ইংল্যান্ড এর সাসেক্স এর অধিবাসী ৪২ বছর বয়েসী মার্টিন জোন্স ছিলেন একজন বডি বিল্ডার। ১৯৯৬ সালে একদিন তার পার্ট টাইম কর্মস্থলে গলিত এলুমিনিয়াম পড়ে দেহের ৩৭% পুড়ে যায়। বিশেষ করে দুই চোখই নষ্ট হয়ে যায়। বাম চোখ এত বেশি নষ্ট হয়যে সেটা তুলে আনা ছাড়া উপায় ছিল না। কিন্তু ডান চোখ কিছুটা ঠিক থাকলেও দৃষ্টি শক্তি নষ্ট হয়ে যায়। চার বছর পরে অন্ধ অবস্থায় মার্টিন বিয়ে করে গিল নামের এক মেয়েকে। বউকে কখনো চোখে দেখে নাই মার্টিন। ঘটনার ১০ বছর পরে ২০০৬ সালে স্ত্রী গিল মার্টিন কে নটিংহ্যাম এর এক চক্ষু বিশেষজ্ঞ কে দেখায়। ডাক্তার অনেক চিন্তা ভাবনা করে পরীক্ষানিরীক্ষা করে খুব ব্যায়বহুল এক ব্যবস্থার কথা বলেন গিল কে। এটা হল স্টেম সেল ট্রান্সপ্লান্ট। রাজি হল গিল। একজন দাতার স্টেম কোষ মার্টিনের চোখে ঢুকানো হয় নষ্ট অংশ পুনরুৎপত্তির জন্য।
কোন লাভ হল না। টাকা গচ্ছা গেল। এর চেয়ে ভাল কোন সমাধান কোন ডাক্তার দিতে পারছিল না। ২ বছর পরে ব্রাইটনের সাসেক্স চক্ষু হাসপাতালের অপথেলমিক সার্জন ও কন্সাল্টেন্ট জাপানি বংশোদ্ভূত ইংলিশ ডা. ক্রিস্টোফার লুই মার্টিনের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামতে লাগলেন। অনেক চিন্তা ভাবনার পরে ১৯৬০ সালে ইতালির এক চক্ষু সার্জন বেন্দেত্তো স্ট্রাম্পেলির এক অদ্ভুত থিউরিটিক্যাল সার্জারির পথ বেছে নিলেন ডা. লুই। একে বলা হয় tooth in eye সার্জারি বা অন্য কথায় osteo- Odonto keratoprosthesis (OOKP) I এই সার্জারিকে তিনি নিজের মত খানিকটা সাজিয়ে modified osteo odonto keratoprosthesis বা MOOKP নাম দিলেন। এই OOKP সার্জারি এর আগে পৃথিবীতে একবার করা হয়েছিল তবে ফলাফল ভাল ছিল না। তবু জেদি ডাক্তার লুই এটা করবে সংকল্প করলো। মার্টিনের স্ত্রী গিল উপায়ান্তর না দেখে আর ডাক্তারের কনফিডেন্স দেখে রাজি হল শেষ পর্যন্ত।
ডা. লুই অপারেশনের দিন ঠিক করলেন।
প্রথম দিন মার্টিনের মুখের ভিতরের মিউকাস পর্দা খানিকটা কাটলো। এরপর চোখের পাতার নিচের সব ইনফেক্টেড জিনিস সহ কর্নিয়া লেন্সের অর্ধেক সব তুলে নিলেন। এরপর চোখের এই খালি যায়গাটাতে মুখের মিউকাস পর্দা সিলাই করে দিলেন। এরপরে মার্টিনের একটা ক্যানাইন দাঁত তুলে নিলেন চারপাশের কিছু হাড় সহ সিলিন্ডার আকৃতির করে। দাঁত টার মাথা খানিকটা কেটে চিকন ডেন্টাল ড্রিল দিয়ে পুরা দাঁত টা ফুটো করে ফেললেন উপর থেকে নিচে। অই ফুটোর ভেতরে একটা খুবি ক্ষুদ্র সেলুলোজ এর লেন্স বসালেন এবং সিলিন্ডার আকৃতির দাঁত কে একটা প্লাস্টিকের সিলিন্ডারে ঢুকালেন। এরপর পুরা সিলিন্ডার টা মুখের ভেতরে কেটে বসিয়ে গালের সাথে সিলাই করে রাখলেন নতুন রক্তনালী গজানোর জন্য। এই অবস্থায় ৩ মাস রেখেদিলেন। ৪র্থ মাসে মুখ থেকে নতুন ভাস্কুলার দাঁত নিয়ে মুখের মিউকাস পর্দা লাগানো চোখের মাঝখানে ঢুকিয়ে দিলেন।
অদ্ভুত ভাবে মার্টিন সাথে সাথে দৃষ্টি ফিরে পেলেন। খুশিতে চিৎকার করে উঠলেন প্রথম বারের মত স্ত্রীকে দেখতে পেয়ে।
দাঁতের সাহায্যে দেখতে পাওয়ার ঘটনা এই প্রথম। এই জেদি ডাক্তার লুই পৃথিবীর প্রথম ডাক্তার যিনি এই কাজ সফলতার সাথে করতে পেরেছিলেন। আমেরিকাতে এরকম দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য boston keratoprosthesis নামক আরেক পদ্ধতি অনুসৃত হত।কিন্তু ডা. লুই সাহেবের এই সাফল্যের জন্য পরের বছর আমেরিকার একদল সার্জন মায়ামির শ্যারন থর্নটন নামক এক মহিলার একই রকম ভাবে দাঁতের সাহায্যে দৃষ্টি শক্তি ফিরিয়ে দেন। এই মহিলার দৃষ্টিশক্তি স্টিভেন জনসন সিন্ড্রোম নামক রোগে নষ্ট হয়েছিল। বলে রাখা ভাল যে চোখের স্নায়ু নষ্ট হয়ে গেলে কোনভাবেই এই পদ্ধতি কাজ করবে না। কেবল অপটিক স্নায়ু আর রেটিনার কিছু অংশ ছাড়া বাকি চোখ নষ্ট হলেও এই MOOKP পদ্ধতিতে দৃষ্টিশক্তি ফেরানো সম্ভব।
দাঁতের এই অসাধারণ প্রয়োগ সম্পর্কে আমাদের সকল চিকিৎসকদের জানা প্রয়োজন। আশাকরি একদিন আমাদের দেশের হাজার দৃষ্টিহীন মানুষ আমাদের ডাক্তারদের হাত ধরে এভাবেই এই অসাধারণ সুন্দর গ্রহটা আর প্রিয় মুখগুলো দেখার সুযোগ পাবে।
সুত্র-
the guardian, NY times, Wikipedia, BBC, youtube
লিখেছেনঃ
ডাঃ আসির মোসাদ্দেক সাকিব
ডেন্টাল সার্জন
Nice information. thanks to you from chistia digital dental lab, jatrabari, dhaka, An advanced dental lab in bangladesh