure to see the unmeasurable sufferings of the doctors.Real patients were lacked all places including this area.My life became fadeup coz newly married doctor ,no leave after joinong .sometimes i thought that i might leave the job,again remembered the oath of serving the poor peoples.But those poor peoples r mighty n village politics than any other organization.so after completing the formated tenure,i willinggly decided to do my post graduation in Forensic medicine,after completing the mphil,now im assistant professor of that department in a govt.medical college n providing better service to the people who died in any unnatural violence.I think this peole also the part of that mockers n need their better service.so i perform postmortem with great sincerity,so that no lackings of proper services.What can i do,i m doctor committed to serve the human being.I dont like to live my govt jobs though many offers with excellent salary from private medical colleges Invite me.”I PLEDGE MYSELF TO CONSECRETE MY LIFE TO THE SERVICE OF HUMANITY”.any
way i must not forget the those colleages who were inhumanly assaulted in
spite of presence at the job centre n providing essential services.