প্ল্যাটফর্মে আ্যন্টিবায়োটিক রেজিস্টেন্স নিয়ে পোস্ট হচ্ছে৷ কিন্তু দেখছি সেই পোস্টগুলো যারা দিচ্ছেন বা কমেন্টস করছেন তাদের অনেকেই বলছেন “মানুষের শরীরে আ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হচ্ছে” ৷ প্রকৃত পক্ষে এই ধারণাটা ঠিক নয়৷ এই রকম একটা ভুল ধারণা নিয়ে আমরা ডাক্তাররা অবশ্যই চলতে পারি না৷ এজন্য আমি ব্যাপারটা ব্যাখা করার চেষ্টা করছি (আমার যতটুকু জ্ঞান আছে তা থেকে)৷
লম্বা আলোচনা শুরুর আগেই একটা এগজাম্পল দেই ছোট বেলায় সবুজ মরটিন কয়েল জ্বাললেই মশা ভাগতো, পরে আর কাজ করতো না, এরপর 2005 এর দিকে চিকন কিছু কিলার কয়েল আসলো জ্বালালেই মশাগুলো একদম টপাটপ মরে পড়ে থাকতো, এখন কি কয়েল-এরোসলে কাজ হয় নাকি হাত ই ভরসা? এখন আমরা কি বলবো? বাতাস বা আমরা রেজিস্ট্যান্স হয়ে গেছি? নাকি মশা? (ভেজালের যুক্তি আনবেন না প্লিজ: p)
প্রথমেই আমাদেরকে জানতে হবে এন্টিবায়োটিক এর প্রথম ও প্রধান criteria কি৷ এটি হলো “selective toxicity” ৷ অর্থাত শুধু ব্যাক্টেরিয়ার জন্য বিষাক্ত/ক্ষতিকর৷ আরেকটু গভীরে ব্যাখা করা যাক৷ এন্টিবায়োটিক শুধুমাত্র ব্যাক্টেরিয়ার উপর কাজ করবে৷ উদাহরণ দিয়ে বুঝি৷ টার্গেট/site of action এ এন্টিবায়োটিক কাজ করবে৷ penicillin, cephalosporin, vancomycin, carbapenem (imipenem, meropenem etc) এরা cell wall এর উপর, আমাদের শরীরে কি সেল ওয়াল আছে? না নাই তাহলে এগুলো আমাদের শরীরে কাজ করে না৷ tetracyclin, aminoglycosides কাজ করে 30s এবং macrolides (azithromycin), clindamycin, linezolid, streptogramin এরা 50s ইউনিট এর উপর৷ ব্যাক্টেরিয়ার রাইবোসোম 70s যা ভাংলে 30s ও 50s পাওয়া যায় ৷ মানুুষ, গরু, ফাংগাস এসব ইউক্যারিয়টদের রাইবোসোম 80s যা ভাংলে পাওয়া যায় 40s ও 60s ৷ সুতরাং এগুলোও মানুষের উপর কাজ করার সুযোগ নাই৷ অন্য দিকে omeprazole কাজ করবে স্টোমাক এর প্রোটন পাম্প এর উপর সে কিন্তু ব্রেন এ D2 রিসেপ্টর এর উপর কাজ করবে না৷ আবার ranitidine কাজ করবে স্টমাকের H2 রিসেপ্টর এর উপর এবং এসিডিটি কমাবে কিন্তু H1 রিসেপ্টর এর উপর কাজ করে এলার্জি কমাবে না৷ আবার এরা কিন্তু ব্যাক্টেরিয়ার উপরেও কাজ করবে না৷ কারন ব্যাক্টেরিয়াতেও এসব রিসেপ্টর বা সাইট অফ একশন নাই৷ আসলে ড্রাগ গুলো আমাদের শরীরে স্পেসিফিক সব কাজে ইউজ হয়৷
2য়ত সেন্সিটিভিটি টেস্ট এর জন্য আমরা সোয়াব বা স্পেসিমেন নিয়ে কালচার মিডিয়ায় দেই৷ এতে ব্যাক্টেরিয়া গ্রো করে, মানব কোষ কালচার মিডিয়া তে এভাবে গ্রো করে না (করলে ভালোই হতো)৷ এই ব্যাক্টেরিয়ার কলোনীর মধ্যে এন্টিবায়োটিক ডিস্ক রেখে আমরা দেখি কলোনীর কতটা ক্ষতি করছে৷ ক্ষতি করলে সেন্সিটিভ, হালকা করলে ইন্টারমিডিয়েট, না করলে রেজিস্টান্ট ব্যাক্টেরিয়া বলে ডিক্লেয়ার করি৷ মানব কোষ রেজিস্টান্ট কিনা এটা বোঝার সুযোগই নেই এই পরীক্ষায় প্রথমেই বলে নিলাম৷
এবার আসি রেজিস্টেন্স কিভাবে হয়৷ রেজিস্ট্যান্স এর মেকানিজম:
1 modification of target site (usually mutation),
2. Inactivation by enzyme (beta lactamase by gram negatives, staph aureus)
3. Increased efflux/pumping out (যা ঢুকবে বার করে দেবে , মাল্টি ড্রাগ)
4. Increased synthesis of target (যত ড্রাগ দেয়া হবে তার থেকে অনেক বেশী টার্গেট যেমন রাইবোসোম থাকবে, কয়টাকে destroy/inactivate করবো?)
