আবার আক্রান্ত চিকিৎসক। এবার একটি সেকেন্ডারি সেন্টারে।
স্থানঃ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল।
তারিখঃ ১৬/০৭/২০১৫
বরাবরের মত যা হয়। স্থানীয় মানুষ চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগে ডাক্তারকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। ভাংচুর চালানো হয়েছে হাসপাতালে। পুলিশের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়েছে হামলাকারীদের। ঘটনাস্থল থেকে ছাত্রলীগের দুই নেতাকে আটক করা হলেও তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। বৃহস্পতিবার রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে তুলকালাম চলে হাসপাতালে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জুগিরহুদা গ্রামের কলেজছাত্র ফাইম মোর্শেদ রাত ৯টায় দুর্ঘটনার শিকার হন। তাকে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসা দিতে অবহেলার অভিযোগে ডা. নাজমুল হোসেনকে মারধর ও হাসপাতালের আসবাবপত্র ও জানালা-দরজা ভাংচুর করে রোগীর লোকজন। পরে পুলিশের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কেএম মামুন উজ্জামানের নির্দেশে হাসপাতালের গেট বন্ধ করে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা জানিফ ও সাজুকে আটক করে পুলিশ। অবশ্য চাপের মুখে গভীর রাতে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। রাতেই হামলার শিকার ডা. নাজমুল হোসেন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। বিএমএ জেলা সভাপতি ডা. মার্টিন হীরক চৌধুরী বলেন, ঘটনার প্রতিবাদে আজ ২১ জুলাই জরুরি সভা ডাকা হয়েছে।
এর আগে ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি একই হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে কর্তব্যরত চিকিত্সক ডা. মাসুদ রানাকে (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুই যুবক। এ সময় তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও আহত হয়েছেন চিকিত্সা নিতে আসা এক রোগীর স্বজন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সন্ধ্যায় আকবর ও কামরুল নামে দুই চিহ্নিত যুবক হাসপাতালের জরুুরি বিভাগে ঢুকে ডা. শামিম কবিরকে খুঁজতে থাকে। এ সময় তাকে না পেয়ে গালাগালি করতে থাকে এবং জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সক ডা. মাসুদ রানার সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়ে ওই দুই যুবক। এক পর্যায়ে হামলাকারী আকবর তার কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ডা. মাসুদ রানার ওপর হামলা করে।
হামলার শিকার ডা. মাসুদ রানা জানান, এ সময় তিনি প্রাণে রক্ষা পেলেও আহত হয়েছেন রোগীর এক স্বজন।
অন্যদিকে ২০১২ সালের ২৬ ডিসেম্বর রাত ৮টার দিকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার জীবননগর বাসস্ট্যান্ড পাড়ার মধু মালাকে (৬০) গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তিনি হৃদরোগে ভুগছিলেন। হাসপাতালে আনার ২৮ মিনিটের মাথায় তিনি মারা যান।
মধুর স্বজনদের অভিযোগ, মধুমালাকে কে হাসপাতালে আনার পর বেশ কয়েকবার দায়িত্বরত চিকিৎসক মশিউর রহমানকে ডেকেও পাওয়া যায়নি। তিনি ডিউটি ফেলে নিজের কক্ষে বসে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। এছাড়াও কোনো ওয়ার্ডেই অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল না। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় এবং অক্সিজেনের অভাবে হাসপাতালে আনার ২৮ মিনিটের মাথায় মধু মারা যান বলে তার পরিবারের লোকজনের দাবি।
রোগীর মৃত্যুর পর তার স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে একটি কক্ষের দরজা ভেঙে ওই চিকিৎসককে মারধর করেন। এ সময় তারা টেবিল-চেয়ার এবং জানালার কাচ ভাংচুর করেন। এতে বাধা দিতে গেলে ওই বিভাগের ব্রাদার শফিউদ্দিন, এমএলএসএস লিংকন, মনিকো ফার্মাসিউটিক্যালসের রিপ্রেজেনটেটিভসহ ছয়জন আহত হন।
এ বিষয়ে ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘রোগীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় আমি দ্রুত তাকে ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দিই। আধাঘণ্টার মধ্যে সব হইচই শুরু করেন। এ সময় আমার রুমের দরজা ভেঙে আমাকে মারপিট করে এবং টেবিল- চেয়ার ও ওয়ার্ডের জানালার কাচ ভাংচুর করেন তারা।’