এ বয়সে এসে মানুষগুলোকে সাহায্য করার কেউ নেই!

২২ মে, ২০২০, শুক্রবার

চারপাশে এত অশান্তি, মহামারী। সবকিছু অস্থীতিশীল। এর মাঝে একটা গল্প বলি। গল্প বা হোক সত্যি।

বেশ কিছুদিন আগে ফেসবুক স্ক্রলিং করছিলাম, Faridpur Live গ্রুপে একটা পোস্ট দেখে চোখ আটকে যায়। একটা বয়স্ক মুরুব্বি একটা জীর্ণ ঘরের সামনে দাড়িয়ে, উপরের চালাতে অনেক বড় ফুটো। বেড়া ভাঙ্গা, কনকনে শীতের সময় শীত ঘরে আসে, ঘরে বৃষ্টি পড়ে। তখন রাত ১ টা বাজে। আরো কিছু তথ্যের জন্য পোস্টদাতাকে নক দিলাম। নাম্বার নিয়ে কল করে জানালাম, “আগামীকাল বিকালে আসবো, আপনি একটু সময় দিয়েন।”

সজিব মোল্লা ভাই, রনি দাদা খুব হেল্প করলেন। আমি আর জাফর। কানাইপুর ইউনিয়ন থেকে আরেকটা ইউনিয়ন কৃষ্ণনগর ইউনিয়ন অনেকসময় পরে পৌছালাম, সূর্য অস্ত যাচ্ছে। কথা হলো তাদের সাথে। জীবনের এতটা বছর পর দুটো বয়স্ক মানুষ এভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। ছেলে-মেয়ে আছে, কিন্তুু তারা দেখে না, খোঁজও নেয় না। এটা বুঝি নিয়ম, যাই হোক।

বয়স্ক মুরুব্বিকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি চাই আপনার, শেষ জীবনে এসে?” তিনি বহুকষ্টে বুকে চেপে বললেন, “এ শেষ জীবনে এসে কি আর লাগবে, এটা ঘর হলি ভালা হয়।” আমি তাকে আশ্বাস দিলাম, ৭ দিন সময় দিন। ৭ দিন পর নতুন ঘরের মুখ দেখবেন ইনশাআল্লাহ্। ছবি তুললাম তাদের সাথে, ফেসবুকে স্টাটাস দিলাম কি কি প্রয়োজন ঘর তুলতে কত খরচ পুরোটা।

আল্লাহর কি অশেষ রহমত, ৭ দিন পর কাজ শুরু করতে পেরেছি। কয়েকজন মহৎপ্রাণ মানুষ এগিয়ে আসলেন, ঘর তৈরি হচ্ছে। সম্ভ্যাব্য খরচ ধরা হয়েছিলো ৩৪ হাজার টাকা। কিন্তু সেটা বৃদ্ধি পেয়ে দাড়াল ৪২ হাজারে। এক ভাইকে জানালাম তিনি ২ হাজার দিলেন আরো দরকার ৬ হাজার। খুঁটির টাকা বাকি ছিলো। যেদিন নতুন ঘরে তাদের আবার নতুনভাবে দেখতে যাই সেদিন আমার প্রিয় স্বপ্না উকিল বাকি টাকাটা দিয়েছিলো।

দুটো বয়স্ক মানুষের সে কি উৎফুল্লটা, শেষ বয়সে এসে একটা নতুন ঘর তাও তাদের মনের মত করে। দিনশেষে তারা কেমন আছেন, এখন জানতে ইচ্ছে করে? হ্যাঁ, তারা ভালোই আছেন। আমার স্টাটাস দেখে অনেকেই এগিয়ে এসেছিলেন চাল, ডাল, তেল সহ আরো অনেককিছু দিয়ে। প্রয়োজনে সবসময়।

গল্প বা হোক সত্যি দিনশেষে কিছু চাপা বিষয় থাকে অনেকেরই অজানা। আমি হয়ত পড়াশোনায় খারাপ, মানুষ হিসেবে খারাপ, বন্ধু হিসেবে খারাপ বা আরো অনেককিছু। সাথে লোকদেখানো কাজ বা শো অফ যাকে বলা হয় তাও হয়ত করি। কিন্তুু একটা বিষয় আমি আমার এটুকু জীবনে যত বিস্তর ভালোবাসা পেয়েছি, কিছু মানুষের কাছে আমি তাতে ঋনী। গ্রামের সেই অসুস্থ মানুষটাও আমাকে খোঁজ করে কিন্তুু আমি জানিও না, হয়ত জানতেও পারবো না, তাদের অন্তরের ভালোবাসা আমার প্রতি। যেমন আমি কখনো মরে গেলে তারা জানতেও পারবে না যে, আমি আর নেই। তবুও এই দু তিনজন মানুষের মাঝেই আমার সত্ত্বা বেঁচে থাকুক।

আহমেদ সৌরভ

Platform

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Time limit is exhausted. Please reload the CAPTCHA.

Next Post

"মেডিকেল পরিবার" এর উদ্যোগে গ্রামীণ মানুষদের ইদসামগ্রী বিতরণ

Fri May 22 , 2020
প্ল্যাটফর্ম নিউজ, ২২ মে ২০২০, শুক্রবার গতকাল ২১ মে “মেডিকেল পরিবার” এর পক্ষে ৪০ জন পরিবারের মধ্যে ঈদসামগ্রী বিতরণ করেছেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাঈমুর রশীদ। তার নিজ গ্রাম কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার কুমরী গ্রামে এই ত্রাণ বিতরণ করেন। নাঈমুর রশীদ জানান, তিনি সহ তাদের সদস্যরা সবাই মিলে করোনা কালীন সময়ে […]

Platform of Medical & Dental Society

Platform is a non-profit voluntary group of Bangladeshi doctors, medical and dental students, working to preserve doctors right and help them about career and other sectors by bringing out the positives, prospects & opportunities regarding health sector. It is a voluntary effort to build a positive Bangladesh by improving our health sector and motivating the doctors through positive thinking and doing. Platform started its journey on September 26, 2013.

Organization portfolio:
Click here for details
Platform Logo