5 decresed influx (ঢুকতেই দেব না)৷
6 অভিযোজন৷
আমরা সব মানুষ এক না৷ যেমন কেউ lactose intollerant এখন পৃথিবী তে যদি আর কোন খাবার না থাকে শুধুই গরুর দুধ খেয়ে বাচতে হয় তবে 1/2 জেনারেশন পর দেখা যাবে শুধুই ল্যাক্টোজ টলারেন্টরাই আছে, যারা ইন্টলারেন্ট ছিল তারাও ল্যাক্টোজ টলারেন্টদের সাথে বংশবিস্তার করে পরবর্তী জেনারেশনে ল্যাক্টোজ টলারেন্ট হয়ে গেছে৷ (point to be noted বৈশিষ্ট্যটা জেনেটিক সুতরাং কোনভাবে এই জিনটা ল্যাক্টোজ ইন্টলারেন্টদের দিতে পারলেই হতো)
কিন্তু সবচেয়ে ইম্পরটেন্ট হলো টার্গেট সাইট মোডিফিকেশন৷ যেমন, peniclillin, cephalosporin action করবে “penicillin binding protein” এ যুক্ত করে৷ বয়লোজীর মজা হলো যেটাই বাইন্ড করতে হোক তার একটা বাইন্ডিং সাইট বা রিসেপ্টর লাগে৷ যেমন আপনি 2 পিন প্লাগে 3পিন চার্জার যতই চাপুন ঢুকবে না৷ এখন ব্যাক্টেরিয়া যদি সাইটটা চ্ন্জ করে ফেলে? ধরেন penicllin bind করতো এমন একটা যায়গায় যেখানকার এমিনো এসিড সিকোয়েন্স ভ্যালিন-এলানিন-ভ্যালিন, এখন চেন্জ হয়ে সেখানে প্রোলিন-এলানিন-ভ্যালিন ৷ penicilllin কি বাইন্ড করতে পারবে? না৷ ঠিক তেমনি অন্যান্য গুলোর ক্ষেত্রও রাইবোসোমে বাইন্ডিং সাইট চেন্জ, এনজাইম এ বাইন্ডিং সাইট চেন্জ হলেই আর ড্রাগ কাজ করবে না৷
এখন রেজিস্টেন্স কেন হয়৷ বাংলা সিনেমা তো আমরা সবাই দেখেছি৷ ভিলেন নায়ক ছোট থাকতেই মোটামুটি তার সামনে পুরো পরিবারকে শেষ করে দেয়৷ কিন্তু ভুল করে মাইরের ডোজে৷ নায়ক কে শেষ করে না৷ এরপর নায়ক ভিলেনের এক্সপোজার পেয়ে নিজেকে কঠিন পুরুষ/অগ্নিপুরুষ/পুলিশ/কিংবা মেশিন ম্যান বানিয়ে ভিলেনকে শেষ করে দেয়৷ ঠিক তেমনি এন্টিবায়োটিক যদি inadequate ডোজে পরে কিছু ব্যাক্টেরিয়া থাকবে যারা এক্সপোজার পেয়েও বেচে যাবে৷ এরা নিজেকে রেজিস্টেন্স করে গড়ে তুলার জন্য মিউটেট করবে৷ মানুষে মিউটেশন হওয়ার কোন সুযোগই নাই কারন ৷ কারন আমাদের না আছে সেল ওয়াল না আছে 70s রাইবোসোম৷
এখন আসি কিভাবে রেজিস্টেন্স ছড়ায়৷ 2/1 টাই জানি আমরা আজ৷ প্রথমেই ওই বেচে গিয়ে মিউটেট করা e. Coli কনজুগেশন করলো নন রেজিস্টেন্স কারো সাথে৷ ফলাফল রেজিস্টেন্স ছড়ালো৷ ধরেন একটা by born, beta lactamase producing staph aureus বা সেই মিউটেটেড e coli বার্ধক্য জনিত কারনে মরে গেল, তার DNA ভাসমান একটা salmonella এর মধ্যে DNA টা ঢুকে গেল এবং জিনোমে চলে গেল, ফলাফল রেজিস্টেন্স ছড়ালো৷ এর নাম transformation ৷ এছাড়াও t2 ফাজ সাহেব বাহক হিসেবেও dna পাচার করেন ৷ এটা ট্রান্সডাকশন৷
এভাবেই inadequate dose /dosage এ এন্টিবায়োটিক দিলে মিউটেশন তৈরী হওয়ার সম্ভাবনা হয়৷ যা পরে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ ইহাও সত্য যে সকল এন্টিবায়োটিক এই একসময় ধীরে ধীরে রেজিস্টেন্স হবেই৷ তাই নতুন এন্টিবায়োটিক যেমন দরকার তেমনি দরকার যা আছে পারত পক্ষে তার পুরোনো গুলো ইউজ করা, প্রপার ডোজে করা, প্রপার সময় ধরে করা৷
কিছু অবান্তর উদাহরন ও কিছু সূক্ষ গোজামিলীয় কারচুপি করার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী৷ আমি ফার্মেসী/ফার্মাকোলজী বিশেষজ্ঞ নই৷ ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থী৷ অনুরোধ অসংলগ্ন বিতর্ক যেমন ঔষধের দোকানদার কোয়াক নিয়ে কথা বলার পোস্ট এটা না৷ এটা একটা একাডেমিক পোস্ট৷
লিখেছেন:
Julfikar saif
MD Residency phase A, Oncology, BSMMU (2018)