ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম একসূত্রে গাঁথা। এ সকল বিষয়ে ভারী ও ভারিক্কি বইয়ের সংখ্যা কম নয়। কোন বইয়েরই গুরুত্ব কম নয়, কনটেন্ট ও কম নয়। কিন্তু সহজ কথায় কঠিন বিষয়গুলো উপস্থাপন করে এমন বইয়ের সংখ্যা অনেক কম। বিশেষ করে তরুণ চিকিৎসকরা সহজে বুঝবে এমন বই কম তো বটেই। কঠিন জিনিস সহজ করে বুঝতে অভ্যস্ততা সকলেরই থাকে। সম্প্রীতি ডায়াবেটিস, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম নিয়ে এমন একটা বই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের বিখ্যাত Jaypee Brothers Medical Publishers হতে প্রকাশিত বইটির নাম “FAQs In Diabetes Endocrinology And Metabolism”. বইটি লিখেছেন সকলের অত্যন্ত প্রিয় ও শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক ডা. এম সাইফুদ্দিন। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হসপিটালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। বইটির ফরওয়ার্ড লিখেছেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইনোলজি সোসাইটির সম্মানিত সভাপতি প্রফেসর মো. ফারুক পাঠান ।
বইটিতে এন্ডোক্রাইন সকল রোগ নিয়ে আলোচনা করা হলেও ডায়বেটিস এর উপর বিশেষ গুরুত্ত্বারোপ করা হয়েছে।বর্তমান বিশ্বে ডায়বেটিস একটি মহামারী রোগ হিসেবে স্বীকৃত। বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ডায়বেটিসের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে (৬.৯%) এবং ২০১৭ সালে ৬.৯ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। ২০৪৫ সালে এই সংখ্যা বেড়ে ১৩.৭ মিলিয়ন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে দুঃখের বিষয়, ডায়বেটিসে আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকই জানেন না যে তাদের ডায়বেটিস হয়েছে এবং শুধুমাত্র ৭.৮% রোগী তাদের চিকিৎসার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছেন। বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ৭০ লক্ষ বলে বলছে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফাউন্ডেশন। কিন্তু যারা আক্রান্ত তাদের ৫৭ শতাংশই জানেন না যে তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। ডায়াবেটিস এমন একটি শারীরিক অবস্থা যা সারা জীবনের জন্যে বয়ে বেড়াতে হয় এবং সারা বিশ্বে এর কারণে প্রতি বছর ১০ লাখেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সারা বিশ্বেই এই সমস্যা বেড়ে চলেছে। আমাদের দেশে প্রতি ৩৪০০ জন রোগীর জন্য ১ জন করে চিকিৎসক রয়েছেন এবং প্রতি ৪ জন চিকিৎসকের মধ্যে ১ জন চিকিৎসক ডায়বেটিস চিকিৎসায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ফলে এই বিপুল সংখ্যক রোগীদের এই রোগ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও সুচিকিৎসায় চিকিৎসকরা প্রয়োজনীয় সময় দিতে পারেন না। এ কারণে ডায়বেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রোগী এবং চিকিৎসকদের মাঝে একটি বড় ব্যবধানের সৃষ্টি হয়েছে।এই ব্যবধান কমাতে এবং ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রোগীদের সহযোগিতা করার উদ্দেশ্যেই মূলত ডা. এম সাইফুদ্দিন বইটি লিখেছেন বলে প্ল্যাটফর্ম-কে জানান। ডায়াবেটিস এর পাশাপাশি অন্যান্য সকল রোগ সহজ ভাষায় ও আপডেটেড গাইডলাইন অনুসারে লেখা হয়েছে- যোগ করেন তিনি।
বইটির বিশেষত্ব:
- বইটিতে বিভিন্ন স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর প্রতিষ্ঠানের লিখিত, বস্তুগত কাঠামোগত ক্লিনিকাল / ব্যবহারিক পরীক্ষা (ওএসপিই) এবং অন্যান্য এন্ডোক্রাইনোলজির প্রশ্নগুলির সমাধান করা আছে
- বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন এন্ডোক্রাইন সংস্থা বিশেষত আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA), আমেরিকান থাইরয়েড অ্যাসোসিয়েশন (ATA), ডায়াবেটিস অধ্যয়নের জন্য ইউরোপীয় সমিতি (EASD) এবং বিশ্বের অন্যান্য সংস্থাগুলির সর্বশেষ নির্দেশিকা অনুসারে সকল তথ্য আপগ্রেড করা হয়েছে
- এন্ডোক্রাইনোলজির বিষয়গুলি খুব সহজ, সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে
আলাপচারিতায় শ্রদ্ধেয় ডা. এম সাইফুদ্দিন জানান ভারত, বাংলাদেশসহ ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশে বইটি বহুলভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তিনি জানান, তরুণ চিকিৎসকরা যাতে সহজ ভাষায় অধ্যয়ন করে নিজেরাই এন্ডোক্রাইন রোগসমূহের চিকিৎসা প্রদান করতে পারেন সে বিষয়টি মাথায় রেখে তিনি বইটি লিখেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশের তরুণ চিকিৎসকদের মাঝে ইতিমধ্যে তিনি ২০০০ কপি বই বিনামূল্যে প্রদান করেছেন বলে জানা যায়।