এনেস্থেশিয়া আবিষ্কারের আগের কথা।
অপারেশন করা হত রোগীকে কোনো রকম এনেস্থেশিয়া দেয়া ছাড়াই (কি ভয়ানক রে ভাই)।
সেই সময়ে পৃথিবীর একজন বিখ্যাত সার্জন ছিলেন রবার্ট লিস্টন। এনেস্থেসিয়া না ব্যবহার করায় যত দ্রুত অপারেশন করা যেতো রোগীর কষ্ট তত কম হতো এবং রবার্ট লিস্টন ছিলেন এই বিষয়ে পারদর্শী।
তিনি ২.৫ মিনিটে একটি পা ব্যবচ্ছেদ ও মাত্র ৪ মিনিটে ২০ কেজি scrotal tumor রিমুভ করেন। তার অপারেসন প্রসিডিউর এত দ্রুত ছিল যে, ছোট খাট অপারেশন মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে শেষ হতো।
একবার লিস্টনের কাছে রোগী আসে গলায় টিউমার নিয়ে। লিস্টনের সহযোগী এটাকে Abscess (ফোঁড়া) বললে লিস্টন বলেন এটা aneurysm of carotid artery (এক ধরণের টিউমার) এবং তর্কের একপর্যায়ে লিস্টন পকেট থেকে সার্জিকাল ছুরি বের করে সেই রোগীর ক্যারোটিড আর্টারী কেটে দেখান যে এটা aneurysm of carotid artery। রোগী তখন মারা যায়। রোগী মারা গেলেও ক্যারোটিড আর্টারিটা বেঁচে আছে এখনো ফরমালিনের কল্যাণে! (ক্যারোটিড আর্টারি কাইট্টালাইছে!! কি ডাক্তার রে ভাউ)। সেই ক্যারোটিড আর্টারী এখনো আছে Liston University College Hospital pathology museum, specimen No. 1256.
লিস্টন একবার মাত্র ২মিনিট ১৫ সেকেন্ডে রোগীর পা কেটে ফেলেন। অপারেশন এত দ্রুত ছিলো যে অপারেশনের সময় তার এসিস্টেন্টের একটা আঙ্গুলও কেটে পড়ে যায়। এমনকি সাথে উপস্থিত একজন দর্শকের গাউন কেটে যায়। সেই দর্শক ভেবেছিল তার কোন মেজর আর্গান কেটে গেছে তখন সে ভয়ে Vasovagal attack হয়ে মারা যায়। রোগী এবং এসিস্ট্যান্ট দুজনই পরে গ্যাংগ্রিন এবং ইনফেকশন হয়ে মারা যায়। ইতিহাসে এটাই একমাত্র অপারেশন যেখানে মৃত্যুর হার ৩০০%।
১৮৪৭ সালে ১৬ অক্টোবর আমেরিকান ডেন্টিস্ট ডা. টি জে মর্টন প্রথম ইথার কে এনেস্থেশিয়া হিসেবে ব্যবহার করে অপারেশন করেন। সেটা সাকসেসফুল হলে সেই বছর ১৯ ডিসেম্বর, আরও দুজন ডেন্টিস্ট ডা. ফ্রান্সিস বুট এবং ডা. জেমস রবিনসন টুথ এক্সট্রাকশনে সফলভাবে ইথার ব্যবহার করেন ২য় বারের মত। এই খবর প্রকাশিত হলে ডা. লিস্টন পা কেটে ফেলার জন্য প্রথমবারের মত ইথার ব্যবহার করে সফল হলে মন্তব্য করেন – ‘আমেরিকানদের এই কৌশল দেখি হিপনোসিস এর চেয়ে ভাল কাজ করে। (এনেস্থেশিয়া আবিষ্কারের পূর্বে হিপনোসিস বা রোগীকে সম্মোহন করাই ছিল একমাত্র উপায়। তবে বেশিরভাগ সময়েই যেটা সম্ভব হত না।)
তথ্যসূত্রঃ
https://www.woodlibrarymuseum.org/history-of-anesthesia/
https://en.wikipedia.org/wiki/William_T._G._Morton
https://en.wikipedia.org/wiki/Robert_Liston
তথ্য সংগ্রহে এবং অনুবাদে ঃ মাহমুদুর রহমান মামুন, পাইওনিয়ার ডেন্টাল কলেজ।