একে একে আক্রান্ত হচ্ছে চিকিৎসা কর্মী- করোনা যুদ্ধ কোন পথে?

প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ১৭ এপ্রিল, ২০২০, শুক্রবার:

বাংলাদেশে করোনা যুদ্ধের শুরুতেই অর্ধশতাধিক সৈনিক (শুধু ডাক্তার) আক্রান্ত হওয়ায় সুরক্ষার প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে। যারা পজিটিভ রোগীর সেবা দিবেন তাদের এন ৯৫ মাস্ক ব্যবহার করা অপরিহার্য।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে সেটা আদৌ এন ৯৫ এর সমপর্যায়ের মাস্ক নয়। এ ধরণের মাস্ক এর সবদিক থেকে মুখমন্ডল কে সিল করে রাখবে যাতে করে তিনি মাস্ক এর পাশ দিয়ে নয়, মাস্ক এর ভেতর দিয়ে শ্বাস নিবেন এবং বাইরের বাতাস ছেঁকে তাঁর নাক মুখ দিয়ে ফুসফুসে প্রবেশ করবে। এটা ড্রপলেট বাহিত ইনফেকশন। ভাইরাস ঢুকবে নাক-মুখ-চোখ দিয়ে। যদি জিজ্ঞাসা করা হয় সুরক্ষা সামগ্রীর কোনটা সবচেয়ে বেশি অপরিহার্য, উত্তর হলো, এন ৯৫ গোছের মাস্ক। তবে এই অপরিহার্যতা তাদের জন্য, যারা কোভিড১৯ পজিটিভ রোগীকে কাছ থেকে সেবা দিবে। এটা ছাড়া স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হবেই। ব্রুনেই থেকে একজন প্রবাসী চিকিৎসকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তাঁর করোনা ইউনিটে পজিটিভ রোগীদের সেবা চলছে আজ ৩৭ দিন ধরে। আজ পর্যন্ত কোনো স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হননি। কারণ তাঁদের জন্য এন৯৫ মাস্ক সহ অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী আছে।

আজ দেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে লাইভ আলোচনায় নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন বললেন, “আমরা একটাও এন ৯৫ গোছের মাস্ক পাই নাই।” উত্তরে স্বাস্থ্য মহাপরিচালক বললেন, “আগেও দেয়া হয়েছে, আবারো দেয়া হবে।”

এই অবস্থায় চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী, সবাই দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকে তাকিয়ে।

একটি করোনা আইসোলেশন ইউনিটে একটি শিফটে কাজ করেন কমপক্ষে ১জন ডাক্তার, ১জন নার্স, ১জন ওয়ার্ডবয় বা অন্য স্বাস্থ্যকর্মী। অন্তত ১জন ল্যাব টেকনোলজিস্ট নমুনা নিয়ে কাজ করেন।

একজন নিশ্চয়ই ২৪ ঘন্টা দিনের পর দিন কাজ করেন না। প্রতিটি পদে একাধিক ব্যক্তি কাজ করেন, সংখ্যা কমপক্ষে দ্বিগুণ।

এরা অন্য রোগী যদি নাও দেখে থাকে, এরা সবাই কোয়ার্টারে থাকেন এমন নয়।

যারা বাড়িতে যান, তাঁদের কাছে কেউ এলে সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে।

হাসপাতালের কোভিড১৯ রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়। একদম কমপক্ষে কাশি থাকে। কারো কারো দরকার হয় নেবুলাইজার। ফলে সেবাদাতা যারা আইসোলেশন কক্ষে অবস্থান করেন, রোগীর কাছে আসেন, তাঁরা উচ্চমাত্রার ঝুঁকিতে থাকেন।

এক্ষেত্রে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সার্জারি ইউনিট ৫ এর কথা বলা যায়।

মিটফোর্ডের গাইনি বিভাগের কথা বলা যায়।

মাত্র একজন করোনা পজিটিভ রোগীর চিকিৎসা করতে গিয়ে কতজন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, এমএলএসএস সংক্রমিত হয়েছেন তা মিডিয়ায় এসেছে।

বরগুনার কথা –
আজ ১৬ এপ্রিল বরগুনার সিভিল সার্জন স্বীকার করেছেন যে এখানে রেসপিরেটর N95 বা একই মানের কোনো মাস্ক সরবরাহ করা হয়নি।

এদিকে বরগুনা সদর হাসপাতালে প্রথম কোভিড রোগী ভর্তি হয় ১১এপ্রিল। আজকের তালিকায় দেখা যায় ৩জন কোভিড রোগী ভর্তি আছেন আইসোলেশন ইউনিটে।

তাহলে এতজন স্বাস্থ্যসেবায় জড়িত ব্যক্তি যদি মানসম্মত সুরক্ষা উপকরণের অপ্রাপ্যতায় আক্রান্ত হন, হয়তো ইতিমধ্যে হয়েছেন, তাহলে সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা হুমকির মুখে পড়বে।

সংক্রমণের সাধারণত ১৪ দিনের মধ্যে লক্ষণ প্রকাশ পায়। তাই আগামী ২ সপ্তাহে জেলায় রোগী বাড়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি।

খোঁজ নিলে জেলায় জেলায় এই অবস্থা দেখা যাবে।

উপজেলায় সুরক্ষা নেই, দেশের রাজধানী ঢাকার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলো ধুঁকছে।

এভাবে স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রগুলো সুরক্ষা উপকরণের অভাবে আক্রান্ত হলে সারা দেশের মানুষের চিকিৎসা কিভাবে অব্যাহত রাখা যাবে এটাই দেখার বিষয়।

Publisher

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

আশিয়ান মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের রাউজানা আক্তার মনিষা আর নেই

Fri Apr 17 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ শুক্রবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২০ আশিয়ান মেডিকেল কলেজের ৫ম বর্ষের শিক্ষার্থী রাউজানা আক্তার মনিষা আজ রাত ১ টার সময় ঢাকার হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অন্ত্রের ক্যান্সার (Carcinoma in transverse colon) এর অপারেশন পরবর্তী জটিলতার কারণে মৃত্যুবরণ করেন। একটি স্বপ্নের মৃত্যু হল, একজন ভবিষ্যত […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo