“এরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশীপ ইন পাবলিক হেলথ: একজন বাংলাদেশী চিকিৎসকের অভিজ্ঞতা” ?

#EuroPubHealthPlus – যা কিছু জানার এবং জানানোর :
ডা: মুহাম্মাদ ইরফানুল আলম স্যার উনার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোক এরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশীপ নিয়ে উনার ক্যারিয়ার গঠনের ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন। কেউ যদি এই স্কলারশীপের জন্য এপ্লাই করতে চান বা পাবলিক হেলথে ক্যারিয়ার করতে চান তাহলে স্যারের নির্দেশনা ফলো করতে পারেন।
নিচের কলাম গুলোয় স্যারের নিজস্ব অভিজ্ঞতা গুছিয়ে স্যার নিজেই লিখে দিয়েছেন। যা পাবলিক হেলথে ক্যারিয়ার গড়তে ইচ্ছুকদের জন্য একটি অবশ্যপাঠ্য।
……………

পাবলিক হেলথে আমার পথচলা শুরু ২০১১ সালে। ইন্টার্নিশিপ শেষ করার পর সার্জারিতে ক্যারিয়ার করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু হঠাৎ সান্তোস বাংলাদেশের জব ইন্টারভিউতে গিয়ে তাদের বেস ইএইচএস এন্ড মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর হিসেবে ১ বছরের জন্য সাঙ্গু ড্রিলিং ক্যাম্পেইনে যোগ দেয়া থেকে শুরু।
ছাত্রজীবন থেকেই সন্ধানীতে জড়িত থাকার সুবাদে হেলথ ম্যানেজমেন্ট, হেলথ প্রমোশান সহ হেলথ এডমিনিস্ট্রেশানে একটা আলাদা অভিজ্ঞতা ছিল যেটা এই ট্র্যাকে খুব কাজে লাগে। সাঙ্গু ড্রিলিং ক্যাম্পেইনে ১ বছর শেষ হবার পর সাঙ্গু গ্যাস প্রসেসিং প্ল্যান্টে যোগ দেই ইএইচএস এন্ড মেডিকেল অফিসার হিসেবে। ২০১৪ এর এপ্রিলে সাঙ্গু গ্যাস প্রসেসিং প্ল্যান্ট বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেডকে যখন হ্যান্ডওভার করি তখন উডগ্রুপের কোর টিমে আমি একা ই ইএইচএস* প্রফেশনাল।
*[ইএইচএস= এনভায়রনমেন্ট, হেলথ এন্ড সেফটি
Environment, Health & Safety or Occupational Health & Safety is an extensive multidisciplinary field, invariably touching on issues related to scientific areas such as medicine – including physiology and toxicology – ergonomics, physics and chemistry, as well as technology, economics, law and other areas specific to various industries and activities.]
এরপর বেশ কিছুদিন বেকার ছিলাম। ফিক্সড কোন এসাইনমেন্টে এনগেজড ছিলাম না। বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল এক্সরে’র পার্ট টাইম ইএইচএস এডভাইজর ছিলাম মাঝে শেভরনের একটা প্রজেক্টে। আর ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম এদিক-সেদিক।
এর পরে গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন বাংলাদেশের চট্টগ্রাম প্ল্যান্টের অকুপেশনাল হেলথ ম্যানেজারের দায়িত্ব নেই। আমার ছোট ক্যারিয়ারের সবচে হতাশাজনক অংশের একটা ছিল এই সময়টা। অস্পষ্ট ক্যারিয়ার ল্যাডার আর ম্যানেজমেন্টের সাথে টানাপোড়নে জিএসকে ছাড়ি ২০১৬তে। তখনই মোটামুটি ডিটারমাইন্ড ছিলাম যে আর অকুপেশনাল হেলথ এন্ড সেফটিতে না। অনেক এডভেঞ্চার হয়ে গেছে। আর আমি বিশ্বাস করি যে কোন লক্ষ্যে পৌছুতে চাইলে আগে বর্তমান অবস্থান থেকে বের হতে হবে। এক হাজার মাইল লম্বা রাস্তাও কিন্তু একটা ছোট্ট পদক্ষেপ দিয়েই শুরু হয় আর সেটা আপনার বাড়ির দরজা থেকে বাইরের দিকে একটা ছোট্ট পদক্ষেপ।
ক্লিনিক্যাল ট্র্যাকে ফিরার জন্য সাবজেক্ট চুজ করেছিলাম রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং কে।
এফসিপিএস পার্ট ১ দিচ্ছিলাম প্রতি ৬ মাসে ১ বার করে। ঢাকায় এসে বারডেমে অনারারি ট্রেনিং করতে থাকি আর পড়তে থাকি। ৩ বার দেয়ার পর হতাশা আরো জেঁকে বসে। গত জুলাইয়ে অনেক বেশি এফোর্ট দিয়েছিলাম। তারপরেও ব্যর্থ হওয়ায় একটা ব্যাকআপ প্ল্যান করছিলাম। সিওমেকের একজন জুনিয়র পরামর্শ দেয় এই এরাসমাস মুন্ডাস স্কলারশিপের জন্য। দেখি এখানে তো আমাদের পাবলিক হেলথ প্রফেশনালদের জন্য স্বর্গরাজ্য।
দেখা গেল, আমার পছন্দের সাবজেক্টে স্পেশালাইজেশান করা যাবে তাও অনেক দিনের স্বপ্ন যেই প্যারিস শহরে থাকার, সেখানেই। তাই আমি পাথওয়ে বেছে নেই শেফিল্ড-প্যারিস কেই। এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার, আপনি প্রথম ছবির এই সাতটা স্পেশালাইজেশানের মধ্যে যেটায় আপনার রিলেভেন্ট ওয়র্ক এক্সপেরিয়েন্স আছে সেটাতেই এপ্লাই করবেন। প্রশ্ন হচ্ছে ঠিক কত বছরের ওয়র্ক এক্সপেরিয়েন্স লাগবে। ন্যূনতম ০২ বছর লেখা আছে। এর চাইতে বেশি হলে ভাল। আমার যেমন ছিল ০৬ বছর।
কোর্স সফলভাবে শেষ করলে যা পাওয়া যাবে তা সার্টিফিকেট হিসেবে খুবই লুক্রেটিভ-
An EPH+ joint certificate of achievement
Two national Master degrees after Year 1 and Year 2 relevant examination boards have officially approved the results
An EPH+ joint diploma supplement
এই কোর্সের এলিজিবিলিটি রিকোয়ারমেন্ট ছবিতে (ছবি নং-২) দেয়া আছে।
০২ জন শিক্ষক বা সহকর্মীর রেফারেন্স লাগবে। রেফারেন্সদের ইমেইল এড্রেস দিলে তাদের কাছে লিঙ্ক যাবে যেখানে তাদের রেফারেন্স লেটার আপলোড করতে হবে।
নিজ এলাকার রেসিডেন্সী প্রমাণ করাটা খুব ইম্পরট্যান্ট। ওয়ার্ড কমিশনারের দেয়া প্রুফ অব রেসিডেন্স ব্যবহার করলেই চলে কিন্তু সেটার ভাষা ইংরেজি হতে হবে।
এরাসমাসের সাইটে হেলথ এন্ড ওয়েলফেয়ার ফিল্টারে যে কোর্সগুলো আছে তার সবগুলোর জন্যই আমরা এলিজিবল। প্রতিটা কোর্সের রিকোয়ারমেন্টস আলাদা। একজন ক্যান্ডিডেট সর্বোচ্চ তিনটি কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আমি ইউরোপাবহেলথ ছাড়াও ইউরোপিয়ান জয়েন্ট মাস্টার্স ইন হেলথ ইকোনমিকস ম্যানেজমেন্ট এ এপ্লাই করেছিলাম।
অধিকাংশ কোর্সেই ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার মাপকাঠি আইইএলটিএস এ দেয়া। মিনিমাম হচ্ছে সব ব্যান্ডে ৬.৫।
আমি গত অক্টোবরে এই টেস্ট দেই। স্কোর ছিল এভারেজ ৮.০ ব্যান্ড।
এবার আসি ইউরোপাস সিভির ব্যপারে। আমার ৬ বছরের অকুপেশনাল হেলথের অভিজ্ঞতা এখানে ইউরোপিয়ান ফর্মেটে উল্লেখ করি। ইউরোপাস ওয়েবসাইটে গেলেই বুঝতে পারবেন।
আপনার সবগুলো কাজের এবং অকাজের অভিজ্ঞতা এখানে গুছিয়ে লিখবেন। পাবলিক হেলথ রিলেটেড কাজের অভিজ্ঞতা অবশ্যই উল্লেখ করবেন। কো-কারিকুলার এক্টিভিটি যদি থাকে; আমার ক্ষেত্রে সন্ধানী চমেক ইউনিট, সন্ধানী কেন্দ্রীয় পরিষদ, সন্ধানী জাতীয় চক্ষুদান সমিতি, আইএফএমএসএ (ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশান অব মেডিকেল স্টুডেন্টস এসোসিয়েশান), এবং বাংলাদেশে তাদের একমাত্র এনএমও (ন্যাশনাল মেম্বার অর্গানাইজেশন) বাংলাদেশ মেডিকেল স্টুডেন্টস সোসাইটি তে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা এখানে খুব ই ভালভাবে কাজে দেয়।
এরপর আসি মোটিভেশান লেটারের প্রসঙ্গে। কেন আপনি এই সাবজেক্টে বাংলাদেশ বা উপমহাদেশের সবচে যোগ্য ব্যক্তি সেটা গুছিয়ে লিখতে হবে। প্রতিটা কোর্সে এই লেটারের সর্বোচ্চ শব্দসংখ্যা উল্লেখ করা থাকে। এর ভেতরেই আপনাকে গুছিয়ে বলতে হবে এই মাস্টার্স সম্পন্ন করে আপনি আপনার দেশে বা কমিউনিটিতে কি ইমপ্যাক্ট রাখতে সক্ষম হবেন। মোটিভেশান লেটার ড্রাফট করা হলে ইংরেজিতে দক্ষ এমন কমপক্ষে ২-৩ জনকে দিয়ে রিভিউ করিয়ে নেবেন। আমার মোটিভেশান লেটার আমার ইউরোপ প্রবাসী একজন এঞ্জিনিয়ার বন্ধু আর সিওমেকের একজন জুনিয়রকে দিয়ে রিভিউ করিয়েছিলাম। সে এরাসমাস স্কলারশিপ নিয়ে ভ্যাক্সিনোলজিতে পড়ালেখা করছে।
এইসবকিছু গুছিয়ে তাদের ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে ডকুমেন্টসহ। ব্যস! আপনার কাজ শেষ।
এরপর বসে বসে অপেক্ষা করবেন। সিলেক্টেড হলে আপনাকে সিলেকশান কমিটি মেইলে জানাবে। এই বছর ১১ জানুয়ারি এপ্লিকেশানের ডেটলাইন ছিল। এরপর সিলেকশান প্রসেস কম্পলিট হয়ে মেইল পেতে ন্যূনতম ৬ সপ্তাহ সময় লাগে।
তো আমি এপ্লাই করে আমার এফসিপিএস পার্ট ১ এর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে থাকি। জানুয়ারিতে মহান আল্লাহতায়ালার রহমতে রেডিওলজি এন্ড ইমেজিং এ পার্ট ১ পাশ করি। এরপর ফেব্রুয়ারিতে ইউরোপাবহেলথ প্লাস প্রোগ্রামে ইউরোপিয়ান এক্সেলেন্স স্কলারশিপের অফার লেটার পাই।
আপনি যদি আপনার লক্ষ্যে অটুট থাকেন তবে যে কোন কিছুই সম্ভব। ক্লিনিক্যাল ট্র্যাকে বা পাবলিক হেলথে- আপনার পরিশ্রম, একাগ্রতা আর সৌভাগ্য একসাথে হলেই সাফল্য ধরা দেবে। তার আগে নয় কিন্তু। শুভকামনা জানানোর জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমার জন্য দোয়া করবেন যেন এই পথচলা মসৃণ হয়।
আশা করি সবার প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি।

ডা: মুহাম্মাদ ইরফানুল আলম
চমেক ৪৬তম(২০০৩-০৪ সেশান)
Erasmus Mundus excellence scholarship awardee 2018-19 & Prospective European Master of Public Health student at School of Health & Related Research, University of Sheffield and EHESP French School of Public Health, Paris.

অনুলেখক:
লাইবা ইসাবেলা
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ
সেশনঃ ২০১৪-১৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

দেশে প্রথমবারের মত ভিন্ন রক্তের গ্রুপ সত্ত্বেও সফল কিডনি প্রতিস্থাপনঃ সাফল্যে অবাক বিশ্ব

Sat Jul 21 , 2018
কুড়িগ্রামের তেইশ বছর বয়সী ইমরান ফিরোজের দুটি কিডনিই বিকল (অকেজো)। তাঁর রক্তের গ্রুপ ‘ও’। চিকিৎসকের পরামর্শ, ইমরানকে বাঁচাতে অবিলম্বে প্রয়োজন কিডনি প্রতিস্থাপনের। ছেলেকে বাঁচাতে নিজের কিডনি দিতে চান ইমরানের মা। কিন্তু বিধি বাম! দু’জনেরই রক্তের গ্রুপ আলাদা। কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য কিডনি দাতার সঙ্গে রোগীর রক্তের গ্রুপ ও টিস্যু টাইপিংয়ের যথেষ্ট […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo