প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ৭ মে ২০২০, বৃহস্পতিবার
সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার দুবিলা (মাগুড়া বিন্দু) ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যার হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে ডা. মশিউর রহমানকে। কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে আবেদনের পর এই বদলি কার্যকর করা হয়।
গত ২৫ এপ্রিল, ডা. মশিউর রহমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর কোভিড-১৯ টিমে কাজ করার জন্য বদলির আবেদন করেন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেন, দেশের দুঃসময়ে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন সেন্টার এবং ডেডিকেটেড হাসপাতালসমূহে ডাক্তার স্বল্পতা দেখা দেওয়ায় তিনি সেখানে কাজ করতে ইচ্ছুক।
তাঁর ইচ্ছাকে স্বাগত জানিয়ে গত ২৭ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডা. মশিউর রহমানকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে বদলি করে।
কোভিড-১৯ টিমে কাজ করার ইচ্ছার ব্যাপারে ডা. মশিউর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্ল্যাটফর্মের প্রতিবেদককে জানান,
“করোনাভাইরাস আসার সেই শুরুর সময় থেকে আক্রান্ত রোগীদের খোঁজ রাখতাম। অনেকটা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই কাজটা করা। সংক্রামক রোগ তো, আশে পাশে কেউ থাকে না। অনেকের আত্মীয় স্বজনও থাকে না। আমার চিন্তা ছিল, যদি সুযোগ হয় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবা করবো। সিভিল সার্জন অফিসে ট্রেনিংও করি আমি।”
তিনি জানান তাঁর নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা বীর উত্তম হাবিবুর রহমানের কাছে স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘটনা শুনে সবসময়ই দেশের জন্য কাজ করতে অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
ডা. মশিউর রহমান বলেন, “আমার কোভিড-১৯ টিমে কাজ করার ইচ্ছের পেছনে আরেকটি কারণ রয়েছে। আমার নানা ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা, বীরউত্তম হাবিবুর রহমান। পিলখানা ৩ নং গেইটটা আমার নানার নামে। নানা বেঁচে থাকতে মুক্তিযুদ্ধের অনেক ঘটনা শুনেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বের কাহিনী, কিভাবে এই দেশ স্বাধীন হলো, এত অল্প সময়ে কিভাবে তাঁরা শত্রুদের পরাজিত করেছিলেন সেই ঘটনা গুলো শুনে; ছোটবেলা থেকে ইচ্ছে ছিল যদি কখনো সুযোগ পাই, একদিন আমিও যোদ্ধা হবো। আমার বোনদের সব সময় বলতাম, একদিন যুদ্ধ করে বীরশ্রেষ্ঠ হবো!
মনে হলো এখন দুর্যোগের সময়, অসহায় রোগীদের সেবা করার এটাই সুযোগ।”
বদলির ব্যাপারে তিনি জানান, “নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে কর্মরত আছি এখন। আমার আগের কর্মস্থল তাড়াশ উপজেলায় কোন কোভিড-১৯ পজিটিভ রোগী পাই নি, সেখানে আইসোলেশন ইউনিটটাও চালু হয়নি তাই।”
নতুন কর্মস্থলে ব্যস্ততা প্রসঙ্গে ডা. মশিউর জানান,
“আইসোলেশন ইউনিটে এক সপ্তাহে আমরা আটজন ডাক্তার চিকিৎসা দিচ্ছি। মর্নিং, ইভনিং, নাইট হিসাবে কাজ করার পর, ১৪ দিন নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে কোয়ারেইন্টাইনে থাকি। এর মাঝে আমাদের টেস্ট করা হয় (কোভিড১৯ সংক্রমিত হয়েছে কিনা দেখতে)। টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসলে পরিবারের সাথে ৭ দিন থাকার সুযোগ আছে, এরপর আবার চাকরিতে।
এখানের মোট ডাক্তার ৪০ জন। দুইটা উইং এ কাজ করছি এখন আমরা। আইসোলেশন ইউনিট এবং ট্রায়াজের মাধ্যমে সন্দেহভাজন রোগীদের চিহ্নিত করে চিকিৎসা সেবা দেওয়া। আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৭১। এছাড়া আউটডোরে প্রতিদিন প্রায় ৫০-৬০ জন চিকিৎসা নেন।”
কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে কাজ করার অভিজ্ঞতা নিয়ে কথাগুলো বলেন ডা. মশিউর রহমান।
চিকিৎসকদের প্রতি ক্রমাগত সামাজিক হয়রানি ও প্রতিবন্ধকতার বিপরীতে ডা. মশিউর রহমানের এই কর্মস্পৃহা ও সাহসী পদক্ষেপ সারা বাংলায় অভয় ছড়িয়ে দিক, এটাই প্রত্যাশা।
নিজস্ব প্রতিবেদক