সারা বিশ্বজুড়ে Antibiotic resistance একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।এণ্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জীবাণুর উদ্ভব শুধুমাত্র ব্যক্তির জন্যে প্রানঘাতি হওয়ার পাশাপাশি সমাজের সবার জন্যেই ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (world health organization) এণ্টিবায়োটিকের যথাযথ নিশ্চিতকরণের উদ্দেশ্যে বিশ্বব্যাপি জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং এণ্টিবায়োটিক সংক্রান্ত নীতি ও নির্দেশিকা প্রণয়নসহ বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এ প্রেক্ষাপটে Antibiotic Resistance এর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক উদ্যোগের পাশাপাশি জাতীয় পর্যায়েও ব্যবস্থা গ্রহন করা অত্যাবশক হয়ে পড়েছে। বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রন শাখা সিডিসি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় কৌশলপত্র ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
এন্টিবায়োটিক-যা দশকের পর দশক মানুষের অন্যতম জীবন রক্ষাকারী হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে আসছে;সেই এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর কারণে আমাদের এক অভিনব পরিস্থিতির মুখে পড়তে হচ্ছে।প্রশ্ন উঠছে অদূর ভবিষ্যতে আমরা পরবর্তী প্রজন্মকে কী করে রক্ষা করব,কী করে লড়াই করব এই অসম যুদ্ধে।
জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বের প্রতিনিধিরা শপথ নিয়েছেন তারা তাদের জনগণকে এন্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স এর ব্যাপারে সচেতন করবেন।বাংলাদেশেও এ ব্যাপারে এগিয়ে এসেছে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে এন্টিবায়োটিক Antibiotic Resistance প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া গুরুতর প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক ও গোষ্ঠীগত উদ্যোগ অপ্রতুল। এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রন শাখা সিডিসি এর উদ্যোগে, প্ল্যাটফর্ম এর সহযোগিতায় “এন্টিবায়োটিক সচেতনতা আন্দোলন” শুরু হয়েছে।
Antibiotic Resistance নিয়ন্ত্রনের (containment) মাধ্যমে সেটাকে সহনীয় পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (world health organization) গত ১৩ থেকে ১৯ নভেম্বর ২০১৭ খ্রিঃ পর্যন্ত “বিশ্ব এণ্টিবায়োটিক সপ্তাহ ২০১৭” পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উক্ত সপ্তাহব্যাপি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন মেডিকেল/ডেন্টাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের নিকট Antibiotic Resistance এর ভয়াবহতা এবং এ বিষয়ে করনীয় সম্পর্কে প্রচারণামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হয়।
উক্ত কর্মকাণ্ডে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন হিসেবে সার্বিক সহযোগিতায় ছিল প্ল্যাটফর্ম এর সদস্যগণ
(মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থী এবং বিএমডিসি কর্তৃক রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট চিকিৎসকবৃন্দ ) ।
যেখানে সকলে তাদের নিজ নিজ ক্যম্পাসের সকল শিক্ষক, ইন্টার্ন ডাক্তার, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এন্টিবায়োটিক সচেতনতা নিয়ে লেখা শপথ কার্ডে স্বাক্ষর গ্রহণ করে এবং দেওয়ালে দেওয়ালে পোস্টার ছড়িয়ে দিয়ে ক্যাম্পেইন এর উদ্বোধন করেন। এরপর তারা নিজ নিজ মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলজের হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে ব্যনার টানিয়ে প্ল্যাটফর্ম, সন্ধানী এবং মেডিসিন ক্লাবের ভলান্টিয়ারদের সাথে মিলিতভাবে এই ক্যাম্পেইন নিয়ে প্রচারনা করেন।
বাংলাদেশের প্রায় ৪৮টি মেডিকেল এবং ডেন্টাল কলেজ এই কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করছে।
তারই ধারাবাহিকতা হিসেবে সারা দেশের ন্যায় চট্টগ্রামে অবস্থিত , বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে পালিত হয়েছিল বিশ্ব এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ।
নিজে সচেতন হয়ে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্ট এর হাত থেকে বাচানোর শপথে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং সর্বস্তরের চিকিৎসকদের অংশগ্রহণে বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজে হয়ে গেল এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহ পালন, সেমিনার ও র্যালি।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ডাঃ এস এম তারেক এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফার্মাকোলজি বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ জান্নাতুল ফেরদৌস । প্রাণবন্ত ও তথ্যবহুল অডিওভিজুয়াল উপস্থানায় মাইক্রোবিয়ালের বিরুদ্ধে মানুষের প্রধান অস্ত্রের অতীত, বর্তমান ও শংকাময় ভবিষ্যৎ নিয়ে সাবলিল বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. জান্নাতুল।
আলোচনায় অংশ নিয়ে শিক্ষার্থী ও চিকিৎসকদের করনীয় নিয়ে দিক নির্দেশনা দেন মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ এ এ এম রাইহান উদ্দিন , সার্জারি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ পান্না লাল সাহা , পেডিয়াট্রিক্স বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডাঃ প্রণব মল্লিক ।
ব্যাক্টেরিয়ার রেজিস্টেন্ট হওয়ার কৌশল নিয়ে তথ্যবহুল বক্তব্য দেন মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ এম এ মাজেদ ।
সেমিনার শেষে সবার অংশগ্রহণে আয়োজিত র্যালি প্রদক্ষিণ করে পুরো কলেজ ক্যাম্পাস।
এরপর এন্টিবায়োটিক সচেতনতা সপ্তাহের অংশ হিসেবে অন্তঃ ও বহিঃ বিভাগের রোগিদের মাঝে সচেতনতা মূলক প্রচারণা চালানো হয় ।
তথ্য ও ছবিঃ Sheikh Sabbir Ahammadd, BGCTMC।