২ নভেম্বর ২০১৯:
যেসকল ঔষধ চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ব্যতীত কিনতে পারবার কথা, তাদেরকেই বলা হয় ওভার দ্য কাউন্টার ড্রাগ (Over the counter drug)।
OTC ড্রাগ বা যেকোন ঔষধ আমরা কিনি কোথা থেকে?
বাংলাদেশে খুচরা ঔষধ বিক্রয়ের দোকান, মডেল মেডিসিন শপ এবং মডেল ফার্মেসী এ ৩ ধরণের জায়গা হতে ঔষধ ক্রয় করা যায়।
ঔষধ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে ১১৭৩৫৯ টি খুচরা ঔষধ বিক্রয়ের দোকান, ১৫৪ টি মডেল মেডিসিন শপ এবং ১৯৪ টি মডেল ফার্মেসী রেজিস্টার্ড হিসেবে দেখানো আছে। মডেল মেডিসিন শপ এবং মডেল ফার্মেসী এ দুটি বাদ দিলে বাস্তবে খুচরা ঔষধ বিক্রয়ের দোকান সংখ্যা অনেক বেশি হবার কথা।
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর কতৃর্ক প্রকাশিত ফার্মাসি ব্যাবস্থাপনা নীতি অনুযায়ী ঔষধ বিক্রয়ের জন্য মডেল মেডিসিন শপে অবশ্যই যে কোন গ্রেডের একজন ফার্মাসিস্ট থাকতে হতে এবং মডেল ফার্মেসীতে অবশ্যই একজন এ গ্রেডের ফার্মাসিস্ট থাকতে হতে। এই ফার্মাসিস্ট এর অনুপস্থিতিতে কোন প্রকার ঔষধ বিক্রয় করা যাবে না। বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল হতে প্রাপ্ত তথ্যমতে এ গ্রেডের ফার্মাসিস্ট (যারা ফার্মাসিতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন) ১৫৬০৪ জন, বি গ্রেডের ফার্মাসিস্ট (যারা IHT এবং অন্যান্য নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান হতে ফার্মাসিতে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেছেন) ৪৬২০ জন।
সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট কি?
ফার্মাসি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ অনুসারে, “be qualified to be registered as an apprentice in pharmacy if he has been taken as a student or apprentice in pharmacy by, and produces a certificate to that effect from, a pharmacist registered under the ordinance and approved for the purpose, by notification in the official gazette, by the council.” – ই হলেন একজন সি গ্রেড ফার্মাসিস্ট। বিভিন্ন ডকুমেন্টস ঘেটে যা বুঝতে পেরেছি বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিকাল সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ড্রাগিস্ট এন্ড কেমিস্ট সমিতির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ফার্মেসী ফাউন্ডেশন কোর্সে যারা পড়াশুনা করে এবং পরীক্ষা দিয়ে সার্টিফিকেট পায় তারাই সি গ্রেডের ফার্মাসিস্ট। এ সার্টিফিকেট পেতে কতদিন পড়তে হবে বা কে পড়াবে এ বিষয়ক কোনো নীতিমালা নেই। যতদূর জানলাম, ৩ মাস মেয়াদি কোর্স হয়। প্রতি শুক্রবার করে ক্লাস হয় অর্থাৎ কেবলমাত্র ১২ টি ক্লাস করে তারা পরীক্ষায় বসে এবং অনেকেই পাস করে যায়। ফার্মাসি অর্ডিন্যান্স ১৯৭৬ এ যদিও বলা আছে বাংলাদেশ ফার্মাসি কাউন্সিল গেজেট করে তাদের নাম ঘোষণা করবে, কিন্তু তাদের ওয়েবসাইটে কোন গেজেট বা সি গ্রেডের ফার্মাসিস্টদের তালিকা পাওয়া যায় নি।
সুতরাং,
১. যেকোনো খুচরা বিক্রয়ের দোকান, মডেল শপ বা মডেল ফার্মাসিতে অবশ্যই একজন ফার্মাসিস্ট থাকতে হবে
২. ফার্মাসিস্ট এর অনুপস্থিতিতে কোনো ঔষধ বিক্রয় করা যাবে না (প্রেসক্রিপশন বিহীন OTC Drug তো দূরের কথা)
৩. বাংলাদেশে রেজিস্টার্ড খুচরা বিক্রয়ের দোকান, মডেল শপ বা মডেল ফার্মাসি প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার। সে হিসেবে ফার্মাসিস্ট (এ /বি /সি গ্রেড) লাগার কথা এক লক্ষ বিশ হাজার।
৪. এ এবং বি গ্রেডের ফার্মাসিস্ট প্রায় ২০০০০ মাত্র। সি গ্রেডের ফার্মাসিস্ট এর কোনো তালিকা নেই, তাদের তথাকথিত কোর্স, পরীক্ষা বা যাবতীয় বিষয়ে কোনো নীতিমালা নেই।
বাংলাদেশে ওষুধ বিক্রয়ের প্রতিষ্ঠান ও এর মান অনেক প্রশ্নবিদ্ধ। নামকাওয়াস্তে বা তথাকথিত ফার্মাসিস্ট বা ফার্মাসিস্ট বিহীন বেশিরভাগ ওষুধ দোকান। এবার OTC Drug বা হালাল তালিকার ৩৯ টি ওষুধের দিকে তাকান। নিজের বিবেক কে প্রশ্ন করুন একজন চিকিৎসক হিসেবে আপনার দায় আছে কিনা ?
প্রিয় চিকিৎসক, ওটিসি ড্রাগের তালিকায় ২৩ নম্বর ওষুদের দিকে তাকান। এটি একটি ট্রপিকাল এন্টিবায়োটিক। এবার ২য় ছবির দিকে তাকান। যে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর OTC Drug এর তালিকায় এন্টিবায়োটিক রাখে, তারাই আবার চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ব্যাতিরেকে এন্টিবায়োটিক বিক্রির বিজ্ঞপ্তি দেয়।
প্রিয় সহকর্মী,
আপনি ভাবতে পারেন এ আর এমন কি? ওরা তো হরহামেশা সব ওষুধই বিক্রি করে? এসব বলে কি হবে? এ দেশে এর কমে আর কি চাই?
কিন্তু তাই বলে আপনি আপনার প্রতিবাদটা বন্ধ করবেন না অনুগ্রহ করে।
কোথায় অভিযোগ করবেন?
ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর এর ইমেইল [email protected] এ আপনার মন্তব্য বা অভিযোগ লিখুন। জানান ৩৯ টি ঔষধ এর কোনটি বাংলাদেশের কোন প্রেক্ষিতে এবং কেন OTC Drug হওয়া উচিত নয়।
প্ল্যাটফর্ম এর পক্ষ হতে পল্লী চিকিৎসক বই নিয়ে ইতিমধ্যে অফিসিয়াল অভিযোগ করা হয়েছে। বিভিন্ন এপস সহ নানাবিধ বিষয়ে আরো অভিযোগ করা হবে সামনে। তবে অভিযোগ করলেই শুধু হবে না। এসব বিষয়ের আইন কানুন সংগ্রহ, আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ করেই কাজ করা হচ্ছে।
সকলের যৌক্তিক মন্তব্য, কন্সট্রাক্টিভ ক্রিটিসিজম, পরামর্শ ও সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে।
স্বত্ব:প্ল্যাটফর্ম