লেখকঃ Rubaiya Haque Ruba
ফাইনাল প্রফের রেজাল্টের পরে আমার সব বন্ধুরা যখন স্টার্টেড ওয়ার্কিং এজ এ ইন্টার্নি ডক্টর স্ট্যাটাস দিচ্ছে আমি তখন সাপ্লি খেয়ে ফেসবুক,হোয়াটস্যাপ এমনকি মোবাইলটাও অফ করে ঘরের দরজা বন্ধ করে কাদতেছি।কিন্তু বেশীক্ষন না,খুব তাড়াতাড়ি সাপ্লির ডেট দিয়ে দিলো।তাই চোখ মুছে বই খাতা নিয়ে বসে গেলাম।অন্য কোনো দিকে তাকাইনি।দিন রাত এক করে পড়ছিলাম।নিজের সাথে প্রতিজ্ঞা ছিলো পরীক্ষা শেষ হবার আগে অন্য কোনো দিকে তাকাবো না।রিটেন আর অসপি শেষ হয়ে গেলো ভালোই ভালোই।তারপর আসলো আসল পরীক্ষা ,ভাইবা।গাইনী ভাইবার লং কেসে একটা বড় ভূল করে ফেললাম।বাকি সব প্রশ্নের উত্তর নির্ভূল ভাবেই দিছিলাম।কিন্তু ওই একটা ভূলের কারনে ভয় লাগছিলো।আর ম্যাডাম যখন বললেন, ‘এত বড় ভূল করে পাশ করার আশা কর কিভাবে?’ তখন আমার মনটাই ভেঙে গেলো।কি করব বুঝতেছিলাম না।তাহলে কি এই একটা ভূলের জন্যে আমার এতদিনের সব পরিশ্রম ব্যার্থ হয়ে যাবে?আবার ছয় মাস পর পরীক্ষা দিতে হবে?চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছিলো।মাথা ফাকা ফাকা লাগছিলো।চারপাশের পৃথিবীটা অর্থহীন লাগছিলো।
হাসপাতাল থেকে বের হয়ে রিকশা নিলাম।মামা নদীর পার চলেন।আর কিছু বলতে পারলাম না।চোখের পানি থামাতে পারছি না।এদিকে বাসা থেকে সমানে কল আসতিছে।একবার আব্বু একবার আম্মু।দেখেও রিসিভ করছিনা।কি জবাব দেব?কেমন হয়ছে আমার পরীক্ষা?নদীর পার এসে একটা নৌকা নিয়ে উঠে পড়লাম।মাঝি চাচাকে বললাম নৌকা দিয়ে এক ঘন্টা ঘুড়বো।মাথার ভেতর কি কাজ করছিলো জানিনা।তবে প্রাণপাখিটা যে পালাই পালাই করছিলো তা বেশ বুঝতে পারছিলাম।অস্থিরতা কাটাতে চাচার সাথে গল্প শুরু করলাম।বিভিন্ন দার্শনিক আলাপ।মেঘলা দিন,টিপটিপ বৃষ্টি পড়ছিলো।নৌকা যখন মাঝ নদীতে অবাক হয়ে দেখলাম চাচা বৈঠা উঠিয়ে নিলেন।নৌকাটা একটা খেলনা নৌকার মত দুলে দুলে এগোতে লাগলো।আমি অবাক হয়ে চাচাকে প্রশ্ন করলাম ‘চাচা বৈঠা উঠাই নিলেন ক্যান?’ চাচা হেসে বললেন, ‘আম্মাজি,অহন আর বৈঠার কাম নাই,পালে বাতাস লাগছে,বাতাসই অহন নৌকারে লইয়া যাইবো।’কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।আরো অবাক হলাম যখন শুনলাম চাচা বাইশ বছর ধরে ব্রক্ষপুত্রে নৌকা চালান,অথচ সাতার জানেন না।
আমি বুঝতে পারলাম জীবনে মাঝে মাঝে বৈঠা উঠিয়ে নিতে হয় আর সঠিক বাতাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।আরো বুঝলাম যে সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকলে বাচা যায় না,নির্ভয়ে বাচার নামই বাচা।ওই বিকেলে নৌকা থেকে যে আমি নেমেছিলাম,নিঃসন্দেহে সেই আমি একজন পরিবর্তিত আমি ছিলাম,পরিনত আমি ছিলাম।তারপর আমি ব্রক্ষপুত্র ভ্যালি থেকে খুব ঝাল করে ফুচকা খেলাম।ঝালে চোখ দিয়ে পানি পরছিলো তবু ভালো লাগছিলো।বন্দুক দিয়ে বেলুন ফুটালাম,জর্দা দিয়ে পান খেলাম,নাগরদোলায় উঠে চিতকার করলাম,নদীর পার ধরে হেটে গেলাম অনেক্দুর।এপ্রন পরা আমাকে দেখে অনেকেই অবাক হয়ে তাকালো,আমি পাত্তা দিলাম না, আর অবশেষে একটা সুন্দর বিকেলের সন্ধ্যা হওয়া দেখলাম,বুঝলাম জীবন কত সুন্দর।তারপর সন্ধ্যায় যখন হোষ্টেলে ফিরলাম তখন মন অনেকটাই শান্ত।মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় মেয়ে হওয়াই যে বিশাল দায়িত্ত ঘারে নিয়ে আমার বড় হওয়া,তা আমার সম্পুর্ণ জীবনবোধ আর প্রাণশক্তিকে ধ্বংশ করতে পারে নি দেখে আল্লাহর দরবারে শতকোটি শুকরিয়া আদায় করলাম।
গল্পটা আমার একান্ত ব্যাক্তিগত ঘটনা।তবু শেয়ার না করে পারলাম না।গত কিছুদিন আগে আমার রেজাল্ট দিয়েছে।আল্লাহের অশেষ রহমতে আমি পাশ করেছি।কিন্তু আমি জানি পাশ না করতে পারলেও আমি কখনই কোনো ধংশাত্বক স্বিদ্ধান্ত নিতাম না।আমি আমার জীবনকে ভালোবাসি।এখানে হতাশ হবার মত অনেক কিছুই আছে,কিন্তু আশাবাদী হবার কারনও খুব কম নেই
নিজেকে ভালোবাসুন,নিজের ওপর বিশ্বাস রাখুন।মনে রাখুন,’সাফল্য সুখের চাবিকাঠি নয়,বরং সুখই সাফল্যের চাবিকাঠি।’